নির্বাচন কমিশনের (ইসি) মতামত ছাড়াই আরপিও (গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ) থেকে তাদের সর্বময় ক্ষমতার ধারাটি বাদ দেওয়ায় প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা উপেক্ষিত হয়েছে। রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ তৈরি রয়েছে। এর ফলে নির্বাচনে প্রভাব ও কালোটাকা ছড়ানোর অবাধ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নির্বাচনে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর অবাধ মনোনয়ন বাণিজ্য বেড়ে যাবে। আর ডিগবাজি দিয়ে প্রার্থী হওয়ার পাশাপাশি দল ভাঙা-গড়ার প্রবণতাও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন নির্বাচন বিশ্লেষকরা। সুশীল সমাজের নেতারা আরপিও থেকে দলের সঙ্গে তিন বছর বাধ্যবাধকতা না থাকার বিষয়টির কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, দলগুলো মনোনয়ন বাণিজ্য করতে এই কাজটি করেছে। এ প্রসঙ্গে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন বলেন, অরাজনৈতিক ব্যক্তি বা ব্যবসায়ীদের প্রার্থী হওয়ার সুযোগ বেড়ে যাবে। কালোটাকার মালিক ও পেশিশক্তির দৌরাত্দ্য বাড়বে। এ বিষয়ে ড. আকবর আলি খান বলেন, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও কালোটাকার মালিকদের দৌরাত্দ্য বেড়ে যাবে। নির্বাচনের আগে বড় ধরনের মনোনয়ন বাণিজ্য হবে। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচন বাণিজ্য বৃদ্ধি করতেই এ ধারাটি বাদ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দল ও ব্যক্তির অনুদান দ্বিগুণ করায় নির্বাচনে টাকার ছড়াছড়ি আরও বেড়ে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেন, আইন প্রণয়নের সর্বময় ক্ষমতা পার্লামেন্টের রয়েছে। জনগণ তাদের ভোট দিয়ে সংসদে পাঠিয়েছেন। তারা তাদের বুদ্ধিমত্তায় যেটি ভালো মনে করেন সেইটি করবেন। এ বিষয়ে ইসির কিছুই করার নেই। আরপিওর এ ধারাটি বাতিলের বিষয়ে ইসির মতামত নেওয়া হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এ বিষয়ে ইসির কোনো মতামত নেওয়া হয়নি। আমাদের সঙ্গে এ নিয়ে সরকার কোনো ধরনের পরামর্শ করেনি। ইসির অভিমত, আরপিও সর্বময় ক্ষমতার এখতিয়ার কমিশনের। তাই অত্যন্ত স্পর্শকাতর ধারাটি তুলে দেওয়ার আগে সৌজন্যতার জন্য হলেও নির্বাচন কমিশনকে জানানো উচিত ছিল। তা না করে সরকার একতরফাভাবে এটি করায় কমিশনের সক্ষমতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। এর আগে শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছিলেন, একতরফা কোনো আইনে পরিবর্তন আনা হলে বিএনপি তা মানবে না।
উল্লেখ্য, আরপিও ১২/জে ধারায় রয়েছে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন থেকে পূর্ববর্তী তিন বছরে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলে নিরবচ্ছিন্ন সদস্যপদ না থাকলে কোনো ব্যক্তি প্রার্থী হওয়ার যোগ্য হবেন না। তবে নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের জন্য এ ধারাটি প্রযোজ্য হবে না। ধারাটি বাতিল হওয়ায় রাজনৈতিক দলে নিরবচ্ছিন্ন তিন বছর সদস্যপদ থাকার কোনো প্রয়োজন হবে না। দল বদল করে যে কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। বর্তমান সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৪ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।