সেদিন শপিং এর জন্য ছোট বোন সহ বের হয়েছি। রাস্তায় অটোর জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ব্যাথাই হয়ে গেল, শেষ পর্যন্ত একটা রিকশাই ডাকলাম । রিকশায় উঠতে যাবো তার আগেই একটা বাইক পাশ কাটিয়ে চলে গেল। দেখলাম দুটো ছেলে বাইকে। যাইহোক আমাদের রিকশা মার্কেটের উদ্দেশে চলতে লাগলো ।
চলতে চলতে রাস্তার এক মোড়ে এসে দেখলাম- একটা বাইকে দুটো ছেলে বসে আছে। যে সামনে বসে আছে তাকে দেখে বেশ হ্যান্ডসাম মনে হল, চোখে সানগ্লাস, হাল্কা নীল রঙের শার্ট, জিন্সের প্যান্ট পরিহিত, হাতে আবার একটা সিগারেট ও ধরা আছে! সিগারেট খাওয়া আমি পছন্দ করি না কিন্তু মজার ব্যাপার হল- ছেলেটার সিগারেট খাওয়ার মধ্যে যেন কেমন এক স্টাইল আছে! আমাদের রিকশা তাদের বাইক এর পাশ কাটিয়ে চলছে, মনে পড়লো রিকশায় ওঠার সময় এরকম-ই একটা বাইক আমাদের পাশ কাটিয়ে চলে গিয়েছিলো। যাকগা! রিকশা চলছে মার্কেটের দিকে। হঠাৎ মনে হল- কে যেন বলছে- “আমার ছোট তরী বল, যাবে কি”? ভাবলাম, কোন দুষ্টু ছেলে হয়ত কাউকে টিজ করছে। এরপর আবার শুনি একই কথা! মনে হল-আমাদের পেছনেই কেউ বলছে! আমি একটু হেলে পেছনে তাকালাম- ওমা! দেখি সেই ছেলে দুইটা যাদের রাস্তার মোড়ে দেখেছিলাম! দেখলাম সেই হ্যান্ডসাম ছেলেটা আমাদের রিকশার পেছনেই হাত নেড়ে হাই জানালো।
আমি সঙ্গে সঙ্গে সামনে তাকালাম। পেছনে আবার শুনি সেই একই কথা- “আমার ছোট তরী বল, যাবে কি”? বুঝলাম আমাদের উদ্দেশ্য করেই বলছে! বেশ ভয় পেয়ে গেলাম!একবার ভাবলাম- রিকশা ঘুরিয়ে বাড়ী চলে যাই, পরে ভাবলাম দূর কি করবে! দেখা যাক! এরই মাঝে আমার কাজিন রিফাতকে ফোন করলাম মার্কেটে আসার জন্য। বলা যায় না কে না কে, কি বিপদ হয় সে জন্য। যদিও দেখে ভদ্র মনে হয়েছে কিন্তু এই ভদ্ররাই তো কি সব বলছে! রিকশা চলছে, রাস্তায় প্রচুর জ্যাম। মার্কেটের কাছাকাছি গিয়ে রাস্তাকে ওয়ান ওয়ে করে দিয়েছে, এত ভিড় যে সামনে রিকশা যেতে দিচ্ছে না।
বাধ্য হয়ে রিকশা থেকে নেমে হেঁটে মার্কেটের দিকে যেতে লাগলাম । ভাবলাম ভালোই হল- ছোকরাদের হাত থেকে বাঁচা যাবে। ঝটপট একটা দোকানে ঢুকে পড়লাম । ভাবলাম - ছোকরাটা আমাদের খুঁজে পাবে না। দোকানে ঢুকেই থ্রি- পিস দেখা শুরু করলাম।
এত দাম কাপড়ের যে মাথায় হাত দিতে হয় তারপর ফিক্সড প্রাইজের দোকান , মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। যাইহোক একটা নীল রঙের থ্রি পিস দেখলাম- দোকানীকে ওটা দেখাতে বললাম। দোকানী থ্রি-পিস টা আমার হাতে দেয়ার আগেই দেখি কে যেন পেছন থেকে তা ছো মেরে নিয়ে নিল! দোকানীও হতভম্ব হয়ে গেল! তাকিয়ে দেখি সেই ছেলেটা ! মেজাজ খারাপ হয়ে গেল। দোকানী বলল- ভাই এটা উনি দেখতে চেয়েছেন আগে। বদমাইশটা আবার ঢং করে আমাকে বলে- দেখবেন ম্যাম? আমার এত রাগ হচ্ছিলো - বললাম, না আপনি দেখেন।
