সুখীমানুষ
“যায় দিন” নাকি ভালো যায়, আর আসে দিন খারাপ। এই ছোট্ট কথাটাও একদিনে কারো মাথায় আসেনি। যুগ যুগান্তরের অভিজ্ঞতা থেকে পাওয়া জ্ঞান পুঞ্জিভূত হয়েছে এমন ছোট একটি বাক্যে। খনা নামের কোনএক মহতী মেয়ে এমন অনেকগুলো কথা একত্রে করেছিলেন। অথবা নিজের দূরদর্শিতা থেকেই বলেছিলেন এমন অনেক বচন।
একেই আমরা খনার বচন নামে জানি। খনার বচনগুলো ছাড়াও এমন অনেক মূল্যবান অভিজ্ঞতা ও উপদেশের কথা গাঁথা আছে সুন্দর রমনীয় ছন্দে। গ্রাম বাংলায় তা “শিগলি” নামে পরিচতি। কেকের মধ্যে ছিটায় ছিটায় মুরব্বা দিয়ে যেমন কেকের মজা বাড়ানো হয় তেমনি আমাদের দাদী নানীরা গল্পের বুননীতে শিগলি দিয়ে বাড়াতেন কথার মাধুর্য্য। মনের সুখ, দুঃখ প্রকাশেও ছিলো এর যথার্থ প্রয়োগ।
এক কথায় অনেক কথা বুঝিয়ে দিতে শিগলি’র বিকল্প নেই। এই শিগলির শিকল আজ ছিড়তে বসেছে। কেননা বয়সের ভারে আমাদের সেই দাদী নানীরা হারিয়ে যাচ্ছেন। সাথে হারিয়ে যাচ্ছে মূল্যবান শিগলি সম্ভার। বিরল প্রজাতির মাছও বুঝিবা দুই একটা পাওয়া যাবে খোঁজ নিলে।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি আমাদের এই শিগলি যদি এখনই রক্ষা না করি তহলে হয়ত এমন কোন মুরব্বী পাওয়া যাবেনা যারা অনর্গল বলে যেতে পারেন এই জ্ঞানগর্ভ বাক্যমালা। আসুন কিছু শিগলি’র রম্য বচন দেখা যাক।
১) যে ছাও উড়ে, তার বাসা ধড়ফড় করে
মানেঃ যাকে দিয়ে কাজের কাজ হবে তার একটু আচরণ দেখেই বলে দেওয়া যায় সে পারবে কি পারবে না।
২) দেখতে নারি, চলন বাঁকা।
মানেঃ এখানে নারি মানে হলো ‘না পারি’।
অর্থাৎ যাকে দেখতে পারি না, তার কোন দোষ খোঁজে না পেলে শেষমেশ এই কথাটা হলেও বলা যায় যে তার দোষ হলো সে বাঁকা হয়ে হাটে।
৩) যেই গাইয়ে গোবর খায়, তার ডেহা হুইঙ্গা অইলেও চায়
মানেঃ ডেহা মানে হলো বাছুর, আর হুইঙ্গা মানে হলো গন্ধ নেওয়া। তার মানে দাড়ালো, যদি কোন মহিলার খারাপ আচরণ, অভ্যাস থাকে তার মেয়ের কাছাকাছি স্বভাব থাকবেই।
৪) গাছ ভালো তার ফল ভালো।
মানেঃ এর মানে বুঝানোর কিছু নেই।
বাবা মা ভালো হলে তার ছেলেমেয়েরাও ভালো হবে।
৫) হেওত দিয়া কি নদী হেচবা?
