সুন্দর বাংলাদেশ চাই
কোথায় তুমি?
ছাদে।
এতো রাতে ছাদে কেন? আজ তো আকাশে চাঁদ নেই। অমাবশ্যা চলছে। চারদিকে অন্ধকার।
তাতে কি হয়ছে।
আলোকে ভালোবাসা গেলে অন্ধকার কে কেন যাবে না?
এখানে ভালোবাসার কথা আসছে কেন? অনেক রাত, বাড়ির সবাই নিশ্চয় ঘুমিয়ে। এইজন্য বলছিলাম।
সমস্যা নেই। আমি কালো। অন্ধকারে আমি মিশে যেতে পারি।
আপনি ফর্সা তো, এইজন্য আধার ভালোবাসেন না।
এইভাবে কথা বলছ কেন? তুমি এভাবে বললে আমাকে খুব দূরের মানুষ মনে হয়।
সবসময়-ই তো দূরে ছিলেন। কাছে আসতে পারেননি কখনো। এখনো তো দূরেই আছেন।
অনেক দূরে।
এসব কি বলছ, কাছে ছিলাম না মানে। এতগুলো বছর একসাথে ছিলাম আমরা। তারপরেও বলছ দূরে। কেন? তোমার কেন এমন মনে হচ্ছে?
হুম কাছেই ছিলেন।
তবে একই বাড়িতে, একই ঘরে, একই বিছানায়। বিয়ে করেছিলেন পরিবারের চাপে পড়ে। দূরত্ব ছিল সবসময়ই। বেড়াতে যেতে নিতেন না। কারন আমি আপনার বন্ধসমাজে মানিয়ে চলার অযোগ্য।
আমি কালো, অশিক্ষিত আর মোটামুটিভাবেও সামাজিক না।
তোমার কথা ঠিক আছে। কিন্তু কেন তোমাকে সাথে করে নেই নাই? তার বড় কারন তুমি জানো না। ওখানে নেওয়ার পরে আমার বন্ধুরা তোমাকে নিয়ে হাসি তামাশা করুক সেটা আমি চাইনি। কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি।
তোমার কিসে কষ্ট হবে সেটা আমি বুঝি।
আমাকে ভালোবাসেন। এটা শুনে খু্ব হাসি পেল। যাহোক রাতে খেয়েছেন?
হ্যা খেয়েছি। অনেক রাত হয়েছে।
ঘরে গিয়ে ঘুমাও।
আচ্ছা ঠিক আছে। আপনিও ঘুমান। আমার এখান থেকে বেশি রাত এখন আপনার ওখানে।
হ্য।
ঠিক আছে সকালে কথা বলব। নিজের যত্ন নিও। আল্রাহ হাফেজ।
আল্লাহ হাফেজ।
লাইন কেটে দেওয়ার পরে ছাদে-ই দাড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ।
নিরব, নিঃস্তব্ধ রাত। ঘন আধারে নিজের হাতের তালুও দেখা যায় না। অন্ধকারকে আমার ভালো লাগে সেদিন থেকে যেদিন থেকে আমি এ বাড়িতে পা রেখেছি। কারণ আমি কালো। পড়াশোনা না জানা এক আধারে ঘেরা মানুষ।
আর আমার স্বামী একজন শিক্ষিত, আধুনিক রূচিশীল মানুষ। দু’জনের মধ্যে অনেক ব্যবধান। সব-ই ঘুচে যেত যখন সে ঘরে থাকতো। যেন তার মত একজন প্রেমিক পুরুষ দুনিয়াতে আর একটিও নেই। আমার পড়াশোনা নিয়ে তার মধ্যে একটু এলার্জি থাকলেও, গায়ের রং নিয়ে সে কখনো কথা বলেনি।
আমি কখনো এ প্রসঙ্গে কিছু বললে সে বলতো, তুমিতো পোড়ামাটি। পুরোদমে বাঙালী মেয়ে। আমেরিকান তো না।
আমাদের ভালোবাসা, ভালো লাগার মূহুর্তগুলো একবছরের মত স্বপ্নের আবেশে পরিপূর্ণ ছিল। একবছর পর থেকে ওর মাঝে পরিবর্তন শুরু হয়।
চাকরি, পড়াশোনা আর পরিবার। এই তিনটা জিনিস ওকে তিনদিক থেকে টানা শুরু করে। আমি বুঝি। কিন্তু কিছু বলতে পারি না। বাতলে দিতে পারি না কোন পথ।
