আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলিদের মনোনয়নপত্র কেনা নিয়ে প্রশ্ন

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ও তদন্ত সংস্থার সদস্যদের আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চাওয়া অনৈতিক। এর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বিরোধীপক্ষের হাতে এ বিচারকে বিতর্কিত করার ক্ষেত্রে আরেকটি সুযোগ তৈরি করে দিচ্ছেন।

আইনবিদ শাহদীন মালিক এই মতামত দিলেও আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ মনে করেন, এতে বিচার নিয়ে বিতর্ক হওয়ার কিছু নেই। বিচার করবেন বিচারক, আইনজীবী নন।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপক্ষের চারজন কৌঁসুলি ও তদন্ত সংস্থার দুজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপত্র কিনেছেন।

কমপক্ষে আরও দুজন মনোনয়নপত্র কিনবেন বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।

গত রোববার আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিক্রির প্রথম দিনে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক মো. আবদুল হান্নান খান নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) আসন এবং সংস্থাটির সহসমন্বয়ক এম সানাউল হক কিশোরগঞ্জ-৩ (তাড়াইল-করিমগঞ্জ) আসনের জন্য মনোনয়নপত্র কেনেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রধান তদারকি কর্মকর্তা আবদুল হান্নান খান ২০০৮ সালে বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশ নিয়েছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পাওয়ায় সেবার তিনি নেত্রকোনা-৫ আসন থেকে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে ১৮ হাজার ভোট পেয়ে পরাজিত হন। ২০০০ সালে ঢাকা বিভাগের অতিরিক্ত ডিআইজি পদ থেকে তিনি অবসরে গেলেও ২০১১ সালে তাঁকে মানবতাবিরোধী তদন্ত সংস্থার প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

একই দিনে রাষ্ট্রপক্ষের চারজন কৌঁসুলি মনোনয়নপত্র কিনেছেন। সুলতান মাহ্মুদ শরীয়তপুর-২ (নড়িয়া-সখীপুর) আসন, মোকলেছুর রহমান কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসন, নূরজাহান মুক্তা চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসন এবং সৈয়দ সায়েদুল হক হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনের জন্য মনোনয়নপত্র কেনেন।

নড়িয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান সুলতান মাহ্মুদ শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে তিনি পরাজিত হন।

ছাত্রলীগের সাবেক নেতা মোকলেছুর রহমান পাকুন্দিয়া আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য।

তিনি ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

নূরজাহান মুক্তা বর্তমানে মহিলা আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক।

সৈয়দ সায়েদুল হক ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসম্পাদক ছিলেন।

তাঁরা সবাই বলেছেন, নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন পেলে তাঁরা পদত্যাগ করবেন।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মোহাম্মদ আলী ও আবুল কালাম প্রথম আলোকে জানান, দু-এক দিনের মধ্যে তাঁরা যথাক্রমে ঢাকা-২০ (ধামরাই) ও পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের জন্য মনোনয়নপত্র কিনবেন। বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাবেক সহসভাপতি মোহাম্মদ আলী বর্তমানে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য।

জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহদীন মালিক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত-সংশ্লিষ্ট ও রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিদের আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাওয়া সম্পূর্ণ অনৈতিক। অনেক চড়াই-উতরাই পার হয়ে প্রায় চার বছর পর এই বিচার-প্রক্রিয়াটি আজ একটা পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। এখন সরকারি দলের মনোনয়ন চাওয়ার কারণে বিরোধীপক্ষের কাছে এ বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার আরেকটি যুক্তি তুলে দেওয়া হবে।

এই মনোনয়নপত্র কেনাকে অজুহাত বানিয়ে তারা বিচার-প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করবে।

আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ অবশ্য এ বিষয়ে ভিন্নমত দিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা রাষ্ট্রের কর্মচারী নন। ট্রাইব্যুনালের বাইরেও তাঁরা মামলা পরিচালনা করতে পারেন। সংসদ প্রণীত আইন অনুসারে বিচার হবে, বিচার করবেন বিচারকেরা।

আইনজীবীদের বিভিন্ন মতাদর্শ থাকতে পারে; এতে বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে, এ ধারণা ভুল।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.