মানেঃ হেওত একটি বেতের তৈরী ত্রিভুজের মত সেচযন্ত্র। এর দুই পাশে চারটি রশি বেধে দুইজনের একত্র প্রয়াশে ছন্দময় ভঙ্গিমায় পানি সেচা যায়। তাই এই বচনের মানে দাড়ালো, বিশাল কোন ভান্ডার থেকে ছোটছোট করে খরচ করলেও ভান্ডারের তেমন কমতি হয়না।
৬) ঢেকি স্বর্গে গেলেও বাড়া ভাণে
মানেঃ অবস্থানের পরিবর্তন হলেও মানুষ সহজে তার স্বভাব ছাড়তে পারেনা।
৭) হস্ কাজের বউ লাউ কুটায় যায়।
মানেঃ হস মানে হলো অলস। আর শব্জির মধ্যে লাও কাটা সবচেয়ে সহজ। এবার অর্থটা নিজে বুঝে নিন।
৮) ভাঙ্গতি গাঙ্গ কি ভরণ যায়?
মানেঃ একবার অধঃপতন শুরু হলে তা ঠোকানো প্রায় অসম্ভব।
৯) হতিনের মা’র লগে আবার দুঃখের কথা!
মানেঃ হতিন মানে সতীন। সতীন হচ্ছে চিরশত্র“, শত্র“র আপনজনের কাছে নিজের দুর্বলতার কথা বলতে নেই।
১০) মা’র কাছে মামুর বাড়ীর গল্প?
মানেঃ বেশী জানে এমন একজনকে জ্ঞান দিতে যাওয়া।
১১) ফুটাইস্না লো মামী হরি, দেইকখ্যা আইছি তোর বাপের বাড়ী।
মানেঃ এত মিথ্যা বাহাদুরী করো না, তোমার আদি অন্ত আমার জানার বাকী নাই।
১২) ছিড়া কাপর টানলে বারে।
মানেঃ অবাবের সংসারে বিপদের উপর বিপদ আসে।
১৩) মাগনা অইলে আলকাতরা এ কি?
মানেঃ যদি মাগনা হয় তাহলে অকাজের জিনিসও ফেলে না কেউ।
১৪) দাও এর চাইতে আছার বড়।
মানেঃ অসামঞ্জস্য।
১৫) দুই দিনের বৈরাগী, ভাতেরে কয় অন্ন
মানেঃ রৈরাগী হয়ে যারা ঘুরে বেড়ান তারা ভাতকে অন্নপ্রসাদ মনে করেন। দুই দিন কেউ বৈরাগী হয়েই যদি ভাত কে ভাত না বলে অন্ন বলা শুরু করে তাহলে বুঝতে হবে সে দ্রুত ঘোল পাল্টাতে পারঙ্গম।
১৬) কৈ এর তেলে কৈ ভাজা
মানেঃ এক কাজে দুই কাজ করা।
১৭) গায়ে মানে না নিজে মুড়ল
মানেঃ ফাও মাতব্বুরী দেখানো।
১৮) ঘোড়ার দেখা নাই, চাবুক কিন্না বইসা আছে।
মানেঃ অতিরিক্ত আগ্রহ আছে কিন্তু সামর্থ নেই।
১৯) নিজে বাঁচলে বাপের নাম
মানেঃ আগে নিজে বেঁচে বাপের নাম বড় করতে হবে। বাপের নাম বড় করতে গিয়ে নিজে মরে গেলে সব শেষ হয়ে গেলো।
২০) ধরি মাছ, না ছুঁই পানি / শাপও মরবে লাঠিও ভাঙ্গবে না।
মানেঃ উদ্দেশ্য সফল করতে হবে কিন্তু প্রতিবন্ধকতাগুলোকে খেপালে চলবে না।
২১) দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা দেয় না কেউ।
মানেঃ অসময়ে সেবা করে লাভ নেই, সময়মত কাজ করতে হবে।
২২) হরি বলে ওগো বউ, কচুতে নি দিছো মৌ। বউ বলে, ওগো হরি পিন্দ শাড়ি তাড়াতাড়ি; নাইমা দেখো হাটু পানি।
মানেঃ কচু পানিতে ভাসে।
বউ এতটাই পানি দিয়েছে যে পাতিল পূর্ণ হয়ে গেছে। তবু কচু পানির নীচে যাচ্ছে না। এর মানে হলো, অকর্মাকে দিয়ে কাজ করালে কাজের কাজতো কিছু হয়ইনা উল্টা হযবরল হয়ে যায়।
