আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ধর্ষন এবং দুটি কথা

অকর্মা, ভীতু, কাপুরুষ ধর্ষন কি জিনিস জানার ইচ্ছা জাগল মনে, তখন ক্লাস নাইন বা টেন-এ পড়ি, পুরো প্রক্রিয়াটি না জানলেও এটা বুঝতাম এর মানেটা খুব একটা সুবিধার না। আমাদের পাড়ায় আমার দাদু সম্পর্কের কোন অভাব ছিলনা, ছুটলাম এক দাদুর কাছে, - দাদু ধর্ষন করাটা কি ? - একজনের ইচ্ছা অন্যজনের অনিচ্ছায় ইজ্জতের উপর ইজ্জত স্থাপন করিয়া বেইজ্জত করাকে ধর্ষন বলে ! ধর্ষনের বাখ্যাকে দাদু এমন রসাত্বক ভাবে উপস্থাপন করলেও একটা বাক্যকে তর্জমা করলেই বোঝা যায় তিনিও এর বিপক্ষে, শব্দটি হল "বেইজ্জত"। আমরা যখন ছোট তখন ধর্ষনের মতো ঘটনা এখনকার মতো এতো ব্যাপক ছিল কিনা জানতাম না,, সেই সময় নবাবগঞ্জে একদিনের পত্রিকা পরেরদিন আসত টিভি চ্যানেল বলতে বিটিভি, মিডিয়ার এমন নাজুক অবস্থায় বাস্তবিক এটা মেলান কঠিন সেই সময়ের সাথে বর্তমান অবস্থানের তবে আগের দিনে মানুষের মধ্যে শ্রদ্ধা বোধ ছিল, ছিল তুলনামুলক উঁচু পরিবার বা বংশকে সম্মান দেবার একটা প্রবনতা যা এখন ১০০% অনুপস্থিত আমাদের মধ্যে থেকে। বেশ কয়েকদিন থেকে ধর্ষনের মতো ঘটনাগুলি এত বেশী শুনছি তাতে মাথার মধ্যে সবসময় ব্যাপারটি ঘুরপাক খাচ্ছে, সবাই ধর্ষনের ব্যাপারে অনেক চিল্লা ফাল্লা করছেন, মানব বন্ধন করছেন , হেন তেন অনেক কিছুই বলছেন কিন্তু হঠাৎ করে এমন ঘটনা বেড়ে যাবার পেছনে কারন কি প্রশ্ন করলে সকলে এক কথায় উত্তর দেবেন আইনের সঠিক প্রয়োগ না হওয়া, আমি নিজেও এটা মনে করি তবে আইনের সঠিক প্রয়োগ হলেই কি ধর্ষন বন্ধ হয়ে যাবে ? অবশ্যয় না কেনানা এদেশে আইনের প্রয়োগ নাই ধর্ষন হচ্ছে কিন্তু যে সকল দেশে আইনের সঠিক প্রয়োগ হয় সে সব দেশেও কিন্তু এমন ঘটনা থেমে নেয়। সৌদি আরবের মত দেশে যেখানে মেয়ে নিয়ে ধরা খেলে পুরুষের বিচি গেলে দিয়ে নুপুংশক বানিয়ে দেয়া হয়, সেখানে কি অবৈধ মেলামেশা বন্ধ আছে ? নাই।

তবে ? আমরা যারা ধর্ষনের বিপক্ষে এত তৎপরতা চালাচ্ছি কাওকেও দেখলাম না কেন ধর্ষনের মতো ঘটনা দিন দিন এতো বেড়ে যাচ্ছে সে ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট কোন কারন বা এর থেকে পরিত্রানের উপায় (অন্তত যেন এমন ঘটনা কম ঘটে ) এ সব নিয়ে কোন আলোচনা করতে। আমি মুর্খ মানুষ, এমন একটা সেনসেটিভ ব্যাপার নিয়ে লিখতে গিয়ে আমি কিবোর্ডের অক্ষর খুজে পাচ্ছিনা তার পরো আমার নিজের কাছে যেটি মনে হয় কিছু কিছু ব্যাপার আছে যেগুলির মাধ্যমে ধর্ষনের মতো ঘটনাগুলিকে কমিয়ে আনা সম্ভব। * মেলার নামে অশ্লিল নাচানাচি- ইদানিং গ্রামে গঞ্জে মেলার নামে যে অশ্লিল বেলেল্লাপনার একটা কালচার চালু হয়েছে তা খুবই চিন্তাজনক, এটকা মেলাতে কম করে বিশটি নাচের দল থাকে এবং প্রতিটা দলেই নাচের নামে চলে মেয়েদের উন্মুক্ত বক্ষ প্রদর্শনী, বেশী সাহশী মেয়েরা আবার একটু বেশী উদারতা দেখাতে ছাড়েনা, যে যত উদারতা দেখাবে সে ততো পাবলিকের বোনাশ পাবে !এই সব মেলার আয়োজকরা অত্যান্ত প্রভাবশালী হওয়ায় উত্তেজিত যুব সমাজ সেই মেয়েদের ঘাটতে পারেনা ঠিক তবে এর খেসারত দিতে হয় আমার আপনার মা-বোনকে। * সামাজিক মুল্যবোধের অভাব- মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতির সাথে সাথে কমে যাচ্ছে পারস্পারিক সম্মানবোধ, আগে দেখেছি গ্রামের মোড়ল মাতব্বরদের বা শিক্ষিত অথবা চাকুরীজীবিদের কথার অমান্ন কেও করতনা কিন্তু বর্তমানে এই সামাজিক মুল্যবোধ আমাদের মধ্যেই একেবারে অনুপস্থিত। * পর্ণগ্রাফির সহজলভ্যতা- এটা সম্পর্কে বিস্তারিত বলার কোন কারন দেখছিনা তবে আমার মনে হয় ভিডিও ক্যামেরা আছে এবং ভিডিও চলে এমন মোবাইলের উপর ১০০০% ট্যাক্স বসান প্রয়োজন।

