রাজধানীর মতিঝিল থানার পৃথক দুটি পুরনো মামলায় বিএনপি নেতা মওদুদ আহমদ, রফিকুল ইসলাম মিয়া, এম কে আনোয়ার, আবদুল আউয়াল মিন্টু ও শিমুল বিশ্বাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে কারাবিধি অনুযায়ী তাদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও মর্যাদা দিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মামলার রিমান্ড ও জামিনের বিষয়ে শুনানির জন্য ১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করা হয়েছে। গতকাল বিকালে শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম জয়নব বেগম এ আদেশ দেন।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার এবং ঢাকার আদালতের পুলিশ প্রধান আনিসুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, গাড়ি ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ ও পুলিশের ওপর হামলার ঘটনার দুটি মামলায় মতিঝিল থানার এসআই জাহিদ হোসেন ও মিজানুর রহমান বিএনপির পাঁচ নেতাকে ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিন করে মোট ২০ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। এ সময় নেতাদের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিনের আবেদন করেন। মামলার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় শুনানি শেষে আদালত রিমান্ড ও জামিনের বিষয়ে শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য করেছেন।
আদালতের পরিবেশ : গতকাল সকাল থেকেই আদালত এলাকায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের চেম্বারে আসতে শুরু করেন। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরান ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের সামনের রাস্তায় অনেক নেতা-কর্মী জড়ো হন। তারা মুহুর্মুহু স্লোগানে পুরো এলাকা প্রকম্পিত করে তোলেন। এ কারণে সকাল ১০টার পর থেকে রায় সাহেববাজার মোড়সহ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। বিএনপির কর্মী ও বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমর্থনে ও হরতালের পক্ষে স্লোগান দেন। তারা আটক নেতাদের মুক্তি ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানান।
অন্যদিকে আদালত এলাকায় সকাল থেকেই পুলিশ কড়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়। মোতায়েন করা হয় বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিপুলসংখ্যক সাদা পোশাকের অতিরিক্ত পুলিশ। আদালত এলাকায় সাধারণ মানুষের চলাচলও সীমিত করা হয়। সন্দেহভাজনদের ব্যাগ ও শরীর তল্লাশি করা হয়। এর আগে গতকাল সকালে আদালতপাড়ায় পর পর তিনটি হাতবোমার বিস্ফোরণও ঘটে।
পুলিশের সঙ্গে আইনজীবীদের ধাক্কাধাক্কি : বিএনপি নেতাদের বহনকারী প্রিজন ভ্যান ঢাকা মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত চত্বর ত্যাগ করার সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবী ও পুলিশের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। এ অবস্থা ১০ মিনিট ধরে চলতে থাকে। এ সময় পুলিশ আইনজীবীদের ওপর চড়াও হয়। পরে বিএনপিপন্থি শতাধিক আইনজীবী ফের পুলিশের সঙ্গে আবারও ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। তবে বিএনপিপন্থি সিনিয়র আইনজীবীদের হস্তক্ষেপে বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিএনপি নেতাদের পক্ষে আদালতে ছিলেন ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জে মোহাম্মদ আলী, সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকারসহ পাঁচ শতাধিক আইনজীবী। শুনানিতে আদালতকে আইনজীবীরা বলেন, এ মামলার কোনো সত্যতা নেই। পৃথিবীর অনেক দেশের বিচারব্যবস্থায় অভিযোগ করার পরে মামলা প্রমাণযোগ্য কি না আদালতে আসার আগে তা যাচাই করা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে এ রকম ব্যবস্থা নেই। তাই জামিনের আবেদন করছি। এ মামলায় বর্ণিত অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করার জন্য। এ ছাড়া মামলার ঘটনা সাজানো ও বানোয়াট। এ মামলায় আসামিরা ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। তাদের বিরুদ্ধে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগও নেই। মামলার আসামিরা দেশের বিশিষ্ট ও সম্মানিত ব্যক্তি। শুনানিতে খন্দকার মাহবুব হোসেন বিচারককে বলেন, পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে স্পিকারের অনুমতি ছাড়া কোনো এমপিকে গ্রেফতার করা হয় না। এমপিকে গ্রেফতার করতে হলে অবশ্যই স্পিকারের অনুমতি নিতে হয়। অথচ মওদুদ ও আনোয়ার সাহেবকে সাধারণ নাগরিকের মতো রাস্তা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পিপি আবদুল্লাহ আবু, ঢাকা জেলা জজ আদালতের পিপি খন্দকার আবদুল মান্নান, অতিরিক্ত পিপি মাহফুজুর রহমান লিখনসহ প্রায় ২৫ জন আইনজীবী। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে আদালতে রিমান্ড চেয়ে শুনানিতে বলা হয়, আসামিদের পরিকল্পনায় ১৮-দলীয় জোট নেতারা নিরীহ মানুষকে হতা করছেন। সরকারি ও বেসরকারি সম্পত্তি ধ্বংস করে চলেছেন। ১৮-দলীয় জোট নেতারা পুরো দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে চলেছেন। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, সরকারি ও বেসরকারি সম্পদ ধ্বংস এবং মানুষের প্রাণহানি করতে আসামিদের কী ধরনের পরিকল্পনা আছে তা জানতে তাদের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া হত্যার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত বিস্ফোরক উপাদানের বিস্তারিত তথ্য জানতেও তাদের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন।
মামলার অভিযোগ : মতিঝিল থানায় দায়ের করা ১৬(১১)১৩ নম্বর মামলার বাদী হলেন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এএসআই) এ কে এম আজিজুল হক। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা একই থানার উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মিজানুর রহমান। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ৫ নভেম্বর ১৮-দলীয় জোটের ডাকা টানা ৬০ ঘণ্টার হরতালে কমলাপুর বাজারের নিউ বেকারির সামনে জোটের নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ করেন এবং তাদের কাজে বাধা দেন। এতে পুলিশের তিন সদস্য আহত হন। এ মামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে মওদুদসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া ৪৪(৯)১৩ মামলার বাদী হলেন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এএসআই) হুমায়ুন কবীর হাওলাদার এবং তদন্ত কর্মকর্তা একই থানার উপ-পরিদর্শক (এএসআই) খন্দকার জাহিদ আলী। মামলায় অভিযোগ করা হয়, ২৪ সেপ্টেম্বর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে যুবদল (দক্ষিণ) সভাপতি রফিকুল ইসলাম সবুজের নেতৃত্বে বিএনপির নেতা-কর্মীরা পুলিশের ওপর ককটেল নিক্ষেপ করেন এবং সেখানে ভাঙচুর ও গাড়ির চালকদের হত্যার চেষ্টা চালান। এ মামলায়ও আসামিদের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে।
শুক্রবার রাতে আটক ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু ও বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসকে ডিবি কার্যালয়ে রাখা হয়। গতকাল বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে একটি প্রিজন ভ্যানে করে তাদের আদালতে এনে হাজতখানায় রাখা হয়। সেখান থেকে বিকাল সোয়া ৪টার দিকে এজলাসে ওঠানো হয়। এজলাসে তারা আদালতের অনুমতি পেয়ে আইনজীবীদের চেয়ারে বসেন। শুনানি শেষে বিকাল ৫টার পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।