-বলেন স্যার আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
-আপনি কি জানেন এই মুহূর্তে আপনি অনেক বড়ো একটা নিয়ম ভেঙ্গেছেন?
-স্যরি স্যার, আপনি কি বলছেন ঠিক বুঝতে পারছি না ।
-আপনাদের নিয়ম বলে, এখানে ফোন দিলে শুরুতে আপনারা নাম বলেন।
কিন্তু আপনি সেটা করেন নি ।
-স্যরি স্যার । গ্রাহকের এতো ফোন আসে মাঝে মাঝে মাথা ঠিক ভাবে কাজ করে না ।
-আপনি কিন্তু এখনো আপনার নাম বলেন নি ।
-নুসরাত জাহান বলছি। এবার বলেন আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
-মাথার মাঝে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে, জিজ্ঞাস করবো?
-জ্বি অবশ্যই স্যার!
-আপনাদের এখানে কি শুধু সমস্যা নিয়েই কল করা যায়,
এমনিতে ফোন দেওয়ার কি কোনো নিয়ম নেই ?
- স্যরি স্যার, আমাদের এখানে গ্রাহকের সমস্যা Solve করার জন্যই বসানো হয়ছে ।
-জ্বি বুঝলাম ।
-আপনার কোনো সমস্যা কিংবা সেবা নিয়ে প্রশ্ন থাকলে জিজ্ঞাস করতে পারেন ।
-আসলে ঐ মুহূর্তে কথা বলার মতো কাউকে খুজে পাচ্ছিলাম না । তাই আপনাদের এখানে ফোন দিয়ে বসলাম ।
-স্যরি স্যার । এটা এমনিতে গল্প করার জায়গা নয় ।
-আপনি কেমন আছেন সেটাও কি জিজ্ঞাস করা যাবে না?
-জ্বি ভালো, আপনিও ভালো থাকুন স্যার ।
এয়ারটেলের সাথে থাকার জন্য আপনাকে অসংখ্যক ধন্যবাদ ।
ঠিং ঠিং শব্দে লাইনটা কেটে গেল ।
আমি স্হির দৃষ্টিতে ফোনটার দিকে তাকিয়ে আছি । এই মেয়ের কন্ঠ স্বর টা অদ্ভূত মায়ায় জড়ানো ।
কাস্টমার কেয়ার গুলোতে যে কোকিল কন্ঠি মেয়েদের বসানো হয় এটা আরো একবার প্রমাণিত ।
মস্তিষ্ক স্বাভাবিক কাজ করছে না । মস্তিষ্ক বলছে কোকিল কন্ঠির সাথে আরো কথা বলা দরকার ।
জানি এখন আবার ফোন দিলে নুসরাত জাহানকে পাওয়া যাবে না ।
তারপরও নেশার ঘোরে আবার ফোন দিলাম,
-আমি রাসেল মাহমুদ । বলেন স্যার আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
ফোনের লাল বাটন চেপে লাইনটা কেটে দিলাম ।
কারণ আমার এখন নুসরাত জাহানকে দরকার । কোনো রাসেল মাহমুদকে না ।
আবারো ফোন দিলাম ।
এবার যিনি ধরলেন উনিও নুসরাত জাহান নন,
ফারজানা তিথি ।
বইয়ে রবার্ট ব্রুসের গল্প পড়েছিলাম ।
উনি সাত বারের চেষ্টায় রাজ্য ফিরে পেয়েছিলেন । কিন্তু আমার আট বারের চেষ্টাও ব্যর্থ ।
আশা ছেড়ে দিয়ে নয় বারের মতো ফোন দিলাম ।
-আমি নুসরাত জাহান বলছি । বলেন স্যার আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
বুকের মাঝে তিনবার ফুঁ দিলাম ।
যাই হোক নুসরাত জাহানকে পাওয়া গেছে ।
-জ্বি স্যার বলেন আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?
-কিছুক্ষণ আগে একটা ছেলে আপনাকে ফোন দিয়েছিল কোনো প্রয়োজন ছাড়াই, আপনার মনে আছে?
