দারুণ সুস্বাদু এই মাছ। কিন্তু লোকে একে চেনে বিষাক্ত প্রাণঘাতি মাছ হিসেবে। মাছটির নাম ফুগু। আমাদের দেশে বলা হয় পটকা মাছ। বহু মানুষ মারা গেছে এই পটকা বা ফুগু মাছ খেয়ে।
ফুগু মাছ আসলে কি ধরনের মাছ
ফুগুর আন্তর্জাতিক নাম Puffer Fish. সামুদ্রিক মাছ ফুগু বা Puffer Fish হচ্ছে পটকা মাছের সমগোত্রীয়। ফুগুর যকৃত, চোখ আর নাড়ীভুঁড়িতে রয়েছে ভয়ঙ্কর বিষ টেট্রোডোটক্সিন (C11H17N3O8) বা TTX; যা পটাশিয়াম সায়ানাইডের চেয়েও এক হাজার গুণ বেশী বিষাক্ত। এখন পর্যন্ত এর কোন প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি।
আগুনে ঝলসালে বা সেদ্ধ করলেও এই বিষের প্রভাব সামান্যতম কমে না। মানুষকে মেরে ফেলার ভয়াবহ ক্ষমতার জন্য জাপানের 'কানসাই' এলাকার মানুষজন ফুগুকে ডাকে 'টেপ্পো' নামে। যার অর্থ 'পিস্তল!' একটি ফুগু মাছে যে পরিমাণ বিষ আছে তা দিয়ে ত্রিশজন সুস্থ-সবল মানুষকে অনায়াসেই মেরে ফেলা সম্ভব!
কোথায় বেশি পাওয়া যায় ফুগু মাছ
জাপানের নাম করা হোটেল রেস্টুরেন্টগুলোতে এই মাছ পাওয়া যায়। জাপানিরা বিষমুক্ত করে ফুগু খাওয়ার কায়দা শিখেছে। সেখানে সবচেয়ে দামী আর অভিজাত খাবার হচ্ছে ফুগু মাছের নানান পদ! প্রতি বছর জাপানিরা প্রায় ১০,০০০ টন ফুগু মাছ খায়।
রেস্টুরেন্টে একজনের জন্য একটি ফুগু পদের দাম পড়বে ২,০০০ থেকে ৫,০০০ ইয়ান! অর্থাৎ প্রায় ২০ থেকে ৫০ ডলার। প্যাকেট করা ফুগু মাংসের দাম পড়বে কেজি প্রতি ১৩০-২৫০ ডলার! আর যদি ফুগু দিয়ে ৩ কোর্সের একটি ডিনার সারতে চান তো খরচ পড়বে জন প্রতি ১০০০ ডলারেরও বেশি।
ফুগুকে বিষমুক্ত করার প্রক্রিয়া
বিশেষ এক পদ্ধতিতে এই বিষাক্ত মাছ ফুগুকে বিষমুক্ত করে এর বর্জ্য প্রক্রিয়া করে জাপানিরা। রেস্টুরেন্ট আর ফুগু প্রক্রিয়াজাত করা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ফুগুর বিষাক্ত অংশগুলো বিশেষ একটি পলিথিন ব্যাগে ভরে বেঁধে লকারে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। সারদিনে জমা হওয়া বিষাক্ত বর্জ্যগুলো একত্র করে পাঠানো হয় চুল্লিতে।
সেখানে বর্জ্যগুলোকে তেজষ্ক্রিয় বর্জ্যের মত করে উচ্চ তাপমাত্রায় পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়ে থাকে।
ফুগুর স্বাদ কেমন
আঁশ নেই, আঠালো জেলির মত। স্বাদ অনেকটা বাচ্চা মুরগীর মতো, সামুদ্রিক নোনতা স্বাদযুক্ত। কিন্তু এমন সাদামাটা স্বাদের ফুগু মাছ খেয়ে নাকি তৃপ্তিতে জাপানিরা প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার কষ্ট পর্যন্ত ভুলে যেতে পারে।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।