তিনটি পুরোনো জাহাজ কেনা হবে। এই জাহাজ খুঁজতে প্রথমে দুই দফা বিদেশ সফর করেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্মকর্তারা। এরপর দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসে চারজন কর্মকর্তা আবারও সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীন সফর করেন। এই তিনটি জাহাজ কেনার জন্য তিন দফায় চার কর্মকর্তা পৃথকভাবে ১৯ দিন বিদেশে কাটিয়েছেন।
প্রায় ৯৯ লাখ টাকায় জরিপকাজের জন্য সফটওয়্যার কেনা হবে। সফটওয়্যার দেখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ছুটে গেছেন দুই কর্মকর্তা। বিমান খরচসহ সবই বহন করলেন ঠিকাদার। বন্দর কর্মকর্তাদের এমন বিদেশ সফর নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যন্ত্রপাতি কেনার সঙ্গে কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা না থাকার পরও বিদেশে সফরসঙ্গী হচ্ছেন অনেকে।
আবার সফর থেকে ফিরে সন্তোষজনক প্রতিবেদন দেওয়া হলেও বন্দরে আসার পর কেনাকাটায় ধরা পড়ছে গরমিল।
বন্দরের হিসাবে দেখা যায়, কেনাকাটা বাবদ গত ১২ মাসে বন্দরের ৩২টি দল বিদেশ সফর করেছে। এসব দলের বিদেশে কেটেছে মোট ১৭৪ দিন। প্রতিটি দলে কমপক্ষে দুই থেকে সর্বোচ্চ সাতজন কর্মকর্তা ছিলেন। সফরকারী দলের মোট সদস্য ছিলেন ৯৩ জন।
আবার একই কর্মকর্তা এক থেকে ছয়বার পর্যন্ত বিদেশ সফরও করেছেন। সব মিলিয়ে ৬২ জন কর্মকর্তা এক বা একাধিকবার বিদেশ সফর করেন।
জানতে চাইলে বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘যন্ত্রপাতি কেনার জন্য বিদেশ সফরের প্রয়োজন আছে। কারণ আমাদের চাহিদা অনুযায়ী যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে কি না, সেটি দেখার জন্য বিদেশ সফরে যেতে হয়। ’ তিনি বলেন, কোন কেনাকাটায় কতজন যাবে, কারা যাবে, কত দিন থাকবে—এসব বিষয় ঠিক করা দরকার।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে এ-সম্পর্কিত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে।
রহস্যঘেরা খরচ: গত এক বছরে ১৩টি বিদেশি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান যন্ত্রপাতি সরবরাহ করছে। বিদেশ থেকে যন্ত্রপাতি ও পণ্য ক্রয়ের সময় প্রতিটি দরপত্রের শর্তে বলা হয়, যন্ত্রপাতি দেশে আনার আগে সরবরাহকারীর খরচে বন্দরের কর্মকর্তাদের প্রাক্-জাহাজীকরণ পরিদর্শনে নিয়ে যেতে হবে। ঠিকাদারেরা দরপত্র জমা দেওয়ার সময় এই খরচ বিবেচনায় নিয়ে যন্ত্রপাতির দর জমা দেন। ফলে যন্ত্রপাতি কেনা বাবদ খরচ বেড়ে যায়।
ঠিকাদারদের তথ্য অনুযায়ী, দেশভেদে প্রতিজনের জন্য গড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এই হিসাবে ঠিকাদারদের অর্থে বিদেশ ভ্রমণে ব্যয় প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। বন্দর কর্মকর্তারা জানান, বিদেশে পণ্য পরিদর্শনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পরিদর্শন সংস্থা রয়েছে। আবার বিদেশ থেকে কেনা পণ্য বন্দরে আসার পর পরিদর্শন করেই বুঝে নেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এমন ব্যবস্থা থাকার পরও পণ্য কেনা বাবদ কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর মূলত ভ্রমণবিলাসে পরিণত হচ্ছে।
অথচ বন্দর কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতা অর্জন ও প্রশিক্ষণের কাজে বিদেশ সফরের জন্য পৃথক অর্থ বরাদ্দ থাকে। ২০১১-১২ অর্থবছরে এই খাতে খরচ হয় এক কোটি ২১ লাখ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরের বাজেট ছিল এক কোটি ৮৯ লাখ টাকা এবং চলতি অর্থবছরে বরাদ্দ আছে দুই কোটি টাকা।
কাজে আসে না সফর: গত বছর দরপত্রের মাধ্যমে ১০টি পাঁচ টন ক্ষমতার ফর্কলিফট যন্ত্র সরবরাহ করে কোরিয়ার দাইয়ু ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন। এসব যন্ত্র পরিদর্শনের জন্য কোরিয়া সফর করেন বন্দরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম এবং সহকারী প্রকৌশলী আসিফ মাহমুদ।
তাঁদের পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদনে বলা হয়, চুক্তি অনুযায়ী যন্ত্রপাতি সন্তোষজনক অবস্থায় পাওয়া গেছে। এই যন্ত্র চট্টগ্রাম বন্দরে নামানোর পর আরেক দফা পরিদর্শন করে প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) খায়রুল মোস্তফার নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি। এই কমিটি একাধিক গরমিল খুঁজে পায়।
আবার ২০১০ সালে তুরস্কে বর্জ্য অপসারণের জাহাজ পরিদর্শনে সাতটি ত্রুটি চিহ্নিত করে সফরকারী বন্দর কর্মকর্তারা। এসব ত্রুটি দূর করে জাহাজটি বন্দরে আনার সুপারিশ করে কমিটি।
অথচ এসব ত্রুটি দূর না করেই জাহাজটি দেশে আনা হয়। এখনো জাহাজটি দিয়ে বর্জ্য অপসারণের কাজ পুরোপুরি করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ আছে।
যন্ত্রপাতি কিনতে বিদেশ সফরে পছন্দের তালিকার শীর্ষে যুক্তরাষ্ট্র। এ দেশটিতে গত এক বছরে ছয়বার সফর করেছেন বন্দর কর্মকর্তারা। এর পরেই সফরের তালিকায় আছে যুক্তরাজ্য, সুইডেন, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড, চীন, জাপান ও কোরিয়া।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।