আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

তুলির স্কুলঘর

নিরপেক্ষ নই; সত্য, ন্যায় ও স্বাধীনতার পক্ষেই আছি

নবাবপুর হাইস্কুলে যখন ছুটির ঘন্টা বেজে ওঠে, সূর্য তখন মধ্যগগনে। বেলা বারোটা। এটা কোনোভাবেই স্কুল ছুটির সময় নয়, তবুও স্কুল ছুটি হয়ে গেছে। স্কুলের ছেলে-মেয়েরা অবাক হয়ে একমুহূর্ত ঘন্টার শব্দ শুনে, পরক্ষনেই আনন্দে মেতে ওঠে। স্কুল ছুটি হলে কি এক অজানা কারনে সব ছেলে মেয়েরাই খুব খুশি হয়ে পড়ে।

গত সব দিনের মতো আজো তারা মুক্তির আনন্দে ছুটোছুটি করতে থাকে। শুধু তুলি একটু ব্যতিক্রম। অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী ও। এই অসময়ে স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ায় ও খুবই অবাক হয়েছে। স্কুল ছুটি হলে সেও আনন্দ করে তবে আজ করছে না।

ক্লাসের সব ছেলে-মেয়ে বেরিয়ে যায়। তুলি দেখতে পায়, তাদের শ্রেনী শিক্ষক ফকরুল হাসান বিষন্ন মুখে তাঁর চেয়ারে বসে আছেন। তুলি ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে তাঁকে জিজ্ঞেস করে, 'স্যার, স্কুল ছুটি হলো কেন?' তিনি একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে এর জবাব দেন, 'জানি না। ' তুলি বেরিয়ে এসে দেখতে পায় সব ছেলে-মেয়েরা বাড়ি ফিরে গেছে। সে তার বই খাতা হাতে নিয়ে স্কুলের সামনের মাঠ দিয়ে হাঁটতে থাকে।

স্কুল নিয়ে তুলির একটা স্বপ্ন আছে। সে স্বপ্ন দেখে পড়াশোনা করে সে একদিন বড় কিছু একটা হবে, ডাক্তার ইন্জিনিয়ার বা এইরকম কিছু। তুলি মাঠ ছেড়ে রাস্তায় এসে পড়ে। রাস্তার মোড়ে একটা চায়ের দোকানে কিছু লোক বসে আছে। তাদের মধ্যে জমির মোল্লাও আছে।

জমির মোল্লা গ্রামের মাতব্বর শ্রেনীর একজন লোক। তুলি লোকটাকে পছন্দ করে না। কারণ লোকটার দৃষ্টি ভালো না। ও যখন হেঁটে যায় লোকটা ড্যাবড্যাব করে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। আজও সে সেইভাবে তাকিয়ে আছে।

তুলি তার তোয়াক্কা না করে দোকানের সামনে দিয়ে হেঁটে চলে আসে। তুলি মনে মনে ঠিক করে, আজ সে বাড়ি ফিরে যাবে না। আজ সে গ্রামটা একটু ঘুরে দেখবে। তুলি তার গ্রামকে খুব ভালোবাসে, গ্রামের মানুষগুলোকেও। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে গ্রামে যেন কিছু একটা ঘটে চলেছে।

রাস্তার মোড়ে, চায়ের দোকানে, বাসা-বাড়িতে সবখানে কিছু একটা নিয়ে আলোচনা হয়, তুলি সেগুলো বোঝার চেষ্টা করে। তুলির বাবা কিছু লোককে সাথে নিয়ে রাত জেগে উঠোনে বসে রেডিও শোনেন। তুলি তার ঘরে শুয়ে শুয়ে রেডিওর কথাগুলো শোনার চেষ্টা করে। প্রায় সব কথাই ইংরেজীতে বলা হয়, তুলি তাই কিছুই বুঝতে পারে না। তবুও কয়েকটা শব্দ বারবার ওর কানে আসে, যেমন- 'পাকিস্তান, 'শেখ মুজিব', 'বাংলাদেশ' এসব।