২৩) যার বিয়া তার খবর নাই, পাড়াপড়শীর ঘুম নাই।
মানেঃ আশেপাশের মানুষরা সবাই ব্যাতব্যিাস্ত।
কিন্তু যার জন্য এই ব্যাস্ততা তারই কোন খবর নাই।
২৪) মেয়ে কয় মা, আমার বাচ্চা হওয়ার সময় আমারে ডাক দিও। মায় কয়, তোমারে ডাকা লাগবো না, তোমার ডাকেই পাড়াপ্রতিবেশী সজাগ হইবো।
মানেঃ যখন সময় আসবে তখন ঠিকই অনুধাবন করা যাবে। এত তারাহুরার কিছু নাই।
২৫) আড়াত্তে আইলো কুইদ্দা, পাতে দিলো মুইত্তা
মানেঃ লেবু।
২৬) ভাসুরের নাম লইতে মানা।
মানেঃ বিপদ হতে পারে বা অসৎ স্বার্থে বাধা পড়তে পারে এই ভেবে ক্ষমতাধরদের নাম উহ্য রাখা।
২৭) ভাত দেওয়ার মুরুদ নাই, কিল মারার গোসাই।
মানেঃ সুবিধা দিতে পারে না, দায়িত্ব নিতে জানে না কিন্তু শাষন করাতে জুড়ি নাই।
২৮) পেট বুইঝা ডাইল খাইয়ো।
মানেঃ যতটুকু হজম করতে পারবে অতটুকুই কাজ করো। নিজের আয়ত্বের বাইরে ক্ষমতা দেখায়ো না।
২৯) আমার ভাসুরে কম ছাড়া বেশী বুঝে না, গাঙ্গ পার হইয়া কিতান করে, আমারে দেখে না!
মানেঃ অন্যায়, অপরাধ নিজের ঘরে করা ভালো। দূরে গিয়ে করলে সমস্ত পরিবার/দেশ এরই অপমান।
৩০) গুষ্ঠি জোড়া কিতান নাই, উধার কইরা পাদে।
মানেঃ নিজের এমনকি পরিবারের কারোই সাধ্য নাই তবু ধার করে বেশী ফুটানি দেখানো।
৩১) ফকিন্নির পুতের আবার বরাপিঠা?
মানেঃ গরিবদেরকে গরিবের মতই দিনকাল কাটাতে হয়, বেশী কিছু এদের ভাগ্যে জুটে না।
৩২) ছাল নাই ক্ত্তুার নাম বাঘা!
মানেঃ মুরদ নাই তবু ফুটানির শেষ নাই।
৩৩) হাইয়ের লাই¹াও কান্দো, হুটকি তরকারীও রান্ধো।
মানেঃ হাই মানে স্বামী। স্বামী শুটকি খেতে পারে না। তবু শুটকি তবু শুটকি রেঁধেছে আবার কান্নাকাটিও করছে যে তার স্বামীতো শুটকি খেতে পারেনা।
মানেঃ জেনেশুনে কোন কাজ করে আবার তারজন্য অনুশোচনা করা।
৩৪) খাইচ্চত দোষে মুখ নড়ে, ঝুন্ডা বাইয়া হেন পড়ে।
মানেঃ এক ফকির প্রতিদিন রাতে এক গৃহিনীকে কিছু চাল দেয়। গৃহিনী তা দিয়ে ভাত রেন্ধে দেন। একদিন ভাত রান্না হতে দেরী হওয়ায় ফকির খুব খারাপ ব্যাবহার করলো গৃহিনীর সাথে। ফরিরের কথা হলো চাওল দিলে সব শালীই ভাত রেঁধে দিবে। মহিলা চিন্তা করলো, ফাও ফাও রেন্ধে দিই, এর উপর আবার গালি! ভাতের মার শুদ্ধা ফকিরের ঝোলায় মহিলা ঢেলে দিয়ে বলে দিলো যেন আর না আসে।
এখন রাস্তায় যেই জিজ্ঞাগাস করে কী হইচে? তাদেরকেই ফকির বলে” খাইচ্চত দোষে মুখ নড়ে, ঝুন্ডা বাইয়া হেন পড়ে ”। এর মানে হলো অনেকের মনে খারাপ থাকেনা কিন্তু মুখে খারাপ কথা চলে আসে, এবং এর জন্য অনেক ভোগতেও হয়!
