রামপাল ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছে। গতকাল কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় বসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুইচ টিপে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর উদ্বোধন করেন। এ সময় ভেড়ামারা-বহরমপুর ৪০০ কেভি ট্রান্সমিশন লাইন ও ভেড়ামারা ৫০০ মেগাওয়াট সাবস্টেশনের উদ্বোধন এবং ৩৬০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এর আগে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেন। ২২ অক্টোবর রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের কথা থাকলেও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর শিডিউল না থাকায় গতকালই তা উদ্বোধন করা হয় বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সে মনমোহন সিংহকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সহযোগিতার সমর্্পক বিদ্যামন। ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় সহায়তা দিয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যুৎ সহায়তার মাধ্যমে সহযোগিতার নতুন দিগন্ত স্থাপিত হলো। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রায় বরাবরই সহায়তা দিয়ে আসছে ভারত। এরই অংশ হিসেবে আজ (গতকাল) বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র মৈত্রী সুপার থারমল পাওয়ার প্রকল্পের উদ্বোধন। এ সময় দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়নে এ বিদ্যুৎকেন্দ্র মাইলফলক হয়ে থাকবে বলে মন্তব্য করেন মনমোহন সিং। এ বিদ্যুৎকেন্দ্র দুই দেশের মধ্যো আরও সুসম্পর্ক বজায় রাখবে। সুন্দরবনের পরিবেশগত মান বজায় রেখেই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসাও করেন মনমোহন। তিনি বলেন, জন্মগতভাবে বাংলাদেশ-ভারত বন্ধু। দুই দেশের সরকার ও জনগণ ভালো বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী। দুই দেশ অংশীদারি উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে অনেক দূর এগিয়েছে। ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যাবে। আগামীতে বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনায় অংশীদার হিসেবে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন মনমোহন সিং। বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবনের কোনো ক্ষতি করবে না। তবে এ নিয়ে বিভিন্ন মহল পানি ঘোলা করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আমি একটা কথা দেশবাসীকে স্পষ্ট করে জানাতে চাই- আমি এমন কোনো প্রকল্পের অনুমোদন দিইনি বা ভবিষ্যতে দেব না যা আমাদের পরিবেশের ক্ষতি সাধন করবে। আমরা সব ধরনের পরিবেশগত প্রভাব বিবেচনায় নিয়েই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমোদন দিয়েছি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভারতের বিদ্যুৎ ও জ্বালানিবিষয়ক মন্ত্রী আবদুল্লাহ ফারুক বলেন, সামনে দুর্গাপূজা আর ঈদুল আজহা। এ দুই উৎসবের জন্য আমি আমাদের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা নিয়ে এসেছি। বাংলাদেশে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, যারা সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেন তাদের মধ্যে অসাধারণ সম্প্রীতি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী, আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্থানীয় সংসদ সদস্য তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানিবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হক, ভারতের জ্বালানি সচিব পি কে সিনহা, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ারুল হক।
এরপর বাংলাদেশের বিদ্যুৎ পরিস্থিতি নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। ২০১০ সালের ১১ জানুয়ারি বিদ্যুৎ খাতে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এর আওতায় বাংলাদেশ-ভারত বিদ্যুৎ সঞ্চালন কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। এ প্রকল্পের আওতায় ভারতীয় অংশে ৭৪ ও বাংলাদেশ অংশে ২৭ কিলোমিটার ৪০০ কেভি সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। ভারতীয় অংশ নির্মাণ করে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশ অংশ নির্মাণ করে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ। এ উপকেন্দ্রের মাধ্যমে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারত থেকে আমদানি করা হবে। তবে উভয় দেশ চাইলে ভবিষ্যতে আরও ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে পারবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।