আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অপরাধী ভূত, স্বৈরাচার ভূত এবং নতুন ভূত



দেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই দুটি ভূত রয়েছে একটি হচ্ছে জামাতে ইসলাম এবং অন্যটি জাতীয় পার্টি। বড় দল দুটি নিজেদের স্বার্থেই এই ভূত দুটোকে বহুকাল যাবত ব্যবহার করে চলেছে। ভূত দুটিও নিজেদের সুবিধা মতো যখন যার ঘাড় সুবিধাজনক মনে হয়েছে তার ঘাড়ে চেপে বসেছে। যদিও বাস্তবে ভূতেরা আছে কিনা সেটা আমরা জানি না, এবং থাকলেও তারা ক্ষতিকর কিনা সেটাও আমরা জানি না, তবে বাংলাদেশের এই দুই ভূত যে ইসলাম ও গণতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর সেটা আমরা সবাই জানি। কোনো না কোনো দলকে সরবে বা নীরবে সমর্থন করি বলে এই সত্যটি আমরা এড়িয়ে চলি।

জাফর ইকবাল স্যার একবার কোনো এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন প্রথম ভূতটি দেশটাকেই স্বীকার করে না, তবে দ্বিতীয় ভূতটি অন্তত দেশটাকে স্বীকার করে। সরকারি ভার্সিটির হলে থাকার সুবাদে প্রথম ভূতটির ব্যাপারে আমার নিজস্ব কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমার এক সাবেক রুমমেট(২০০৬-২০০৮সাল) শিবিরের সাথে জড়িত ছিলো। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সে হল ছাড়তে বাধ্য হয়। একদিন পাশের রুমের এক ছেলে এসে তাকে জিজ্ঞেস করলো, শিবির তো দাড়ি রাখে না, ইসলামের বিধান অনুযায়ী দাড়ি রাখা কী উচিৎ নয়? আমার শিবির রুমমেটটির উত্তর ছিলো এ রকম ‘দাড়ি রাখা হচ্ছে লোক দেখানো কাজ, ইসলাম তো লোক দেখানো বিষয় নয়, ইসলাম হচ্ছে অন্তরের বিষয়।

‘ কত সহজেই না সে দাড়ি রাখাকে লোক দেখানো বিষয় বানিয়ে ফেললো। অথচ যে দাড়ি কিনা আমাদের নবী-রাসূলেরা আল্লাহ্‌র নির্দেশে রেখেছেন। আর একদিন অন্য এক শিবিরের কর্মীকে কেউ একজন প্রশ্ন করেছিলো ‘তুই অ্যাঙ্কেলের (বাংলায় যাকে ঘন্টা বলা হয়) নিচে প্যান্ট পরেছিস কেনো?’ শিবিরের কর্মীটি তখন উত্তর দিলো ‘আমিতো বাকি সব করছি, এটা না করলেও চলবে। ‘ আমরা ইসলামের সব নিয়ম কানুন হয়তো মেনে চলি না বা চলতে পারিনা। তাই বলে আমরা তো ইসলামকে নিজের মতো করে বানিয়ে নেই না।

যারা জামায়াত শিবিরের সাপোর্টার বা কর্মী তারা ভাবে ইসলামটা তাদের কেনা, তারা যেভাবেই বলবে সেভাবেই ইসলামের নিয়ম কানুন তৈরী হবে। তারা তাদের সুবিধা অনুযায়ী যখন যেভাবে খুশি ইসলামকে পরিবর্তন করে নেয়। এই যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের একজন কথিত আলেম দেলোয়ার হোসেন সাইদী তার ওয়াজের জন্য নাকি বিখ্যাত! আমি কয়েকজনের কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি যে সাইদী তার ওয়াজে অন্য ধর্মকে(বিশেষ করে হিন্দু ধর্মকে) কটাক্ষ করে যা বলা যায় তার সব বলে থাকেন। ওয়াজের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর জন্য যা যা করা যায় করে থাকেন। এ ধরনের কাজ কী ইসলামে নিষিদ্ধ নয়? জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী নিজেই তো নবীর দেখানো পথ ছেড়ে নিজের বানানো পথে হেঁটেছেন।