* যৌন জ্ঞানের অভাব- সেক্স যেহেতু মানুষের জীবনের একটা অংশ তাই একে পাশ কাটানর কোন রাস্তা নেয়, তাই আমাদের উচিত বয়েসের সাথে সামযস্য রেখে বাচ্চাদের একটু একটু করে যৌন শিক্ষা দেয়া নইলে অন্যের কাছ থেকেই সে ঠিকই শিখবে তবে সেটা হবে কুশিক্ষা! * স্কুল কলেজের কোন ভূমিকা না থাকা- একজন ছেলে বা মেয়ের ভবিষ্যত গঠনে স্কুল কলেজের একটা বিশাল ভূমিকা থাকে, আমাদের জ্ঞান যতটুকু প্রষ্ফুটিত হবার দরকার তা এই সময়েই হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে যেয়ে হয় না তাই স্কুল এবং কলেজে সামাজিক মুল্যবোধ, পারস্পারিক সম্মান (যৌনতার ক্ষেত্রে) কি বা কেমন হওয়া উচিত এ ব্যাপারে শিক্ষা দেয়া দরকার। এমন অনেক ব্যাপার আছে যা আমার ক্ষুদ্র মস্তিস্ক থেকে আসছেনা এ সকল ব্যাপারগুলিকে চিহ্নিত করে সে মতো ব্যাবস্থা নিলে ধর্ষনের মতো ঘটনাগুলিকে কমিয়ে আনা সম্ভব। ধর্ষনের শিকার - আমরা অনেকে মনি করি কেবল মেয়েরাই ধর্ষনের শিকার হয় এমন ধারনা সম্পুর্ন ভুল, আজকাল ধর্ষনের শিকার হচ্ছে শিশু, স্কুল-মাদ্রাসার ছাত্র এবং ছেলে মানুষও অবাক হলেন না ? হ্যাঁ আশ্চর্য হলেও সত্য। ধর্ষনকারীর লিংগ (জেন্ডার) ধর্ষনকারীকে পুরুষ বলে অবহিত করায় আমার চট্টগ্রামের বন্ধু, লেখিকা এবং রন্ধন শিল্পী Rumana Baishakhiর সাথে আমার অনেকবার বাকযুদ্ধ হয়েছে, কিসের পুরুষ ? শুয়ারের বাচ্চারা কাপুরুষ । সন্ত্রাসীদের যেমন কোন ধর্ম বা দল থকেনা, একটাই পরিচয় তারা সন্ত্রাসী তেমনি ধর্ষকদের একটাই পরিচয় তারা স্রেফ পশু, এদের পুরুষ বলে দয়া করে পুরুষ মানুষের অপমান করবেন না।

কোন ঘটনা বা দুর্ঘনটা একেবারে বন্ধ করা যায়না তবে যথাযত ব্যাসস্থা নিলে সেটাকে অনেক নিয়ন্ত্রনে আনা যায়, বাংলাদেশের বিচার ব্যাবস্থা নিয়ে কিছু বলার নেয়, গনতান্ত্রিক সরকারের বাইশ বছর দেখলাম, উপরে বেশ কয়টা পয়েন্ট নিয়ে আলোচনা করেছি কিন্তু এর পাশাপাশি ধর্ষকের সঠিক এবং দ্রুত বিচার না করলে এই পাশবীকতা থেকে পরিত্রানের কোন আশা নেয়। আশা করতে এবং চিন্তা করতে কোন বাধা নাই তাই আশায় বুক বেধে থাকলাম যেদিন কোন মা-বোন বা শিশুর সাথে এমন অ-মানবিক/পাশবিক আচারন করবার এক মাসের মধ্যে সেই পশুর যথাযত বিচার এবং তা কার্যকর হবে ইনশাআল্লাহ্।  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.