আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরাজয়

আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।

হাসপাতাল , পুলিশ , থানা সব জায়গায় খোঁজ নিয়েছে । তবু দাদার খোঁজ পাচ্ছেনা দিপান্বিতা । তার সাথে সাথে রায়হানও হন্যে হয়ে খুঁজেছে শুভংকরকে । কিন্তু উভয়েই তাদের খোঁজে বিফল ।

দিপান্বিতা সাথে করে রায়হানকে নিয়েছে সম্ভাব্য যে কোন বিপদে নিজেকে সামলাবার জন্য । অপরজনেও বিষয়টা শুরু থেকেই জানে তবু বরাবরের মতো নিরুচ্চারিত থেকে গেছে । ঠিক যেই সময়টায় একে অপরের সাথে পরিচিত হয়েছিলো তখন রায়হান তার জীবনের ভয়াবহতম সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিলো । পাস্ট টেন্সে বলাটা হয়তোবা ভুল হবে তবে বাস্তব সত্য হলো দিপান্বিতার সংস্পর্শে এসে বর্তমানে সে অনেকটা সহজ হয়ে এসেছে । আপাদমস্তক রাজনীতি সচেতন দিপান্বিতার কাছ থেকে যেদিন ' এলিয়েনেশন তত্ত্ব ' শিখেছে সেদিন থেকে জীবনের জটিলতাগুলোর সাথে কিভাবে ডিল করতে হবে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছে ।

ধীরে ধীরে সে নিজে রাজনীতি শিক্ষার গলি - ঘুপচিতে ক্রমশ প্রবেশ করে জীবনের কর্দমাক্ততার সাথে থিতু হয়ে বর্তমানে থোড়াই কেয়ার করতে শিখেছে অনেক কিছুকে । তারা কেউই পরস্পরের মাঝে কমিটমেন্টের সম্পর্ক নিয়ে খুব একটা ভাবিত নয়। সেই বাস্তবতাও তাদের কারো জীবনেই নেই । মুসলমান কোন ছেলের সাথে প্রণয় , পরিণয় এসব মেনে নেওয়ার মতো শক্তপোক্ত দিপান্বিতার মা নন । দিপান্বিতা নিজেও এসব নিয়ে আদপেই তেমন করে কিছু ভাবেনা ।

আর রায়হান ? লম্বা দীর্ঘশ্বাস গোপন করতে চেষ্টা করলো । পারলো কিনা সেটা বুঝবার আগেই দিপান্বিতার কন্ঠস্বর , " আর কোথায় কোথায় খোঁজ় নেওয়া যায় বলোতো ? " রায়হান বাস্তবে ফিরে আসে । স্বভাবসুলভ ধীরকন্ঠে বলে " পরে বলছি । আগে আমাকে মনে করে একটু বলো তোমার দাদার শেষ কর্মকান্ড কোথায় ছিলো ? যতদূর জানি ইদানিং সে নিজেকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে নিচ্ছিলো । এই সময়ে তো তাকে টিকটিকিদের টার্গেট করবার কথা নয় ।

তার কাছে কেউ আসতো বিশেষ ? " " হ্যা , প্রবীরদা দিন পনেরো আগে এক চিঠি নিয়ে এসেছিলো । কি লেখা ছিলো কিংবা চিঠির বিষয়বস্তু কি সেটা জিজ্ঞেস করা হয়নি । কয়েকদিন চাকরীর ধকল গিয়েছে প্রচন্ডমাত্রায় । দাদাকে ঘর থেকে বিশেষ বেরোতেও দেখতাম না । কিন্তু কি হয়ে গেলো বলোতো " বলতে বলতে গলা ধরে এলো দিপান্বিতার ।

নিজেকে ধাতস্থ করতে প্রচন্ড কষ্ট হয় রায়হানের । ভাবলো দিপান্বিতার মাথায় হাত রাখবে কিনা । পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিলো । বিপদসঙ্কুল সময়ের স্পর্শ সবসময় মানুষকে আশার আলো দেখাতে পারে এমন নয় । কখনো কখনো বিপদ থেকে উঠে দাঁড়াবার জন্য অবশিষ্ট সামান্যতম শক্তিটুকুও কেড়ে নিতে পারে ।