৩৫) দুঃখে গায়ে কাপর নাই, মাইনসে কয় ফকিরি পাইছি।
মানেঃ এমনিতেই অভাবে আছি, এর উপর এই অভাব নিয়ে যদি কেউ হাস্যরস করে।
৩৬) ময়লার আবার এপিঠ ওপিঠ?
মানেঃ খারাপ মানুষের আগাগোড়া সবই খারাপ।
৩৭) গুচার আবার চিত্তইয়া ঘুম?
মানেঃ কোন না কোন সমস্যা থাকলে সব ধরনের আরাম করা যায়না।
৩৮) নিজের লেজে থুইয়া গু, অন্যেরে কয় লেজ ধু।
মানেঃ নিজেকে না শুধরে একই ভুলের জন্য অন্যকে শাষন করা।
৩৯) আগুনে গায়, ফাগুনের গীত।
মানেঃ সময়ের কাজ অসময়ে করা।
৪০) যদি থাকে বন্দের মন, গাঙ্গ পার হইতে কতক্ষন?
মানেঃ ইচ্ছা থাকলে উপায় একটা বের হবেই।
৪১) হুইত্তা থাইক্কা রইছত্তি?
মানেঃ হেরে গিয়েও অন্যকে ক্ষমা চাইতে বলা।
৪২) আউসে পোয়াতি হইছো, বিয়াইতে বুঝবা।
মানেঃ সখে সখে কোন কাজ হাতে নিলেও সব কাজেরই দায়িত্ব নিতে হয়। তখন টের পাওয়া যায় এর ঝামেলা।
৪৩) উইজ্জা ছয়মের রোজা রাখলাম
মানেঃ না করলেও হতো এমন কাজ করে এখন ফেঁসে যাওয়া।
৪৪) রাইত পুয়াইয়া বেন অইছে, হুক্কুর অইয়া মনে অইছে।
মানেঃ সময় চলে যাওয়ার পর সাবধান হওয়া।
৪৫) দাদারে আদা চিনাও?
মানেঃ অভিজ্ঞকে জ্ঞান দিতে যাওয়া।
৪৬) সারা রাইত রামায়ন পইড়া, সকালে সীতা কার বাপ?
মানেঃ অনেক বোঝানোর পরেও কিছুই না বোঝা।
৪৭) বুদ্ধি লইবা তিন মাথাওয়ালাত্তে।
মানেঃ বয়সের ভারে যার মাথা দুই হাটুর ভিতর ঢুকে যায় বসে থাকলে। এমন বৃদ্ধ লোকের কাছ থেকেই বুদ্ধি নিতে হবে।
৪৮) বাপে পুতে ডাইক্কা ভাই, কোনমতে দিন কাটাই।
মানেঃ যে যুগ পরেছে সম্পর্কের টান টেনে উনি আমার কি হন, কিভাবে হন ইত্যাদি বলার দরকার নাই। যে কোন কিছু বলে ডাকলেই হলো।
৪৯) ভিক্ষার চাওল কাড়া, আকাড়া!
মানেঃ মাগনা জিনিষের খুঁত ধরতে নেই।
৫০) লাল টুপি দেখলেই ইলাবাজের ভাইছাব না।
মানেঃ সবাইকে সমার ভাবে হেন্ডেল করতে হয় না।
৫১) বুঝস না আমার জাতের ধারা? তইলে কেন পথে খাড়া!
