আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঝুঁকিপূর্ণ জাহাজ চলাচল বাড়ছে, দুর্ঘটনার শ

চট্টগ্রাম বন্দরে ঝুঁকিপূর্ণ জাহাজের চলাচল বেড়েছে। জাহাজে কনটেইনার ওঠানামার ক্ষেত্রে দেওয়া বিভিন্ন সময়ের প্রতিবেদনে বিষয়টি উঠে এলেও বন্ধ হচ্ছে না ঝুঁকিপূর্ণ জাহাজের চলাচল। বরং দিনদিন বেড়েই চলছে। বন্দরের মূল জেটিতে কনটেইনার নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ যেসব জাহাজ আসছে তার মধ্যে কোনোটির ক্রেন ত্রুটিযুক্ত, কোনোটির কন্টেইনার রাখার স্থান জরাজীর্ণ। নিরাপত্তার স্বার্থে অতিমাত্রার ত্রুটিযুক্ত জাহাজের বন্দরে আগমন বন্ধ করতে সম্প্রতি বন্দর চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়েছে নৌ-বাণিজ্য অধিদফতর। এর আগেও কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয় বলে জানান সংশ্লিষ্ট সূত্র। বন্দরের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম-কলম্বো নৌ-রুটে নিয়মিত চলাচলকারী এমভি সি নেভিগেটর জাহাজটি গত বছরের ২৭ জানুয়ারি কনটেইনার নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে আসে। এর পর জাহাজটি কনটেইনার ওঠানামার কাজ শুরু করলে দুটি পৃথক পরিদর্শন টিম গঠন ও প্রতিবেদন দেওয়া হয়। এতে বলা হয়- জাহাজটির কনটেইনার রাখার স্থান (সেল গাইড) খুবই নাজুক। এ জাহাজ থেকে কনটেইনার খালাস ও বোঝাই খুবই ঝঁকিপূর্ণ। পাশাপাশি জাহাজটির কনটেইনার ওঠানামার দায়িত্বে থাকা তৎকালীন বার্থ অপারেটরের দৈনিক প্রতিবেদনেও একইভাবে ঝুঁকির কথা তুলে ধরা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই বন্দরে আসা বিদেশি জাহাজগুলো চলাচলের উপযুক্ত কি না, তা যাচাই করা হয় আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পোর্ট স্টেট কন্ট্রোলের (পিএসসি) আওতায়। গত বছর ও এর আগের বছর এই পদ্ধতির আওতায় অন্তত ৭০টি জাহাজের ছোট-বড় ত্রুটি শনাক্ত করা হয়। এর মধ্যে বিশ্বের অন্যান্য বন্দরে প্রবেশ নিষেধের পর চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে এমন জাহাজ রয়েছে অন্তত ৫০টি। জাহাজগুলোকে ত্রুটিমুক্ত করে চলাচলের নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা মানা হয়নি। সে সময় অতিমাত্রার ত্রুটিযুক্ত একটি জাহাজ আটকও করে বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এদিকে পিএসসি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের জানুয়ারি মাসে এই পদ্ধতির আওতায় সিঙ্গাপুরভিত্তিক ওরিয়েন্ট এঙ্প্রেস লাইনের 'ওইএল বেঙ্গল' নামে একটি জাহাজের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় আটক করা হয়েছিল। সর্বশেষ একই কোম্পানির 'এমভি সি নেভিগেটর' জাহাজটিকে দুই দফা কনটেইনার রাখার স্থান মেরামতের জন্যে নির্দেশ দেওয়া হয়। গত বছরের ২৭ জানুয়ারি এই জাহাজটির ঝুঁকির মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় পিএসসি থেকে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। তারপরও অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। পিএসসি কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম বন্দরে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ জাহাজের প্রবেশ বন্ধ রাখার ক্ষেত্রে বন্দর কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ কনটেইনার শিপিং অ্যাসোসিয়েশনের মতে, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা ও মালয়েশিয়ার চারটি বন্দরে এখন নিয়মিত চলাচল করছে এ রকম প্রায় ৪২টি জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে বন্দরে এখন গড়ে নিয়মিত ১০ থেকে ১২টি জাহাজ থেকে কনটেইনার ওঠানামা করা হয়। সম্প্রতি আগের চেয়ে বেশি ধারণক্ষমতার নতুন কনটেইনার জাহাজ এই পথে যুক্ত হলেও পুরনো ও জরাজীর্ণ জাহাজ চলাচল অব্যাহত রয়েছে। বছর পাঁচেক আগে এমভি সান্তোস নামে একটি জাহাজের ক্রেন থেকে কনটেইনার পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে। একই বছর মংলা বন্দরে ওইএল এঙ্েিলন্স জাহাজের ক্রেন থেকে কনটেইনার পড়ে অপর একটি দুর্ঘটনা ঘটে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে ঝুঁকিপূর্ণ জাহাজ চলাচল করতে থাকলে যে কোনো মুহূর্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এতে মারাত্দকভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। এ প্রসঙ্গে মার্কেন্টাইল মেরিন ডিপার্টমেন্ট (এমএমডি)-এর ইঞ্জিনিয়ার অ্যান্ড শিপ সার্ভেয়ার প্রকৌশলী এ এস এম সিরাজুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'আসলে ঝুঁকি ও ত্রুটিপূর্ণ বিদেশি কোনো জাহাজকে বাংলাদেশে আইনগতভাবে বাধা দেওয়া যায় না। যেটা করা যায় সেটা হচ্ছে- বন্দর ত্যাগ করার আগে যদি ঝুঁকি ও ত্রুটিপূর্ণ কোনো জাহাজ চিহ্নিত হয়, তখন সেটাকে আমরা আটকে রাখতে পারি। আমরা সংশ্লিষ্ট জাহাজের মাস্টারকে ত্রুটিগুলো সারিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিতে পারি এবং নির্দেশমতো মেরামত করার পর তা পরিদর্শনশেষে সন্তোষজনক মনে হলে তখন আমরা এনওসি বা ছাড়পত্র দিতে পারি।' এরকম ঝুঁকিপূর্ণ জাহাজ বছরে কী পরিমাণ চিহ্নিত হয় তা জানতে চাইলে জবাবে এমএমডি'র এই কর্মকর্তা বলেন, 'এর সংখ্যা একেবারে কম নয়। পৃথিবীর অন্যান্য বন্দরে প্রবেশের আগে ঝুঁকিপূর্ণ জাহাজ আটক করা গেলেও আমাদের আইনে তা হয় না। ফলে এখানে এরকম জাহাজের চলাচল বাড়ছে।'

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.