'সুখে থাকতে ভূতে কিলায়' বলে একটি কথা বেশ প্রচলিত। সরকারের অবস্থা দাঁড়িয়েছে তেমনই। একতরফা নির্বাচন সত্ত্বেও ৫ জানুয়ারির পর থেকে স্বস্তিতে আছেন তারা। রাজপথের আন্দোলন এখন অতীতের ব্যাপার। এমন স্বস্তিদায়ক সময়ে তারা বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে সরকারবিরোধীদের হাতে ইস্যু তুলে দিয়ে ভুল করছেন কিনা ভাবতে হবে। নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের দুই মাস না যেতেই বিদ্যুতের দাম ২৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সরকার-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর বরাত দিয়ে সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, কোম্পানি ও গ্রাহকভেদে ৬ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুতের দাম বাড়তে পারে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচের সঙ্গে বিক্রয় মূল্যের পার্থক্য থাকায় লোকসান কমাতে দাম বৃদ্ধির বিকল্প নেই এটি এক প্রতিষ্ঠিত সত্য। তবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারকে অনেক কিছুই ভাবতে হবে। বুঝতে হবে সরকার কোনো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম নয়। নিছক লাভ-লোকসানের হিসাব কষা তাদের কাজ নয়। সরকারের কর্তব্য জনগণের কল্যাণ সাধন করা। বিদ্যুতে সরকার যে ভর্তুকি দেয়, তা তাদের সেবারই অংশ। বিদ্যুতের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষকে যেমন সরাসরি বেশি পয়সা গুনতে হবে, তেমনি বেড়ে যাবে অনেক শিল্পপণ্যের দাম। পরোক্ষভাবে তার খেসারত দিতে হবে সাধারণ মানুষকেই। নীতিগতভাবে আমরা ভর্তুকি তত্ত্বের সমর্থক নই। তবে বিদ্যুতের দাম যাতে নিয়ন্ত্রণে থাকে তা নিশ্চিত করতে সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। গত পাঁচ বছরে এ ক্ষেত্রে সরকার যথেষ্ট তৎপরতার পরিচয় দিতে পারেনি। বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন থাকারও নিশ্চয়তা থাকা উচিত। বিকল্প উপায়ে বিদ্যুৎ ধরে রাখার জন্য গ্রাহকদের বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়। এ ক্ষেত্রে যে কোটি কোটি টাকা ব্যয় হয় তা জাতীয় অপচয়ের নামান্তর। এসব ক্ষেত্রে দৃষ্টি না দিয়ে, সেবার মান না বাড়িয়ে, ইচ্ছা হলেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো শুধু অনাকাঙ্ক্ষিতই নয়, ঝুঁকিপূর্ণ প্রয়াসও বটে। বিরোধী দল ঘোষণা করেছে বিদ্যুতের দাম বাড়ালে তারা প্রতিরোধে নামবেন। শহরাঞ্চলের শতভাগ মানুষের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট কোনো ইস্যু বিরোধী দলের হাতে তুলে দেওয়া উচিত হবে কিনা তা আগে থেকে ভাবতে হবে। বিরোধী দল যখন ইস্যু সংকটে ভুগছে তখন তাদের হাতে তা তুলে দেওয়া হবে অপরিণামদর্শী কাজ। দোহাই বিদ্যুতের দাম বাড়াবেন না।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।