তুলি মাঝেমধ্যে বাবাকে প্রশ্ন করে, 'বাবা, শেখ মুজিব কে?' বাবা হাসিমুখে উত্তর দেন, 'শেখ মুজিব আমাদের নেতা, মা। ' তুলি সেসব কথার কিছুই বোঝে না। যা হয় হোক, ওর এসব ভাবনা নেই। সে এখন রাস্তা ছেড়ে একটা ধানক্ষেতে নেমে আসে। তুলি হঠাৎ করেই দৌড়তে শুরু করে, দৌড়তে দৌড়তে সে ধানক্ষেতের মাঝখানে এসে পড়ে।

হাঁপিয়ে উঠে ঘন ঘন শ্বাস নিতে থাকে। তারপর বড় করে দম নেয়, হুট করেই সে গলা ছেড়ে জোরে একটা চিৎকার করে ওঠে। ওর সেই চিৎকারের ধ্বনিটা দূরের গাছপালাগুলোতে বাড়ি খেয়ে আবার ওর কাছেই ফিরে আসে। তুলি মাঝেমধ্যে এই কাজটা করে। এরকম খোলা মাঠে দাঁড়িয়ে চিৎকার করলে দূর থেকে তার প্রতিধ্বনি ভেসে আসে।

মনে হয় ওপাশের গাছপালাগুলোর আড়ালে আরেকটা তুলি বাস করে। তুলি যখন চিৎকার করে তখন সেও চিৎকার করে। বারো-চৌদ্দ বছরের কিশোরী তুলি এই কাজটা করে এক অদ্ভূত আনন্দ খুঁজে পায়। ওভাবে আরো দু'একটা চিৎকার দিয়ে ও দূরের গাছ-পালাগুলোর দিকে ছুটে যায়। দেখতে দেখতে ঝোপঝাড় মাড়িয়ে সে গাছ-গাছালির মাঝে ঢুকে পড়ে।

কাছেই মিঞাবাড়ি। এই বাড়িতে তুলির এক খালা থাকেন। আপনখালা না হলেও তিনি তুলিকে খুব আদর করেন। তুলিও তাকে ভীষন পছন্দ করে। ওর জন্মের পরপরই মা মারা যায়,তখন এই খালাই তুলিকে কোলে তুলে নেন।

তুলি প্রতিদিন এ বাড়িতে একবার করে আসে, খালার আদর পেতে। খালা আজ বাড়ি নেই। শুনে তুলির মনটা কিছুটা খারাপ হয়ে যায়। সে ফিরে যাবে এই সময় গাছ-গাছালির ফাঁকে দুই গাছের মাঝখানে একটা দোলনা বাঁধা দেখতে পায়। তুলি আস্তে আস্তে দোলনার কাছে এসে পড়ে, তারপর দোলনায় চড়ে বসে।

দোলনা দুলে ওঠা মাত্রই হঠাৎ ওর মনটা ভালো হয়ে যায়। সে আয়েশ করে দোল খেতে শুরু করে। দোল খেতে খেতে সে গুনগুনিয়ে একটা গান গায়। তুলির মন যখন ভালো থাকে তখন সে এইভাবে গুন গুন করে গান করে। তুলি খুব ভালো গান গাইতে পারে।

গাছের ফাঁকে ফাঁকে অচেনা অজানা পাখিগুলোও গান করে, তুলি গান গাওয়া শুরু করলে ওরা থেমে যায়। যেন ওরাও মুগ্ধ হয়ে তুলির গান শুনতে থাকে। তুলি অনেকক্ষণ দোলনায় দুলে একসময় নেমে আসে। মাটিতে রাখা ওর বইখাতাগুলো তুলে নিতে ভুলে না। বইখাতাগুলো হাতে নিয়ে তুলি হাঁটতে শুরু করে।

হাঁটতে হাঁটতে সে কমলদের বাড়ি এসে পড়ে। কমলদের বাড়িতে মস্ত বড় একটা ফুলের বাগান আছে। বাগানটা তুলির খুব প্রিয়। বাগানে অজস্র সব ফুল ফুটে থাকে। তুলি সুযোগ পেলেই কমলদের বাগানে আসে।

চুপি চুপি বাগানে ঢোকে। ফুলগাছগুলোর মাঝে লুকিয়ে পড়ে। বুক ভরে হরেকরকম ফুলের সুবাস নেয়। মাঝেমধ্যে দু'একটা ফুল ছিঁড়ে হাতে নেয়। তারপর যেমনি এসেছিল তেমনি আবার চুপি চুপি চলে যায়।