জীবনে একটা পর্যায়ে পারিবারিক টানাপোড়েন এর কারণে ও পড়াশোনাটা শেষ করতে পারেনি। কিন্তু শেষ করার একটা তীব্র আকাঙখা আছে ওর মধ্যে। কিন্তু সেটা করতে গেলে ওর চাকরি ছাড়তে হবে। আর চাকরি ছাড়লে পরিবার অভুক্ত থাকবে।
ওর এই ত্রি-সংকটের মাঝে আমি আরেক নতুন সংকট।
ভাত-কাপড় ও যতদূর পারছিল ততদূরই দেয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু হটাৎ করে ওর মাঝ থেকে এক বছর আগেকার মানুষটাকে যে হারিয়ে ফেলেছি, তাকেই তো খুঁজে পাচ্ছিনা।
রাত জেগে ইন্টারনেটে পড়ে থাকে। সারাদিন অফিস। সন্ধ্যায় টিউশনি।
উইকেন্ড এ ক্লাশ করে। বিকালে বন্ধুদের সাথে আড্ডা। আমার জন্য ওর কোন সময় নেই। সারাদিন ঘরে টিভি দেখে আর রান্না বান্না করেই দিন পার।
হটাৎ একদিন বলল চাকরি ছেড়ে বিদেশ চলে যাবে।
পড়াশোনা করতে। এরপরে অনেকদিন চলে গেল। ও দেখি চুপচাপ । ভাবলাম। বিদেশ যাওয়ার ভুৎ মনে হয় নেমেছে।
আবার ভাবতাম, ওতো হুজুগে না। আজগুবি কথা বলে না। কারণ চাকুরি হওয়ার দুই-দিন পরে সবাইকে জানিয়েছিল ওর চাকরি পাবার খবরটা। আমি জানতে চাইলে বলেছিল, পুরোপুরি কনফার্ম না হয়ে বললে, পরে কোন সমস্যা হলে সবাই আমাকে অন্য চোখে দেখবে।
একদিন রাতে ঘুমিয়ে ছিল।
রাত বারোটারও পরে কা্র ফোন পেয়ে উঠে ল্যাপটপ চালু করলো। কিছুক্ষণ পরে বলল আমার বিদেশ যাওয়া কনফার্ম।
দেড় মাসের মাথায় চলে গেল। এয়ারপোর্টে বিদায় জানাতে গিয়ে দেখেছিলাম ওর চোখের কোথাও আমি নেই। আমিও নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলাম নিজের মধ্যে।
এয়ারপোর্টে অনেক কে কান্নাকাটি করতে দেখলাম। আমার হাসি পাচ্ছিল দেখে। হায়রে প্রেম।
আশেপাশের অনেককে দেখেছি আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটলে চরিত্র বদলে যায়। পুরুষের ক্যারিয়ার আর নারীর ফিগার।
এই দুইটা জিনিস একে অন্যের পরিপুরক। আমার স্বামী বিদেশ যাচ্ছে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে। হয়তো কোন ভালো ফিগার এর মেয়ের জন্য এমন ক্যারিয়ার ওয়ালা ছেলের দরকার। আমার জন্য তাকেই দরকার যে আমাকে ভালোবাসবে। কাছে থাকবে।
হয়তো সে কোন দিনমজুর।
ও চলে যাওয়ার পরে আমার জীবনটা আরো বেশি একাকী হয়ে গেছে। গায়ের রং আরেকটু কালো হয়েছে। মনটাও। নিস্তরঙ্গ আর শীতল জীবন যাপন।
দিনে সে কমপক্ষে ৫ বার ফোন দেয়। স্কাইপে কথা বলে। অনেকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে সে আমাকে ভালোবাসে। অনেক। আমি জানি তার মধ্যে চাতুর্য আছে, কিন্তু অসততা নেই।
দুষ্টুমি আছে, কিন্তু নোংরামী নেই। কিন্তু সেটা পাল্টাতে কতক্ষণ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।