জামায়াতের ইসলাম তৈরি করেছেন(যা আমাদের ইসলাম নয়)। আমরা নিজেরাই প্রত্যক্ষ করেছি কিভাবে ঠাণ্ডা মাথায় তারা ইট দিয়ে পুলিশের মাথা থেঁতলে দিয়েছে, বোমা মেরে পুলিশের হাত উড়িয়ে দিয়েছে, ঈমানি দায়িত্বের নামে কুপিয়ে ব্লগার মেরেছে। অথচ আমাদের নবী বিদায় হজ্বের ভাষনে স্পষ্টই বলে গিয়েছেন ‘ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করোনা। ‘ এবার আসা যাক দ্বিতীয় ভূতের প্রসঙ্গে। এই ভূতটি নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই।

কারন এই ভূতটির অবস্থা বেশ নাজুক। বড় দল দুটির ইচ্ছা অনুযায়ী সে ঘাড়ে উঠে আর নামে। মাঝে আবার তার রাষ্ট্রপতি হবার খায়েশও জাগে। দুইদিন উল্টাপাল্টা বলে ধমক খেয়ে আবার চুপ মেরে যায়। তবে চিন্তার বিষয় হচ্ছে তালগাছে নতুন ভূতের আবির্ভাব।

এই ভূত কট্টরপন্থি ভূত। বড় দুই দলের রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার জন্যেই এই ভূতের জন্ম। আওয়ামী লীগ তড়িঘড়ি করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে যে রাজনৈতিক সংকটের সূচনা করেছে সেই সংকটের গর্ভে এই ভূতের জন্ম। এই রাজনৈতিক সংকট তৈরি না হলে এই ধরনের ভূতেরা সুযোগ নিতে পারতো না। তারা যুদ্ধাপরাধী ভূতের কথায় ও টাকায় নাস্তিক হটানোর আন্দোলনের নামে দেশ ব্যাপি কিনা হেলিকপ্টারে করে ইসলাম বিতরণ করলো এবং পরবর্তীতে মহাসমারোহে বায়তুল মোকাররম মসজিদ, কোরআন, অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ পুড়িয়ে ইসলাম রক্ষার দায়িত্ব পালন(ভূতের তাণ্ডব) করলো! যে কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা এতো গরিব, যারা অনেকেই কখনো ঢাকা শহর দেখেনি সেই গরিব মাদ্রাসার ছাত্রদের হুজুর হেলিকপ্টারে ঘোরার টাকা পায় কোথায়।

আবার শাপলা চত্বরের অভিযান শুরু হওয়া মাত্রই সেই গরিব ছেলেপেলেদের ফেলে রেখে হুজুরেরা ঠিকই পালিয়ে গেলেন। যে হুজুরেরা গলা ফাঁটিয়ে বলেছেন পুলিশ গুলি করলে বুক পেতে গুলি খাবেন সেই হুজুরেরাই প্রথম টিয়ার শেল পরার সাথে সাথে মাদ্রাসার ছাত্রদের ফেলে দৌড়ে পালিয়াছেন। পরিহাসের বিষয় হচ্ছে আমাদের প্রধান বিরোধী দল এই ভূতকে যথাসম্ভব আপ্যায়ন করলো। এমনকি ঢাকাবাসীকে এই ভূতের পাশে দাড়ানোর আমন্ত্রন জানালো। অথচ মজার ব্যাপার হচ্ছে তারা নিজেরাই পাশে থাকেনি।

এই ভূত যেমনি কট্টরপন্থি তেমনি কাপুরুষ। তারা ইসলাম ও দেশের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই করবে না। ইদানীং আবার তর্জন গর্জন শোনা যাচ্ছে যে তারা নাকি আবার কঠোর কর্মসূচি দেবে। প্রধান দল দুটির উচিৎ হবে এই ধরনের ভূতদের তোয়াজ না করা। কেননা সুযোগ পেলে এরা যার ঘাড়ে সওয়ার তাকেই গিলে খাবে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.