আজো ও লুকিয়ে লুকিয়ে বাগানে ঢোকে। ফুলগাছগুলোর মাঝে হারিয়ে যায়। ফুলের গন্ধ শুঁকে বেড়ায়। প্রজাপতি আর মৌমাছিরা ওকে ফুলকুমারি ভেবে ওর চারপাশে ঘুরঘুর করতে থাকে। কি মনে করে তুলি একটা ফুল ছিঁড়ে আজ,তারপর চুলের বেণীটা খুলে একটা খোঁপা করে আর সেই ফুলটা খোঁপায় গুঁজে দেয়।

কাজটা করেই আপনমনে হেসে ওঠে তুলি। তারপর আরো কয়েকটা ফুল ছিঁড়ে বই-খাতাগুলো হাতে নিয়ে টুপ করে বেরিয়ে আসে বাগান থেকে। তুলিদের গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে একটা নদী। দিনের বেলায় সূর্যের আলোয় রূপোর মতো চিকচিক করে নদীর পানিগুলো। আর বিকেলশেষে লাল-কমলা মিশ্রিত এক অপূর্ব রঙের বড় বড় সব ঢেউয়ে ভরে ওঠে নদীটা।

তুলি ওর প্রিয় এই নদীটার পাড়ে এসে দাঁড়ায়। নদীর ওপারে ধানক্ষেত আর গাছ-গাছালি। তার ওপারে সূর্য। সূর্যটা কমলা রঙ ধারণ করে আছে। লাল হবে একসময়।

তারপর ডুবে যাবে। তুলি কিছুক্ষণ আনমনা হয়ে সূর্যের পানে চেয়ে থাকে। নদীর পানিতে বড় বড় ঢেউ তৈরী হয়েছে। জোয়ারের সময় যেমনটা হয়। নদীতে একটা পাল তোলা নৌকা চলছে।

হু হু করে বাতাস বইছে। বাতাসে তুলির চুলগুলি এলোমেলো হয়ে যায়, চোখের পাঁপড়ি কাঁপে। তুলি বিকেলবেলা যখনই নদীর পাড়ে আসে তখনই সে আনমনা হয়ে যায়, মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পড়ে। কি এক অজানা কারণে সে নদীর প্রতি এক গভীর টান অনুভব করে। তুলি তার মাকে কোনদিন দেখেনি, পায়নি মায়ের ভালোবাসা।

সারাদিন মায়ের কথা খুব একটা মনে না পড়লেও, যখনই ও নদীর পাড়ে এসে দাঁড়ায় তখনি ওর মায়ের কথা মনে পড়ে । এক অন্যরকম অনুভূতি তৈরি হয় ওর বুকের ভেতরে। নদীর ওপারে সূর্যটা একসময় ডুবে যেতে শুরু করে। একঝাঁক পাখি উড়ে চলে যায়, ফিরে যায় নীড়ে। পাখিদের নীড়ে ফিরতে দেখে তুলির হঠাৎ করেই নিজের বাড়ীর কথা মনে পড়ে যায়।

সারাদিনে বাড়ি ফেরা হয় নি। বাড়ি ফিরতে হবে। নইলে বাবা চিন্তা করবেন। বাড়িতে তুলির বাবা আর বড় ভাইয়া থাকেন। বড় ভাই জেলা সদরের একটা কলেজে পড়েন।

বাবা স্থানীয় আমিনবাজারে অনেকগুলো দোকান আছে। সারাদিন ব্যবসায়ের কাজে ব্যস্ত থাকেন। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরেন। বাড়ি ফিরে তুলিকে না দেখলে অস্থির হয়ে পড়বেন তিনি। তুলি নদীর পাড় থেকে ফিরে আসে।

রাস্তায় এসে উঠে। রাস্তার মোড়ে দু'টো দোকান। দোকানগুলোর ভেতরে কিছু লোক খুব উত্তেজিত হয়ে কিছু একটা নিয়ে আলোচনা করছে, সবসময় যেমন করে। তুলি সেসব খেয়াল করে না। সে দোকানগুলো পেরিয়ে সামনে এগিয়ে যায়।

