আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

১৯৪৭ সালের দেশভাগের ঐতিহাসিক কাহিনীর প্রেক্ষাপটে নির্মত চলচ্চিত্রঃ "" চিত্রা নদীর পাড়ে " "

১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের ঐতিহাসিক পটভূমির ওপর নির্মিত চলচ্চিত্র -"চিত্রা নদীর পাড়ে" । ছবিতে ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগ ও এর পরবর্তী সময়ে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের দেশ ত্যাগকে তুলে ধরা হয়েছে । কিভাবে বাঙালি হিন্দুরা নিজ দেশ হওয়া সত্ত্বেও কত কষ্ট নিয়ে শাসকশ্রেণীর অত্যাচারে নিজ দেশকে ছেড়ে যেতে বাধ্য হয় তারই পটভূমিতে নির্মিত হয়েছে ছবির মূল কাহিনী । ছবির প্রতিটি পরতে পরতে দৃশ্যগুলোতে যেন লুকিয়ে আছে বাঙালি হিন্দু সমাজের মানুষগুলোর সেই সময়ের দুঃখমাখা দিনের প্রতিচ্ছবি । কি করবে , কোথায় যাবে , নিজ দেশ ছেড়ে কোথায় যাবে তারই যেন জ্বলন্ত দৃশ্য ফুটে উঠেছে ছবির এক একটি দৃশ্যে ।

আর তা নিয়েই সামনের দিকে চলতে থাকে "চিত্রা নদীর পাড়ে" ছবির গল্প । ছবির কাহিনী গড়ে উঠেছে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ছোট্ট জেলা শহর নড়াইলকে নিয়ে , যেখানে আইনজীবী শশীভূষণ সেনগুপ্ত তার বিধবা বোন অনুপ্রভা এবং তার দুটি ছোট ছেলে-মেয়ে বিদ্যুৎ ও মিনতিকে নিয়ে চিত্রা নদীর পাড়ে থাকেন। হিন্দু সমাজের মানুষের ওপর শাসকশ্রেণীর অত্যাচার শুরু হয় । হিন্দুরা দেশ ছেড়ে এক সময় ভারতে পাড়ি জমাতে থাকে । একসময় শশীভূষণের উপরও দেশ ত্যাগের চাপ এসে পরে ।

কিন্তু বাপ-দাদার ভিটা ছেড়ে যেতে চায় না শশীভূষণ । শশীভূষণ সিধান্ত নেন পিতৃভিটা ছেড়ে অন্যদেশে যাবেন না । তিনি থেকে যান তার পিতৃভূমিতে কিন্তু তার ছেলে বিদ্যুৎ মুসলমান কর্তৃক উৎপীড়িত হয়ে জেদ ধরে সে নড়াইল থাকবে না ,চলে যাবে - কলকাতা । ফলে বিদ্যুৎকে একসময় কলকাতায় তার কাকার কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয়। বিদ্যুৎ দেশ, মাটি আর অনেকদিনের প্রিয় স্থান তার ছোটবেলার বেড়ে ওঠা শৈশবের স্মৃতি ফেলে পাড়ি জমায় কাকার কাছে কলকাতায় ।

আর দেশ ছেড়ে সেখানেই বিদ্যুত থেকে যায় । ছবির পরবর্তী কাহিনীর শুরু হয় ১৯৬৪ সালে । যখন শশীভূষণের মেয়ে মিনতি কলেজে পড়ে। তার ছোট বেলার খেলার সাথী এবং প্রতিবেশী মুসলমান বাদলের সাথে মিনতির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মিনতির মনের মধ্যে বাদল একটি স্থান করে নেয় আর অপরদিকে বাদল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গিয়ে মার্শাল’ল বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ে এবং পরে এ আন্দোলনে জড়িত থাকাকালীন সময়ে বাদল পুলিশের গুলিতে মারা যায়।

ছবির শেষদিকে এক অসম্ভব হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয় । মিনতি ভাবতে থাকে কোথায় থাকবে সে ,কলকাতা নাকি তার অনেকদিনের বেড়ে ওঠা জায়গা তার শৈশবের স্মৃতি জড়ানো প্রিয় "চিত্রা নদীর পাড়ে " । কিভাবে এ চিত্রার পাড় ছেড়ে সে থাকবে ,এরকমই এক মন ছুঁয়ে যাওয়া ছবি "চিত্রা নদীর পাড়ে " । ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৯ সালে এবং সে বছরের জন্যে ছবিটি সাতটি ক্যাটাগরিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার লাভ করেছিল। ক্যাটগরিগুলো হল- শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র, শ্রেষ্ঠ পরিচালক, , শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্য, শ্রেষ্ঠ গল্প, শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশনা, শ্রেষ্ঠ পার্শ্ব অভিনেতা ও শ্রেষ্ঠ মেকআপ।

ছবির পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল নিজেই ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন । এতে সিনেমাটোগ্রাফীর কাজ করেছেন আনোয়ার হোসনে। ছবিটিতে অভিনয় করেছেন- মমতাজউদ্দীন আহমেদ, আফসানা মিমি, তৌকির আহমেদ, রওশন জামিল, সুমিতা দেবী, আমীরুল ইসলাম এবং অন্যান্য। ছবিটিতে ফুটে উঠেছে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে ঘটে যাওয়া মর্মস্পর্শী দেশবিভাগের ঐতিহাসিক কাহিনী । যেখানে হিন্দু সমাজের মানুষের ওপর অত্যাচার এবং তাদেরকে কিভাবে নিজ স্বদেশ ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয় তা দেখানো হয় ।

আর ছবির এ গল্পকে ক্যামেরার মাধ্যমে চমৎকারভাবে ফ্রেমে বন্ধী করেছেন পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল । সেই সময়ের এ করুণ দৃশ্যগুলো একটু হলেও দর্শকদের মনে নাড়া দিয়ে যেতে পেরেছে , আর তার এক স্বার্থক কাজ করিয়ে দেখিয়েছেন পরিচালক তানভীর মোকাম্মেল ।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.