মানেঃ খারাপকে এড়িয়ে চলতে হয়। নাহলে যেকোন সময় ছোবল দিতে পারে।
৫২) এইডা বাঁশা, এইডা বাঁশী, এইডা ছাও; এইডা কাটলে এইডা মরবো, কোনডা নিবা চাও।
মানেঃ এক লোক তার বন্ধুর কাছে বাঁশ চাইতে গেছে। বন্ধুর দেওয়ার মন নেই কিন্তু সরাসরিতো আর মানা করে দিতে পারেনা। তাই বলে দিলো একটা পুরুষ বাঁশ, অন্যটা মহিলা। আর একটা বাচ্চা বাঁশ।
আর বাকী যে দুইটা থাকলো তাদের একটা কাটলে আর একটা মরে যাবে। অর্থ্যাৎ সে কোনটাই দেবার মত না। এর মানে হলো দেওয়ার ইচ্ছা না থাকলে অনেক বাহানা বের করা যায়।
৫৩) এক পয়সার তৈল, কেমনে খরচ হৈল? দুই মেয়ের বিয়ে হলো, সাত রাত গান হলো। কেন অভাগী ঘরে এলো বাকী তৈলটা ঢেলে নিলো।
মানেঃ বাড়িয়ে গল্প বলা। কারন দুই পইসার তৈল দিয়ে নিশ্চয়ই এতকিছু করার পরেও আর বাকী থাকবেনা যা নাকি অন্য কেউ চুরি করে নিয়ে যেতে পারে।
৫৪) না পাইয়া খোয়াজরে দান
মানেঃ গ্রামের বিশ্বাস, খোয়াজ নামের একজন নবী পানিতে থাকেন। এক মহিলা তার একটা চামচ পানিতে হারিয়ে খোঁজে পাচ্ছে না। তাই চিন্তা কারলো পাচ্ছিইনা যেহেতু, এক কাজ করি দান করে যাই।
এর মানে হলো, আপনি যা অর্জণ করতে পারবেন না তা অন্যকে দান করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া।
৫৫) তিন তেরো দিয়া বারো, নয় দিয়া আইনা পূরণ করো। মোর স্বামীর এই নাম, পার কইরা দেও বাইত যাম।
মানেঃ এক মহিলা নদী পার হবে, কিন্তু মাঝি পার করে দিবেনা যদি স্বামীর নাম না বলে। কিন্তু স্বামীর নামতো মুখে নিতে মানা! তাই উপরের অংকটি করতে বল্লো।
তিন তেরো = ৩৯। দিয়া বারো ৩৯+১২= ৫১। নয় দিয়া আইনা পূরন করো। ৫১+৯ = ৬০। অর্থাৎ মহিলার স্বামীর নাম ষাইডা কাজী।
৫৬) উবুত অইলে পিঠ, আর চিৎ অইলে পেটটা ছাড়া কিচ্ছু নাই।
মানেঃ হত দরিদ্র অবস্থা।
৫৭) ধার কইরা হইলেও ঘি খাই।
মানেঃ উন্নত রুচী কিন্তু উপার্জন নাই। এই স্বভাব বড় ভয়ংকর।
৫৮) আমার শ্বশুর ওর শ্বশুর এর শ্বশুর হয়।
মানেঃ সহজ কথা প্যাঁচ মেরে বলা। মহিলার শ্বশুর যদি অন্য মহিলার শ্বশুর এর শ্বশুর হয়ে থাকেন তাহলে উনাদের মধ্যে সম্পর্ক হচ্ছে “ভাগিনা বউ”। কিন্তু সহজ কথাটি মহিলা সহজ করে না বলে ঘুরিয়ে বলেছেন।
৫৯) হার চামারের নাম কৃপাসিন্ধু / কানা বেডার নাম পদ্মলোচন।
মানেঃ অযোগ্য ব্যাক্তির নামে প্রশংসা করা।
৬০) হরির উপরে হরি হরি শোভা পায়, হরিকে দেখে হরি হরিতে লুকায়। (হরি =সাপ, ব্যাঙ, পানি)
মানেঃ পানির উপর সাপ ব্যাঙ শোভা পায়, সাপকে দেখে ব্যাঙ পানিতে লুকায়।
৬১) মা রইছে নানীর পেটে, মাইয়া গেছে নওন্যার হাটে।
মানেঃ কম বয়সে বেশী পন্ডিতি করা যা নাকি বেমানান দেখায়।
৬২) হাতে লইয়া ডেম ডেম কত দেম কত দেম
মানেঃ মাটির হাড়ি কিনা
৬৩) চুলে কি পুলা আটকায়?
