আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাজমুল হুদার নির্বাচনী ফর্মুলা

মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রীর নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রস্তাব দুটিকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য সংলাপের যে সুবাতাস বইছে তার বাস্তব রূপ হয়তো দুই-এক দিনের মধ্যেই দেখতে পাব এবং সব জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলনে গণভবনের নৈশভোজ-পরবর্তী আলোচনার সূত্রপাত ঘটাবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এটা প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায় আর অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রীও যে সে আহ্বানে সাড়া দেবেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দুই নেত্রীর এক টেবিলে বসার এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি যে জাতির কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ তা নতুন করে ব্যাখ্যার কোনো অবকাশ রাখে না। দেশ ও জাতির স্বার্থে উভয় নেত্রীই তাদের সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন এবং তাদের পারস্পরিক উপলব্ধি যে, আলোচনাই সংকটের সমাধান খুঁজে পেতে সাহায্য করবে। এ অনুভূতিকে আমরা সাধুবাদ জানাই এবং উভয় নেত্রীকেই এ জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ এবং অভিনন্দন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব করেছেন সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকেই একটি সর্বদলীয় নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা গঠনের এবং এই লক্ষ্যে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে মাননীয় বিরোধী দলের নেত্রীকে তার মনোনীত ব্যক্তিদের নামও পাঠাতে বলেছেন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই মন্ত্রিপরিষদের প্রধান কে হবেন তা উচ্চারণ করেননি। অন্যদিকে বিরোধীদলীয় নেত্রী বিগত দুটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মধ্য থেকে ১০ জন উপদেষ্টার সমন্বয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের রূপরেখা দিয়েছেন এবং এর প্রধান কে হবেন তারও একটা দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে সংবিধানে হাত দেওয়া যাবে না। মাননীয় বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্পষ্ট কথা তার প্রস্তাব বাস্তবায়নে প্রয়োজন হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে।

একটি উপায় খুঁজতে আমাদের সংবিধানটি নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করে দেখলাম সংবিধান সংশোধন না করেই উভয় নেত্রীর ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব :

১. সংবিধানের ৫৬(১) ও ৫৬(২) অনুচ্ছেদের অনুসরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ১০০ সদস্যবিশিষ্ট একটি মন্ত্রিপরিষদ গঠন করবেন যার মধ্যে ৯০ জন হবেন সংসদ সদস্য আর বাকি ১০ জন হবেন সংসদ সদস্য নন এমন যোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে।

অত্যন্ত উদারভাবে এই মন্ত্রিপরিষদে উভয় জোটের সংসদ সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা যাবে।

২. সংসদ সদস্য নন এমন ১০ ব্যক্তির নাম সমসংখ্যায় দুই নেত্রীর পরামর্শক্রমেই মন্ত্রিপরিষদে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী মন্ত্রী নিয়োগ করা সম্ভব যদি ওই সংসদ সদস্যরা পদত্যাগ করেন।

৩. নির্বাচনকালীন এই মন্ত্রিপরিষদের প্রধান হিসেবে সর্বদলীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য হাতিয়া থেকে নির্বাচিত নির্দলীয় স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ফজলুল আজিমকে বিবেচনায় ও অনুমানে সংবিধানের ৫৬(৩) অনুচ্ছেদ অনুসরণে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মহামান্য রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন।

৪. নিয়োগের এক সপ্তাহের মধ্যে সংবিধানের ৫৭(২) অনুচ্ছেদ অনুসরণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফজলুল আজিমের পরামর্শক্রমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেবেন।

৫. সংসদ ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংবিধানের ৫৭(১) (খ) উপ অনুচ্ছেদ মতে নবনিযুক্ত স্বতন্ত্র প্রধানমন্ত্রীর পদ শূন্য হবে।

৬. সংসদ ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংবিধানের ৫৮ (১) (খ) মতে সংসদ সদস্য নহেন এমন মন্ত্রী ছাড়া অন্য সব মন্ত্রীর পদ শূন্য হবে।

৭. সংবিধানের ৫৮ (১) (খ) দফা মতেই মন্ত্রিপরিষদের সংসদ সদস্য নহেন এমন উপরোক্ত ১০ জন মন্ত্রী তাদের স্ব স্ব পদে বহাল থাকবেন।

৮. মহামান্য রাষ্ট্রপতি পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য মাননীয় স্বতন্ত্র প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব চালিয়ে যেতে বলবেন এবং অন্য ১০ জন মন্ত্রীর সমন্বয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করবেন। স্বতন্ত্র প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের ১০ জন মন্ত্রীর মধ্যে নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য দায়িত্ব বণ্টন করবেন।

৯. নির্বাচন-পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদের অবসান হবে। দুই নেত্রীর এক টেবিলের আলোচনার জন্য এই রইল আমার সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব যার বাস্তবায়নে সংবিধান সংশোধনের কোনো প্রয়োজন হবে না।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.