আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কার্যত মন্ত্রীদের সকল বাহাদুরী শেষ!!

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

গতকাল মন্ত্রীসভার সদস্যরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী'র কাছে তারিখবিহীন পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। বর্তমান সংবিধানের আর্টিকেল ৫৮-এর ১-এ বলা আছে- ''৫৮। (১) প্রধানমন্ত্রী ব্যতীত অন্য কোনো মন্ত্রীর পদ শূন্য হইবে যদি- (ক) তিনি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করিবার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নিকট পদত্যাগপত্র প্রদান করেন;'' অর্থ্যাৎ মন্ত্রীদের পদত্যাগ সংবিধান অনুযায়ী, পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হয়ে গেছে। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কখন সেগুলো রাষ্ট্রপতি'র কাছে পাঠাবেন, রাষ্ট্রপতি কখন স্বাক্ষর করবেন, এগুলো পরবর্তী আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। পদত্যাগ এখনো কার্যকর নয়, এই কথাটি সংবিধানের কোথাও বলা নেই।

মন্ত্রীসভার পদত্যাগ নিয়েও পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন একটি নাটক মঞ্চস্থ হল গতকাল। সংবিধান অনুযায়ী, প্রধানমন্ত্রী মোটেও মন্ত্রীদের নিয়োগদাতা নন। তিনি রাষ্ট্রপতি'র কাছে কিছু ব্যক্তির নাম সুপারিশ করেন। মাননীয় রাষ্ট্রপতি তাদের প্রজাতন্ত্রের মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দান করেন। তেমনি, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র সংগ্রহ করার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি।

সংবিধানের আর্টিকেল ৫৮-এর (২)-এ বলা হয়েছে- ''৫৮। (২) প্রধানমন্ত্রী যে কোন সময়ে কোন মন্ত্রীকে পদত্যাগ করিতে অনুরোধ করিতে পারিবেন এবং উক্ত মন্ত্রী অনুরূপ অনুরোধ পালনে অসমর্থ হইলে তিনি রাষ্ট্রপতিকে উক্ত মন্ত্রীর নিয়োগের অবসান ঘটাইবার পরামর্শ দান করিতে পারিবেন। '' মন্ত্রীদের পদত্যাগপত্র এখনো কার্যকর হয়নি বলে যা চাউর করা হচ্ছে তা মোটেও সংবিধানের কোথাও নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় মন্ত্রীরা পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, মানে হল তারা এখন আর মন্ত্রী নেই। এখন তারা কোনো মন্ত্রীর সুযোগ সুবিধা ভোগ করতেও পারার কথা নয়।

তাদের গাড়িতে এখন জাতীয় পতাকা ওড়ার কথাও নয়। আর যদি প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেন, তাহলে সকল মন্ত্রীর পদত্যাগ অটোমেটিক হয়ে যাবার কথা। এবার একটু গোরায় গলদের কথা আলোচনা করা যাক। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, রাষ্ট্রের সকল নির্বাহী ক্ষমতার মালিক প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রীরা সবাই ঠুটো জগন্নাথ।

মন্ত্রীদের আলাদাভাবে কোনোই ক্ষমতা নেই। মন্ত্রীরা কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তাতে যদি প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষর না করেন, তাহলে সেই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার কোনো ক্ষমতা মন্ত্রীদের নেই। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় মন্ত্রীসভা সংসদের নিকট দায়বদ্ধ। আর সংসদ জনগণের নিকট দায়বদ্ধ। কিন্তু কার্যত বাংলাদেশে দেখি তার উল্টো।

আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে মন্ত্রীসভায় নেওয়া কোনো সিদ্ধান্ত সংসদে বাতিল হবার কোনো উদাহরণ নেই। অর্থ্যাৎ মন্ত্রীসভা যা সিদ্ধান্ত নেয়, তাই সংসদে কণ্ঠভোটে হ্যা হয়ে যায়। কখনোই আমরা না হতে দেখিনি। এর পেছনের কারণ কি? পেছনের কারণ একব্যক্তি'র উপর সকল ক্ষমতা অর্পণ। আমাদের দেশে মন্ত্রীসভায় যিনি প্রধানমন্ত্রী, তিনিই সংসদের নেতা, তিনিই আবার দলীয় প্রধানের পদে অধিষ্ঠিত।