এমনটা ভেবে চুপচাপ অপেক্ষা করতে লাগলো কখন দিপান্বিতা নিজেকে সামলে নেয় । শক্ত মেয়ে আছে সামলে নেবে দ্রুতই । হঠাৎ দমকা বাতাসে একটা কাগজ এসে রায়হানের মুখে আছড়ে পড়ে । ধরে দেখতেই কাগজের অক্ষরগুলো পড়তে শুরু করে । আগামী পরশু এই এলাকায় কোন এক মন্ত্রী আসবেন ভাষণ দিতে তার লিফলেট ।

মন্ত্রীর নাম দেখে পরম ঘেন্নায় কাগজটিকে ছুঁড়ে ফেলে দিলো । রায়হান রাজনীতি সচেতন হয়েছে খুব বেশী দিন এমন নয় । কিন্তু ভেবে পায়না স্বেচ্ছায় , বিনা দ্বিধায় এক পাল শুয়োরের বাচ্চার মোসাহেবী করতে্‌ , শিশ্ন চাটতে এতো মানুষ কেন আগ্রহী হয় ? রাস্তার পানের দোকানদার থেকে শুরু করে স্যুট - টাই পরা আরবান সোসাইটির ভদ্রলোকেরা কেউই তো বাদ থাকেনা । সুযোগ পেলেই কোন না কোন বরাহশাবকের জন্য কাপড় - চোপড় খুলে আদিমতম মানুষের অবয়ব ধারণ করে প্রত্যেকে । হঠাৎ দিপান্বিতার সেল ফোন বেজে উঠে ।

দ্রুত হ্যান্ডব্যাগ থেকে ফোনটা ধরেই অপর পাশের কথাবার্তা শুনে তার বলে উঠা " হ্যা হ্যা , দেখতে খাটো করে , শ্যামলা , ডান হাতের কবজিতে কাটা দাগ । কি বললেন ? এমন একটা ডেডবডি " আর কোন কথা না শুনেই ফোনটা কেটে দিয়ে গন্তব্যের দিকে চলতে শুরু করলো । অন্তঃস্থলের দিশেহারা অনুভূতির কথা কনামাত্র রায়হানকে বুঝতে না দিয়ে তার সাথে দ্রুত পা ফেলতে লাগলো দিপান্বিতা । রায়হান বুঝেও নিশ্চুপ থাকে । ব্যক্তিক প্রেম - ভালোবাসা , অনুভূতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার সময় নয় এটা ।

এখন স্রেফ একসাথে চলার সময় । দীর্ঘসময় যাবত সারা মুখ থেতলানো , বিকৃত হয়ে যাওয়া শরীরের অন্যান্য অঙ্গ - প্রত্যঙ্গের দাদা শুভংকরের দিকে চেয়ে রইলো দিপান্বিতা । অজস্র স্মৃতি বুক ঠেলে বের হয়ে আসতে চাইছে । তার দাদা । তাকে পৃথিবী চেনাতে শেখানো দাদা ।

তার চোখ খুলে দেওয়া দাদা । অলি - গলি পেরিয়ে কিভাবে প্রতিদিন মানুষের মতো বাঁচবার নিরন্তর কৌশিশ করে যেতে হয় তার হাতে - কলমে শিক্ষা দেওয়া দাদা রাষ্ট্রযন্ত্রের আতঙ্কের তালিকায় চিহ্নিত হয়ে নিমেষে নো বডি হয়ে গেলো । চিৎকার করে ডুকরে উঠতে পারলে স্বস্তি হতো । কিন্তু এইটুকু ক্ষমতাও তার থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে । এদিকে অসংবেদনশীল , স্থূল স্ত্রীর কেজো সাংসারিক বিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট একটি এসএমএস পেয়ে যন্ত্রণাময় সেই অধ্যায়ের কথা মনে পড়ে গেলে প্রচন্ডমাত্রায় বিরক্ত হলো রায়হান ।

একদিকে এই পরিস্থিতি অন্যদিকে নিজের মনে করতে না চাওয়া একটি অধ্যায়ের পুনরাবির্ভাব । তাদের কারো কি নূন্যতম ক্ষমতাও নেই কিছু বদলাবার ? ঠিক এই প্রশ্ন মনে উদিত হবার সময়তেই একটা বৃদ্ধ কুকুর ডেকে উঠলো । দাদার শোকে দিপান্বিতার ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দকে ছাড়িয়ে গেলো সেই ডাক ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।