এমনসময় সামনে থেকে হঠাৎ একটা লোক ছুটে আসে, চিৎকার করে চলতে থাকে, 'মিলিটারি আইসা পড়ছে! মিলিটারি আইসা পড়ছে! পালাও সবাই! এই কথা শুনে দোকানের ভেতরে থাকা লোকগুলো বেরিয়ে আসে, কয়েকজন হায় হায় করে ওঠে। তুলি অবাক হয়ে দ্যাখে, লোকগুলো প্রানপনে দৌড়ে পালিয়ে যেতে থাকে। মিলিটারি কি জিনিস? তুলি নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে। মিলিটারি নাম শুনে ওরা সবাই ভয়ে পালিয়ে গেল কেন? ওর ভেতরে একটা আতঙ্ক তৈরী হয়... কৌতুহলও হয় ভীষণ! তুলিদের বাড়ি আরো কিছু দূর সামনে। ও তাই এগিয়ে যেতে থাকে।

পথিমধ্যে রাস্তা দু'ভাগ হয়েছে। একরাস্তা ধরলে তুলিদের বাড়ি যাওয়া যায়, অন্যরাস্তটা সোজা গিয়ে উঠেছে পাকারাস্তায় যেটা হল গ্রাম থেকে বেরুবার পথ। তুলি হঠাৎ আজ কি মনে করে অন্য রাস্তাটা ধরে বসল, কৌতুহলের বসেই হয়তো বা। রাস্তাঘাট অস্বাভাবিক রকমের নীরব। এতটা নীরব থাকার তো কথা নয়।

ওর কেমন যেন ভয় ভয় করতে থাকে। তুলি পাকারাস্তার কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। হঠাৎ কিছু একটা দেখে ও পাশের ঝোঁপঝাড় গুলোর মাঝে লুকিয়ে পড়ে। তারপর আস্তে আস্তে মাথা তুলে দেখতে পায়, পাকারাস্তায় অনেকগুলো গাড়ি দাঁড়িয়ে। সামনে তিনটা জিপ, আর পেছনে চারটা ট্রাক।

গাড়িগুলোর কাছাকাছি অদ্ভূত পোশাকপরা কতগুলো লোক দাঁড়িয়ে আছে। লোকগুলোর হাতে কিছু একটা আছে, ভারী কিছু একটা। আবছা আলো-অন্ধকারে সে ভালো করে বুঝতে পারে না। তুলি আরো ভালো করে খেয়াল করে। হঠাৎ করেই সে জিনিসগুলো চচিনতে পেরে যায়।

বন্দুক! তুলির বুকের ভেতরটা এক অজানা আতঙ্কে কেঁপে ওঠে। তুলি ক্লাস এইটে পড়ে। সে খুব ভালো করেই জানে এই জিনিসগুলো দিয়ে মানুষ মারা হয়। ভয়ঙ্কর পোশাকপরা এই লোকগুলো যারা কিনা মানুষ মারার অস্ত্র হাতে গ্রামের ভেতরে ঢোকার অপেক্ষায় আছে, এরাই বোধহয় মিলিটারি। তুলি বুঝতে পারে, কেন দোকানের ভেতরে থাকালোকগুলো মিলিটারির নাম শুনে ছুটে পালিয়ে গেল।

তুলি দু'পা পিছিয়ে আসে এবং একমুহূর্ত দেরী না করে ঘুরে দৌড় দেয় ঝোপঝাপের ভেতর দিয়ে। দৌড়তে দৌড়তে তুলি রাস্তা যেখানে দু'ভাগ হয়ে গিয়েছিলো সেখানে ফিরে আসে। তারপর নিজেদের বাড়ির দিকে যে রাস্তাটি গিয়েছে সেটি ধরে। তুলি যখন ওদের বাড়ির কাছাকাছি চলে আসে তখন সন্ধ্যা শেষ হয়ে গেছে। চারিদিকে অন্ধকার নেমে আসে।

হঠাৎ করেই সে অনেকগুলো মানুষের হইচই আর আর্তনাদ-আহাজারি শুনতে পায়। তুলির বুকের ভেতরটা ধ্বক করে ওঠে। সে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে এমনই এক দৃশ্যের ভয়াবহতা কিশোরী তুলির ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক কখনো কল্পনা করতে পারে নি। প্রচন্ড ভয়ে ও শিউরে ওঠে। তুলিদের বাড়ির সামনে যে কয়টা বাড়ি আছে, সেগুলোতে আগুন লেগেছে।

