আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রম্য- ঘিলু বিষয়ক উপাখ্যান

একজন চতুর্মাত্রিক অলস !

আসুন পুরনো একটা গল্প নতুন ঢঙে শুনিয়ে শুরু করি। একবার বিরাট এক অফিসে রেকর্ড পরিমাণ বেতন দিয়ে ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেওয়া হলো। ইয়া মোটা ভুঁড়িওয়ালা, হোমরা চোমরা চেহারার এক ইঞ্জিনিয়ার। সে যাই হোক, অফিসের অন্য কর্মচারীরা নড়েচড়ে বসলেন। বস এতো বেতন দিয়ে কি মালটা ধরে এনেছে, তাতো দেখতে হবে নাকি ? ও আচ্ছা, মাল শব্দটা শুনে আবার ঘাবড়াবেন না প্লিজ! মালের কিন্তু অনেক মিনিং আছে।

স্কুল কলেজের দুষ্টু ছেলেরা মাল বলতে এক জিনিষ বোঝে, আবার ঘুষ খাওয়া সরকারী মস্ত অফিসার, পাড়ার ডিফল্ট মাস্তানরা মাল বলতে আরেকটা জিনিষ বোঝে। গ্রামের মুরব্বী গোছের লোকের কাছে মালের ডেফিনিশনটাও আলাদা। ‘উপর ওয়ালার মাল উপরওয়ালা নিয়ে গেছেন’। মানুষ মরলে মুরব্বীদের একথা নিশ্চয়ই আপনারা অনেকে শুনেছেন ? যাক, আপনার মাল-বিষয়ক ধারনা শক্তপোক্ত করার জন্য কিন্তু আজ আসিনি। মাল নিয়ে আপনার অনুভূতি কি তাও মুন্নিসাহার মতো জানতে চাইবো না।

শুধু বলবো, থিংক পজিটিভ, ওকে! তাহলে,আবার গল্পে ফিরে যাই,কি বলেন ? হ্যাঁ, অফিসের কর্মচারীদের কথা বলছিলাম। তারা ইঞ্জিনিয়ারের পিছনে সুপার গ্লুর মতোন জেঁকে বসলো। নতুন ইঞ্জিনিয়ার খায় কি, পড়ে কি, অফিসে বসে সারাদিন করে কি, এমন খান-দশেক তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণের পর, তৃতীয় থেকে প্রথম শ্রেণীর প্রত্যেক কর্মচারী মোটামুটি বুঝতে পারলো যে ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটার বিরাট ঘাপলা আছে। কলমটা একটু চালিয়েই খালাস। তারপর ব্যাটা সারাদিন এসিরুমে বসে কফি-বার্গার খায় আর টিভির চ্যানেল ঘোরায়।

তো, অন্য কর্মচারীরা ভাবলো ও দেখলো ইঞ্জিনিয়ার ব্যাটার কাজে গলদ সে তুলনায় তারা বৃথা শ্রমের কলুর বলদ। একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে, স্কুলে মোটা চশমা পড়া ব্যাকরণ পণ্ডিত মশাইরা মুখস্থ করাতেন, ‘তুমি কাঁদায় পড়লে পদ্ম আর আমি কাঁদায় পড়লে হদ্দ এটা মানিনা। একই নিয়ম ব্যাক্তি ভেদে ভিন্ন তা হবেনা, তা হবেনা’। মুহূর্তেই কর্মচারীদের পণ্ডিত মশাইদের কথা মনে পড়ে গেলো। সত্যিই তো, কেউ পাবে কেউ পাবেনা আবার কেউ খাবে কেউ খাবেনা, তা হবেনা, হতেই পারে না।

