ন্যায়বিচার চাওয়াই বালক আজাহারের অপরাধ
পুলিশ কমিশনারের কাছে অভিযোগ করায় আরো তিন মামলার খড়গ নামল। এর মধ্যে খুনের মামলাও রয়েছে। ওই মামলায় ভুক্তভোগী আজহার এখন জেলে। পরিবারকে হুমকি দেয়া হচ্ছে, আবারো অভিযোগ করলে এবার রিমান্ডে নিয়ে ক্রসফায়ারে দেয়া হবে। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে পল্লবী ও কাফরুল থানায় একটি হত্যাসহ তিনটি মিথ্যা মামলা হয়েছে বালক আজাহারের বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগী পরিবারটি অভিযোগ করেছে, পল্লবী থানার এসআই আসাদুজ্জামান ও এএসআই কামরুজ্জামান গত ২১ আগস্ট রাতে পল্লবী এলাকার একটি কারুপণ্য শিল্পকারখানায় অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানের মালিকসহ ৯ জনকে আটক করে এবং তাদের কাছ থেকে প্রায় দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে আরো অর্ধলাধিক টাকা নিয়ে মালিকসহ চারজনকে ছেড়ে দিয়ে বাকি পাঁচজনের কাছ থেকে প্রায় ৩০ হাজার টাকা নিয়েও সন্দেহজনক আইনে তাদের কোর্টে চালান করে। তাদের মধ্যে একজন ১৬ বছরের হতভাগ্য কিশোর আজাহার। আজাহার জামিনে ছাড়া পেয়ে ন্যায়বিচার ও ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করে গত ২৬ আগস্ট ডিএমপি পুলিশ কমিশনারের বরাবরে ওই দুই পুলিশ কর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করে; কিন্তু পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করাই আজাহারের জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ডিএমপি কমিশনারের নির্দেশে ডিবির পরিদর্শক মোক্তার হোসেন তদন্তের জন্য দারোগাদের তলব করেন এবং ঘটনার সত্যতার প্রমাণ মিলে।
এ ঘটনায় এসি পল্লবীসহ সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের আঁতে ঘা লাগে। এরই জের ধরে তদন্তের একপর্যায়ে অভিযোগকারী আজাহার ও তার বাবা শহীদুলকে পল্লবী থানায় ডেকে নিয়ে বিষয়টি মীমাংসার জন্য চাপ সৃষ্টি করা হয়। অভিযুক্ত অফিসারদের প থেকে হুমকি দেয়া হয় যে, পুলিশ কমিশনারের কাছে দায়েরকৃত অভিযোগ প্রত্যাহার এবং এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের কাছে কোনো তথ্য প্রকাশ করলে পরিণাম ভয়াবহ হবে। তখন একটার পর একটা মামলায় আসামি করা হবে পুরো পরিবারের সদস্যদের। বাস্তবেও ঘটেছে তাই।
এই ঘটনার জের ধরে গত ১৯ অক্টোবর হতভাগ্য আজাহার ও তার বাবাসহ একই পরিবারের সাতজনের বিরুদ্ধে ‘পুলিশ মারধর’ সংক্রান্ত একটি মামলা দেয়া হয়। স্থানীয় নিউ সোসাইটি মার্কেট কমিটির কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, ১৯ অক্টোবর রাত আনুমানিক ২টার দিকে একই থানার এসআই রায়হান সাদা পোশাকে সোর্সসহ মাদরাসা ক্যাম্পে ‘সামারী’ (অনৈতিক অর্থ আদায়) করতে যায়। সেখানে গভীর রাতে সাদা পোশাকের পুলিশ নিরীহ মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ও মারধর করে অর্থ আদায় করার সময় আক্রান্তদের ভয়ার্ত চিৎকারে এলাকাবাসী জেগে উঠে এবং তাদের ওপর ইটপাথর নিপে করে। একপর্যায়ে উপায়ন্তর না দেখে পালাবার সময় দারোগা রায়হান তার কোমরের পিস্তলটি ফেলেই পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় অহেতুকভাবে এক গৃহিণী ও রিনা মাজি নামক এক যুবতীকে পুলিশ ধরে নিয়ে যায়।
কোনো মহিলা পুলিশ ছাড়াই থানায় আটক রেখে বেধড়ক মারধর করা হয় তাদের। মারধরের ফলে প্রাণহানির আশঙ্কা দেখা দিলে পুলিশ তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। এই মামলায় আজাহার ও তার বাবাসহ পরিবারের সাতজনকে আসামি করা হয়। আজাহারের বাবা জানান, তারা এ সময় ঈদ উদযাপন করতে গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ওই মামলায় গত ৫ নভেম্বর সিএমএম আদালতে হাজির হয়ে আজাহার ও তার বাবাসহ ছয়জন জামিন লাভ করেন।
পর দিন ৬ নভেম্বর পল্লবী এলাকায় আওয়ামী লীগের একটি হরতালবিরোধী মিছিল থেকে আজাহারকে পল্লবী থানার দারোগা জালাল ধরে নিয়ে যায়। আজাহার তার জামিননামার কপি দেখালে পুলিশ প্তি হয়ে বলতে থাকে কিভাবে জামিন হলো। এবার তোকে হত্যামামলাসহ আরো পাঁচটি মামলার আসামি করা হবে। এরপর তাকে চোখ বেঁধে সহকারী পুলিশ কমিশনারের (এসি) কে নিয়ে যায়। সেখানে রাতভর তাকে বেদম মারধর করে সকালে পল্লবী থানার একটি পেন্ডিং ডাকাতির মামলায় (যার নম্বর ৬(১০)২০১৩ইং) আসামি দেখিয়ে কোর্টে চালান করে ১০ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়।
আদালত রিমান্ড নামঞ্জুর করে আজাহারকে জেলহাজতে প্রেরণ করার নির্দেশ দেন। গত ১১ নভেম্বর আজাহার এ মামলায় জামিন লাভ করে। জামিননামার কপি নিয়ে আজাহারের পরিবার জেলগেটে গিয়ে জানতে পারে তাদের সন্তানের নামে নাকি আরো একটি মামলা রয়েছে। নতুন এ মামলাটি অবশ্য দেয়া হয়েছে একই এসির আওতাধীন পাশের কাফরুল থানার একটি পেন্ডিং হত্যামামলা যার নম্বর-২৭, তাং ২১-৯-২০১৩ইং। কাফরুল থানার আলোচ্য এই হত্যামামলায় এরেস্ট দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
আদালত আগামী ১৭ নভেম্বর রিমান্ডের শুনানির দিন ধার্য করেছে মর্মে জানা গেছে। আজাহারের পরিবারের সদস্যরা জানান, তারা ন্যায়বিচার দাবি করেছিলেনÑ এটাই তাদের অপরাধ। এখন পুলিশের রোষানলে পড়ে তাদের ত্রাহি অবস্থা। এ ব্যাপারে পল্লবী জোনের এসি মোহাম্মদ কামাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এরূপ কোনো ঘটনা তার জানা নেই।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।