আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রবাসে পরবাসে



প্রায় সাত মাস হল টরেন্টো এসেছি। এই বছরের মার্চের ২৭ তারিখে পিয়ারসন এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করলাম। তখন শীতের প্রায় শেষ দিক .. ঠান্ডা ছিল .. কয়েকদিন তুষারপাত-ও পেয়েছি। এয়ারপোর্টে নামার পর প্রথম টেনশন ছিল ইমিগ্রেশন নিয়ে। কতক্ষণ লাগবে ? কী কী চেক করবে ? আমাদের ছয়টা ব্যাগ .. এমনভাবে প্যাক করা যে একবার খুললে বারোটা ব্যাগ লাগবে গোছাতে।

এয়ারপোর্টে আমার স্ত্রী-র বান্ধবী ডিউটি-তে থাকায় প্রতি ব্যাগেই কিছু ওজন বেশি ছিল (বাংলাদেশ বলেই .. আবার বাংলাদেশ এয়ারপোর্টের সব অভিজ্ঞতা বিস্তারিত লেখার প্রয়োজন নেই.. যার যার অভিজ্ঞতা তার তার মতন আর দেশের বাইরে টাকা কামাতে আসবেন, বখশিশ তো তাদের হক.. তাই না ? )। যাহোক, টরন্টো পৌঁছে ইমিগ্রেশন ডকুমেন্টেশন খুব দ্রুতই শেষ করলাম। এরপর একজন পোর্টারের সাহায্য নিয়ে ব্যাগগুলো তার ট্রলিতে নিয়ে কাষ্টমস লাইনে দাঁড়ালাম। আমার সামনে একজন পাকিস্তানি ভদ্রলোক তার পরিবার পরিজন নিয়ে ছিল। একজন কাষ্টমস অফিসার তাদের সবগুলো ব্যাগ এমনভাবে খুলে ছড়িয়ে ফেলল যে আমি ঘামতে শুরু করলাম।

আমার পোর্টার (পাশা - দক্ষিণ আফ্রিকার) অবশ্য আস্বস্ত করল.. 'সব অফিসার একরকম না। তোমাদের অন্য অফিসার চেক করবে। ' পাশা আমাদেরকে আরেক অফিসারের ডেস্কে নিয়ে গেল। কোন চেকিং ছাড়াই শুধু টাকার হিসাব দিয়ে বের হয়ে এলাম !!! আমার কাছে ইউএস ডলার, কানাডিয়ান ডলার আর ইউরো ছিল। টার্কিশ এয়ারে এসেছি বলে ইউরো নিয়েছিলাম।

ইস্তানবুল এয়ারপোর্টে অপেক্ষার সময় আমার ছেলের জন্য খাবার কিনতে কাজে লেগেছে। কানাডাতে সবচেয়ে বড় সাপোর্ট আমার ফুফাত ভাবি। নীলা ভাবি আমাদেরকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন। শুধু কানাডাতেই না, বাংলাদেশে আমার চাকরি জীবনের শুরু তারিক ভাইয়ের হাত দিয়েই .. আর আশ্রয় ভাই-ভাবির। সেই তখন থেকেই ভাই-ভাবি একনাগারে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন।

এখানে ইমিগ্র্যান্টরা প্রতি ৪ জনের ৩ জনই অন্য লাইনে কাজ করতে বাধ্য হয়। এখানে নিজের লাইনে কাজ পাওয়া একটা বিরাট সৌভাগ্য। আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বড় ভাই 'তুর্য ভাই' -এর অবদানে এই সৌভাগ্যও হল। তিনি একটা আইটি কোম্পানিতে আমার চাকরির ব্যবস্থা করে দিলেন। এখনও সেখানেই চালিয়ে যাচ্ছি।

এখানে যে বিষয়গুলো চাকরির জন্য অত্যাবশ্যকীয় (আমার নিজস্ব মতামত, অনেকেরই দ্বিমত থাকতে পারে) তাহলো .. কানাডিয়ান এডুকেশন, আর কানাডিয়ান এক্সপিরিয়েন্স। এগুলো যতদিন না আয়ত্বে আসছে, ততদিন একটা ভালো কাজ পাওয়া কঠিন। আমি এখন চাকরির পাশাপাশি একটা ক্যারিয়ার কলেজে ডিপ্লোমা করছি। পরবর্তীতে মাষ্টার্স করারও ইচ্ছা আছে। আপাতত চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে বলে ডিপ্লোমা করছি, সময় কম লাগবে বলে।

আরেকটু ভালো চাকরি হলে সময় নিয়ে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেব, এটা আমার প্ল্যান। এখানে সামার খুবই প্রাণবন্ত .. সবাই এত উপভোগ করে.. আমরাও সেন্ট্রাল আইল্যান্ড, নায়াগারা, বিভিন্ন ফেস্টিভ্যাল ঘুরেছি, আমার ছেলের সবচেয়ে পছন্দ ডানডাস স্কয়ার আর সেন্ট্রাল আইল্যান্ড। সামনের সামারে ইনশাআল্লাহ ডিজনিল্যান্ড আর টরন্টো জু ঘুরে আসার ইচ্ছা আছে। টরন্টো কানাডার সবচেয়ে বড় শহর আর ইমিগ্র্যান্টদের শহর। এটা একটা 'মিনিয়েচার আর্থ'।

পৃথিবীর মতই এখানেও চাইনিজদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। নিজেদের দেশে একটার বেশি বাচ্চা নিতে পারে না বলে এখানে এসে গিনিপিগের মত বংশবৃদ্ধি করে। যে কোন বাস বা ট্রেন স্টপেজে দশ জন থাকলে তাদের ছয় জনই নাক বোঁচা। এখানে আরেকটা মজা পাচ্ছি, দুইটা ঈদ !!! রোজার ঈদে তো হলোই .. কোরবানির ঈদেও পাশাপাশি দুই মসজিদে দুই দিনে দুই ঈদের জামাত। আমার জন্য দুইদিন ছুটি নেয়া সম্ভব না।

তাই কাদের সাথে নামাজ পড়ব, এটা খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সামনে আবার শীত আসি আসি করছে। এই প্রথমবার শুণ্যের নিচের তাপমাত্রার অভিজ্ঞতা হবে। এখনও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাইনি, নভেম্বরের মধ্যে গাড়ি না কিনতে পারলে আরেকটা অভিজ্ঞতা হবে। তুষারপাতের মধ্যে (-২০ থেকে -৩০) পাবলিক ট্রান্সপোর্টে যাতায়াত !!! শীতের অপেক্ষায় ...


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।