দাউদাউ করে জ্বলছে আগুন। আগুনে ঘরের চাল-বেড়া সব পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। ওদের প্রতিবেশী আবুল মিয়ার দুইবছরের বাচ্চা ছেলেটা মাটিতে পড়ে চিৎকার করে কাঁদছে। তুলি আলেয়া বুবুর কান্না শুনতে পায়। কিন্তু তাকে দেখতে পায় না।

উঠোনে অনেকগুলো মানুষ ছুটোছুটি করছে। কয়েকজন চেঁচিয়ে বলছে, 'জ্বালাইয়া দাও, পুড়াইয়া দাও!' তুলি ওদের বাড়িটা দেখতে পাচ্ছে না। ওদের বাড়িতেও কি আগুন লেগেছে? ও ছুটে যায় সামনের দিকে। এই বাড়ির পেছনেও তুলিদের বাড়ি। ওদের বাড়ির এখন কি অবস্থা? বাবা কোথায়? ভাইয়া কোথায়? কেমন আছে ওরা? তুলি ছুটছে, এইসময় অকষ্মাৎ কেউ একজন পেছন থেকে জাপটে ধরে ওকে।

তুলি নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা করে, পারে না। কানে আসে লোকটর বিচ্ছিরি হাসির শব্দ। লোকটাকে চিনে ফেলে তুলি। জমির মোল্লা। সেই বাজে লোকটা।

তুলি জমির মোল্লার হাত থেকে নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করে যায়। শেষে উপায় না দেখে সে জমির মোল্লার হাতে একটা কামড় বসিয়ে দেয়। জমির মোল্লা একটা আর্তনাদ করে দু'পা পিছিয়ে পড়ে। ছাড়া পেয়ে তুলি প্রায় ছুটে যাচ্ছিল। সেইসময় হঠাৎ ভারী কিছু একটা পেছন থেকে তুলির মাথায় আঘাত করে।

তুলি সাথে সাথে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। সবকিছু অন্ধকার হয়ে আসে। --------------------------------------- তুলির জ্ঞান ফেরে একসময়। ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায় ও। কোথায় আছে বুঝতে পারে না।

উঠে বসে তুলি। বুঝতে পারে একটা ঘরের মধ্যে আছে সে। ঘরে আরো চার পাঁচটা মেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। তুলি এখানে কিভাবে এল বুঝতে পারছে না। মনে করার চেষ্টা করে সে।

কিন্তু কিছুই এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না তুলির। মাথার ভেতরে একটা ভোঁতা ব্যথা হচ্ছে। হঠাৎ করেই তুলি এই ঘরটা চিনতে পেরে যায়। আরে এটাতো তুলির স্কুলঘর। ক্লাস এইটের পাঠদানকক্ষ।

ঘরটায় একটা পরিবর্তন হয়ছে। কোন বেঞ্চ নেই। শুধু এককোণে চেয়ার টেবিল রাখা হয়েছে। তুলি আর অন্য মেয়েগুলো মেঝেতেই পড়ে আছে। দরজা আটকানো।

নিজেকে স্কুলঘরে দেখতে পেয়ে তুলির মনে স্বস্তি ফিরে আসে। স্কুলকে অনেক ভালোবাসে তুলি। স্কুল নিয়ে তুলির একটা স্বপ্ন আছে। পড়াশোনা করে একদিন অনেক বড় কিছু একটা হবে ও। কিন্তু তুলি জানে না, ওর এই স্বপ্ন আর কোনদিন পূর্ণ হবে না।

যে স্কুলঘর নিয়ে তুলির এই স্বপ্ন, সেই স্কুলঘরেই ওর স্বপ্নগুলোর মৃত্যু ঘটবে। আজ থেকে একটু একটু করে ওর সব স্বপ্ন মরে যাবে, হারিয়ে যাবে। তুলি জানে না, কি দুঃস্বপ্নময় কি বীভৎস দিন-রাত কাটাতে হবে ওকে এই স্কুলঘরে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পৈশাচিক বর্বরতায় ছিনিয়ে নিয়ে যাবে ওর বুকের সব স্বপ্ন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.