অলস অকর্মা ইঞ্জিনিয়ারের পিণ্ডি চটকাতে অফিসের বাকী সবাই তাদের কর্তার কাছে গেলো। সকাল-সন্ধ্যা কাজ করেও তাদের মাইনে কম আবার ঐ ইঞ্জিনিয়ার নিয়ম ভেঙ্গে শুয়ে-বসে বিরাট মাইনে পায়, এটা কোন নিয়ম! তারমানে এসেছে কি কলিযুগ, সাথে নিয়ে যম ? সব শুনে-টুনে কর্তা বললেন, ‘এতোই যখন জিজ্ঞাসা মমিনরা তাহলে তোমাদের একটা কাজ দেই। যদি তোমরা করে দেখাতে পারো তবে তোমাদের কথা ঠিক আর তোমাদের ঐ অলস ইঞ্জিনিয়ার করে দেখাতে পারে তবে যে যা করছে, তাই ঠিক’। সবার জিজ্ঞাসা তখন কি কাজ ? কর্তা বললেন, ‘ছায়া দেখে মাপো দেখি ঐ তাল গাছ’। ছায়া দেখে শুধুমাত্র মহিলা মানুষ মাপা যায় এটা তারা জানতো কিন্তু তালগাছও সে তালিকায় আছে তা কর্মচারীদের কেউ কস্মিনকালেও শুনে নাই।

তো, তারা বিনা যুদ্ধে আত্ম-সমর্পণ করতেই ইঞ্জিনিয়ারের ডাক এলো। ইঞ্জিনিয়ার এলো, ঘাড় তিড়িং বিড়িং করে গাছের ছায়াটা কিছুক্ষণ দেখলো। এরপরেই কাগজে কলমে ঘষে-টসে কর্তার সামনে এসে টুপ করে গাছের হাইটটা বলে দিলো। এখানে বলে রাখি, ঐ হাইটটাই কি গাছের আসল হাইট নাকি তা আমার কাছে জানতে চাইবেন না। আসল গল্পে ওটা নিয়ে কথা ছিলো না।

তাই আমার আজকের সিলেবাসেও ওটা নাই। ইস! দেখুন তো, আবার গল্পের বাইরে চলে গেলাম। গল্পের তারপরে কি হবে ? ঐ যে, অফিস কর্তা টাইয়ের নট ঠিক করতে করতে বললেন, ‘নটি গাছটা এবার মুড়ালো। তোমরা যা পারোনা তা ইঞ্জিনিয়ারের ঘিলুটা পারে। ওকে এই জন্যই রেখেছি, যখন ঘিলুর দরকার হবে সে যেন ওটা বের করে দেয়।

ব্যস, যাওগে যার যার কাজে, গল্প এখানেই ফুরালো’। কাজেই আমরা কি বুঝলাম এতক্ষণ পরে, ঘাম থেকে ঘিলুর দাম বেশী। তো, আজ কেন এবিষয়ে লিখলাম, প্রশ্ন করতে পারেন। তাহলে কারণটা বলি, সেদিন প্রোফেসর গোছের এক ডাক্তারের কাছে রোগী দেখাতে নিয়ে গেলাম। সিরিয়াল নিয়ে বসে আছি, এমন সময় চেম্বার থেকে বেড়িয়ে এক ভদ্রলোক কোরবানির গরুরমতো হম্বিতম্বি শুরু করলেন।

কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই উত্তর দিলেন, ‘ এই ডাক্তারের জাতটা না কসাই, ১০ মিনিট রোগী দেখে আর কলম খুঁচিয়ে ৭০০ টা টাকা নিয়ে গেলো! কসাই না বলে কি বলবো বলুন ? অথচ, আমরা খেটে মরে একদিনে ৭০০ টাকা ইনকাম করি ! না না ভাই, আমাদের টাকা মেরে খাওয়ার কোন হক তাদের নাই’। বলেই ভদ্রলোক হনহন করে হেঁটে চলে গেলেন। আমি কিছুক্ষণ আলগা ঘোরে দাঁড়িয়ে থাকলাম, এতক্ষণ পরেও ভদ্রলোকের পারফিউমের গন্ধটা টের পাচ্ছি। খুব মিষ্টি। আর হাতে সনি এক্সপেরিয়া সেটটাও দেখার মতো ছিলো ! উপরের গল্পটার ইঞ্জিনিয়ারের সাথে এই ডাক্তারের কোন মিল পাচ্ছেন কি ?


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.