ছেলেটা জামাটার দাম জিজ্ঞেস করল। দোকানী বলল- ৬০০০/ টাকা! আমি মনে মনে বললাম, নে এখন, কার না কার জন্য নিবি। খালি খালি বদমাইশি করতে আসছে! ওমা! দেখি, আমাকে অবাক করে দিয়ে সে জামাটা প্যাকেট করতে বলল! তারপর প্যাকেট নিয়ে চলে গেল। আমিও হাফ ছেড়ে বাচলাম! এরপর আমরা দুবোন অন্য দুটো জামা নিয়ে দোকান থেকে বের হলাম। কয়েক কদম হাঁটতেই একটা পিচ্চি ছেলে আমার হাতে একটা প্যাকেট জোর করে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেল- বলল, প্যাকেটটা ছেড়ে এসেছিলেন! আমি তো অবাক! দুবোনের হাতে তো প্যাকেট আছে।
তবুও ভাবলাম -ভুল হল কি না। প্যাকেট খুলে দেখি, ওমা! সেই নীল ড্রেস! বুঝতে বাকি রইল না। বদমাশটার কাজ! আমি পুরা থান্ডার! এটা কি কোন সিনেমা? কি করবো বুঝে পাই না! এত বড় শপিং মলে বদমাশটাকে কোথায় খুঁজবো ? শপিং মল থেকে বেড়িয়ে পাশেই একটা চায়ের দোকানে দাঁড়ালাম রিফাতের জন্য! রিফাত আসলে ওকে সব বললাম, এর মধ্যেই দেখি রিফাত কাকে যেন এই ঈশান বলে ডাকছে! পেছন ফিরে দেখি সেই ছেলেটা বাইকে উঠছে এন সম্ভবত রিফাত ওকেই ডাকছে! আমি রিফাতকে জিজ্ঞেস করলাম, ওকে চিনিস? ডাক দে। এইত সেই ছেলে! ছেলেটা দাঁড়ালো । আমি ওর সাহস দেখে অবাক হই! আমরা ওর কাছে যাই, আমি কিছু বলার আগেই রিফাত বলে -এটা অর বন্ধু এন খুব-ই খেয়ালী টাইপের ।
আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারি। এইবার রিফাত ঈশানকে বলে- এই গুলা আমার আপু। এইবার ছেলেটার অবস্থা খারাপ! পালাতে পারছে না! রিফাতকে বললাম- আমি বলি, আমি তোর কত বড় ! এইবার বেচারা মনে হয় মাটির সাথে মিশে গেল! এন টাস্কিতো হয় আমি রিফাতের বড় শুনে! ওকে বললাম- আমার দুর্ভাগ্য বা সৌভাগ্য বলতে পারো যে আমার বয়স অনেকে ধরতে পারে না! এখন তোমার পাগলামির বর্ণনা দাও? ও বলল- আপনাকে রাস্তায় দেখে খুব পছন্দ হয় এন তখন থেকেই আপনাদের পেছনে করে শপিং মলে আসি এন বাকিটা তো জানেন-ই! ভেবেছিলাম আপনাদের পিছু নিয়ে বাড়ী দেখে আসবো কিন্তু এইভাবে যে ধরা খাবো ভাবিনি! এন বুঝিওনি আপনি এত বড় হবেন! সেই ভাল লাগা থেকেই পাগলামি করে বসি! বললাম- এটা আমার কাছে নতুন কিছু না কিন্তু তুমি যে সিনেমাকেও হার মানিয়েছ! বেচারা পুরাই লাল হয়ে যায়! বললাম- ভাজ্ঞিস রিফাতের বোন আমি না হলে অন্য কিছু ঘটতে পারতো! দুষ্টুটা বলে, বাদ দেন না, আমরা কি বন্ধু হতে পারি কিংবা রঙ্গিন রুপবান? ওর কথা শুনে আমরা হেসে উঠি ! এইবার রিফাত বান্দর বলে, তুই আমার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে টানাটানি করছিস, তোর ঠ্যাং কেটে হাতে ধরিয়ে দিব। এরপর ঈশান জোর করেই আমাকে ওর গিফট দিল। এবং ওর বাইকে করে বাসায় পৌঁছে দিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় আবার গান ধরল-“ আমার ছোট তরী বল, যাবে কি”? আমি পেছন ফিরে হাসতে লাগলাম ! বাসায় এসে সবাইকে এই কাহিনী বলতেই- সবাই বলে ওঠে - লেখার জন্য একটা বিষয় পেয়ে গেলাম!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।