ফলে সেই ব্যক্তি যিনি হবেন, তিনিই এই চূড়ান্ত ক্ষমতা ভোগ করেন। এটা আওয়ামী লীগের প্রধান শেখ হাসিনার বেলায় যেমন সত্য, বিএনপি'র প্রধান খালেদা জিয়ার বেলায়ও সত্য। তাই সংসদীয় গণতন্ত্রের এই গোরার গলদের ফাঁফরটি কোনো দলই জনগণের কাছে খোলাসা করেন না। এখানে দুই দলেরই একই নীতি। দুই দলের দুই প্রধানই এই চূড়ান্ত নির্বাহী ক্ষমতাটি ভোগ করার পক্ষে মুখিয়ে থাকেন।

আর সেই সূত্রে মন্ত্রীসভা, সংসদ, দলের সকল মন্ত্রী, সাংসদ ও নেতাকর্মীরা তা মানতে বাধ্য। কারণ সংবিধান সেই ক্ষমতা দিয়ে রেখেছে। ওই চূড়ান্ত পদের ব্যক্তি যদি কোনো আবুল বা আবদুল বা রাম বা শ্যাম বা যদু বা মধু বা রহিম বা করিম যিনিই হবেন, তিনিই এই ক্ষমতা ভোগ করবেন। অন্যান্য সবাই শুধু তার নির্দেশ মান্য করবেন। এটা হল গণতন্ত্র!!! এ কারণেই বলা হয় গণতন্ত্র হল মুর্খদের কারখানা।

কথাটা একশোভাগ সত্যি। সবাই মুখে বলবেন, জনগণ সকল ক্ষমতার মালিক। বাস্তবে ক্ষমতার মালিক প্রধানমন্ত্রী। আইনের চোখে সবাই সমান। বাস্তবে আইন ব্যক্তির ক্ষমতার উপর নির্ভরশীল।

ভুল করবেন একজন ব্যক্তি, আর ওটা গণতন্ত্রের নামে চালিয়ে দেওয়া হবে জনগণের উপর। সংবিধান যদি সকল আইন কানুনের উৎস হয়, তাহলে সংবিধান হতে হবে স্বচ্ছ, পরিস্কার, সবার বোধগম্য একটা সহজ, সরল পাঠের বিষয়। প‌্যাচ ঘোছ কেন থাকবে সংবিধানে। যে কারণে সংসদীয় গণতন্ত্রের যারা মাতা, সেই খোদ বৃটেনের সংবিধান কিন্তু অলিখিত সংবিধান। সেখানে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা নেই যে, তুমি এই করবা, সেই করবা, এটা করতে বাধ্য, ওটা করতে মানা।

বাংলাদেশের সংবিধানের কোথাও বলঅ নেই যে আপনি বাংলা একাডেমি'র প্রমিত বাংলা বানান অনুসরণ করতে বাধ্য। আপনার ইচ্ছে হলে লিখতে পারেন 'কাক'। আবার লিখতে পারেন 'কাউয়া'। আবার লিখতে পারেন- উহা একটি কাইল্লা পখ্খী, যাহা কা-কা করিয়া ডাকে। আপনারে কেউ নিষেধ করে নাই।

আপনি কাউয়া, কাকা, কালা পাখি যাই কন সব ঠিক আছে। মোট কথা আপনি পাখিটারে ঠিক মত চিনতে পারলেই হল। কিন্তু গণতন্ত্রে সবকিছু চিনে ফেলার কোনো নিয়ম নেই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে যা কিছু ঘটবে তাই আইন। আপনি তা মানতে বাধ্য।