মানেঃ বড় কাজের সামনে ছোট বাধা কোন বাধাই না।
৬৪) হলুদ খাইও না, হলুদ খাইলেই রাঙ্গা পুলা অয় না।
মানেঃ বেশী অহংকার দেখায়ো না।
৬৫) বাপের আগে বাঘ চিনছস?
মানেঃ বেশী পন্ডিতি না করার জন্য হুশিয়ারী করা।
৬৬) ইংলিশ পুত বাংলা মায়, ওয়াটর ওয়াটার কইয়া মরলো হায়।
মানেঃ আপনজনদের সাথে বেশী ভাব নিতে হয় না। আগের মত করে মিশতে হয়।
৬৭) ভাই এ কানা, ভাই এ কানা। আমিতো চোখেই দেখিনা।
মানেঃ অন্যের দোষ ধরাটা সহজ, কিন্তু নিজের যে এর চেয়ে বড় দোষ আছে তা মনে থাকে না।
৬৮) হগলখান দিয়া বরে, নাগাই দিয়া সরে। / সব পাখী মাছ খায়, দোষ কেবল মাছরাঙ্গার।
মানেঃ সবাই কম আর বেশ অন্যায় করে কিন্তু সব দোষ একজন এর ঘাড়েই বেশী চাপে।
৬৯) যারে দেখি নাই সে বড় সুন্দরী, যার হাতে খাই নাই সে বড় রাধুনী
মানেঃ কাছাকাছি না থাকলে মানুষ সম্পর্কে মন্তব্য করা যায় না।
৭০) কিপ্টার ধন পিপড়ায় খায়
মানেঃ বেশী কিপ্টামি যে করে সে নিজে তার সম্পত্তি ভোগ করে যেতে পারে না।
৭১) অসহ্যের গুনে সামাদ চাচা।
মানেঃ মাথা গরম হয়ে গেলে ভাইকেও চাচা ডাকে মানুষ।
৭২) পেটে খাইলে পিঠে সয়।
মানেঃ পেট ভরে খেতে যে দেয় সে একটু মারধর করলেও সহ্য করা যায়।
৭৩) সরু পেটে গরু আটে
মানেঃ চিকন লোক বেশী খেতে পারে।
৭৪) তলে জিক দিয়া কিতান কইরো।
মানেঃ এমন ভাবে কাজ করবে যেন পরে কেউ খুঁত ধরতে না পারে।
৭৫) ভাত পায় না দুধ রোজ করে!
মানেঃ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ কিনারই তৌফিক নাই, তবু দামী জিনিষ কিনার বদভ্যাস।
এমন সুন্দর কথাগুলো যেন হারিয়ে না যায়। এগুলো বেঁচে থাকুক আমাদের সাহিত্যে, দৈনন্দিন কথোপকথনে।
এতে আমারা গেঁয়ো হয়ে যাবোনা, আমাদের কথায় অলংকার বাড়বে। এ বাংলা ভাষা যেন তেন ভাষা নয়। এ ভাষায় রবীন্দ্র, নজরুল, জীবনানন্দ, জসীমউদ্দীন কথা বলতেন। এ ভাষায় আমার মা কথা বলেন। এ ভাষার সৃষ্টি পেয়েছে নোবেল।
এ ভাষা “আ- মরি বাংলা ভাষা”। এর মধ্যে অবশ্যই সৌন্দর্য্য থাকতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।