আর ক্ষমতার উৎস নাকি জনগণ, আর সেই জনগণ প্রধানমন্ত্রী'র নির্দেশিত আইন মানতে সারাক্ষণ হায় হায় করে বেড়ায়। খালি চোখে মন্ত্রীদের বিশাল ক্ষমতা। তারা দিনকে রাত বানাতে পারেন। রাতকে দিন বানাতে পারেন। সূর্যকে পশ্চিম আকাশে ওঠাতে পারেন।

কোটি কোটি টাকা চুরি করতে পারেন। রাষ্ট্রের সম্পত্তি চুরিচামারি করতে পারেন। মানুষকে ধরে নিয়ে জেলে পুরতে পারেন। অন্য মানুষের জমি সম্পত্তি দখল করতে পারেন। ব্যবসা দখল করতে পারেন।

কালোবাজারি করতে পারেন। শেয়ার বাজার লোপাট করতে পারেন। সরকারি গাড়ি যত খুশি যতোগুলি খুশি নিয়ে বেজায় ঘুরতে পারেন। কোনো অসুবিধা নেইকা। কিন্তু মাগার একবার যদি প্রধানমন্ত্রী ওই মন্ত্রী'র উপর গোস্যা করেন, তাইলেই ওই মন্ত্রী মুহূর্তে ফেউ হয়ে যান।

প্রধানমন্ত্রী শুধু মুখ ফুটে বলবেন, আমনে এখন আইতে পারেন অনেক হয়েছে। ব্যাস, আপনার ক্ষমতার বাহাদুরী তখন মুহূর্তে ভ্যানিস। ওস্তাদ উকিল মুন্সি'র জবানে আমরা শাহ আবদুল করিমের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে এখন গাইতে পারি সেই গানটা- ''আগের বাহাদুরি এখন গেলো কই? চলিতে চরণ চলেনা দিনে দিনে অবশ হই আগের বাহাদুরি এখন গেলো কই?...'' আমাদের মন্ত্রীদের এতো এতো ক্ষমতা, সেই বাহাদুরী এখন গেল কই? সংবিধান অনুযায়ী আপনারা এখন আর মোটেও মন্ত্রী নন। আপনাদের আর কোনো বাহাদুরী এখন কার্যকর নয়। যতোই মিডিয়ার কাছে বলুন, রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষর না করা পর্যন্ত আপনারা মন্ত্রী আছেন, এটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ব্যাখ্যা।

সংবিধান অনুযায়ী, এখন আর আপনাদের সেই বাহাদুরী নেই। এখন সরকারি গাড়ি, পতাকা, অফিস এগুলো ব্যবহার করার কোনো বাহাদুরী আপনাদের নেই। তার চেয়ে চলেন আমরা গানটা পুরাই গাই- ''আগের বাহাদুরি এখন গেলো কই? চলিতে চরণ চলেনা দিনে দিনে অবশ হই আগের বাহাদুরি এখন গেলো কই? মাথায় চুল পাকিতেছে মুখের দাঁত নড়ে গেছে চোখের জ্যোতি কমেছে মনে ভাবি চশমা লই মন চলেনা রং-তামাশায় আলস্য এসেছে দেহায় কথা বলতে ভুল করে যাই মধ্যে-মধ্যে আটক হই আগের বাহাদুরি এখন গেলো কই? কমিতেছি তিলেতিলে ছেলেরা মুরব্বী বলে ভবের জনম গেল বিফলে এখন সেই ভাবনায় রই আগের মত খাওয়া যায়না বেশি খাইলে হজম হয়না আগের মত কথা কয়না নাচেনা রঙ্গের বারই আগের বাহাদুরি এখন গেলো কই? ছেলেবেলা ভালই ছিলাম বড় হয়ে দায় ঠেকিলাম সময়ের মুল্য না দিলাম তাইতো জবাবদিহি হই যা হইবার তা হয়ে গেছে আব্দুল করিম ভাবিতেছে এমন একদিন সামনে আসে একেবারে দরবেশ হই আগের বাহাদুরি এখন গেলো কই?''

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.