-আপনি কি বলছেন স্যার বুঝতে পারছি না ।
-আপনার বুঝতে হবে না । আপনি শুধু জেনে রাখেন আপনার কন্ঠস্বরের আমি প্রেমে পড়ে গেছি ।
-আপনার হয়তো মানসিক সমস্যা আছে ।
ভালো ডাক্তার দেখে স্যার ট্রিটমেন্ট করান ।
-আমার ধারনা কি জানেন, পৃথিবীতে যে সমস্ত মানুষ সবচেয়ে সুন্দর কন্ঠ নিয়ে জন্মেছে তার মাঝে হয়তো আপনিও একজন ।
-আপনি কিন্তু এবার খুব বাড়াবাড়ি করছেন । জানেন আপনার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্হা নেওয়া হতে পারে?
-যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন । তবে আমি এতো সুন্দর কন্ঠস্বর এর আগে শুনি নি ।
ও পাশ থেকে কোনো কথা আসছে না ।
ফোন স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখি লাইন টা কেটে দেওয়া হয়েছে ।
আমি আয়নার সামনে গিয়ে দাড়লাম ।
অবাক চোখে তাকিয়ে নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম,
হঠাত্ এমন ছোটো লোকের মতো আচরন করছি কেনো???
২.
রাত বারোটা । রিং আসার শব্দে জেগে উঠলাম ।
অচেনা নাম্বার । ঘুম ঘুম চোখে কলটা রিসিভ করলাম ।
-আমি নুসরাত জাহান। অবাক হলেন পারসোনাল নাম্বার থেকে ফোন দিলাম কেনো?
-হুম অবাক হয়েছি । আর এতো বেশি অবাক এই জীবনে একবারও হয়নি ।
-আমি চাইলে কিন্তু আপনার নাম্বার টা নষ্ট করে দিতে পারতাম ।
- তা করলেন না কেনো?
-কিছু কিছু ব্যাপার আছে তা ব্যাখা না দেওয়াই ভালো ।
-জ্বি ব্যাখা লাগবে না । আমার ধারণা মতে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর কন্ঠস্বরের মেয়েটি আমাকে ফোন দিয়েছে এটাই আমার সবচেয়ে বড়ো ব্যাখা ।
-আপনি কখনো ভেবেছিলেন আমি আপনাকে ফোন দিবো?
- ভুল করেও ভাবিনি ।
কারণ আপনাদের ফোন দেওয়ার ব্যাপার টা নিরানব্বই ভাগ মানুষের সাথেই ঘটে না ।
-আপনার কি ধারণা আপনি আমার কন্ঠস্বর সুন্দর বলেছেন, তাই আপনাকে ফোন দিয়েছি ?
- মেয়েদের হাসি, কন্ঠস্বর, চোখ সুন্দর বললে সব মেয়েরাই খুশি হয় ।
তবে আপনি যে খুশি হয়ে ফোন দেন নি এটা নিশ্চিত ।
-কিভাবে নিশ্চিত?
-থাক, কিছু কিছু ব্যাপার আছে যা ব্যাখা না দেওয়াই ভালো ।
- আমার সাথে সামনা সামনি দেখা করার মতো সাহস আছে আপনার?
- পাবলিকের হাত মার খাওয়াবেন নাকি চৌদ্দ শিখের ভাত খাওয়াবেন?
-সেটা হলে তো অনেক আগেই করতে পারতাম ।
-আপনি কি জানেন আমি আপনার প্রেমে পড়ে যাচ্ছি ।
ব্যাপার টাকে "প্রথম সংলাপেই প্রেম" বলতে পারেন ।
হাহাহা
৩.
মনে প্রচুর সাহস সষ্ণয় করে নুসরাত জাহানের দেওয়া ঠিকানা মতো একটা চার তালা ফ্লাটের সামনে এসে দাঁড়লাম ।
দুই তালার করিডোর থেকে একটা দশ বারো বছরের ছেলে হাতের ইশারায় ডাকছে ।
আমি রুমের ভেতর সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছি ।
আমার পাশাপাশি উইল চেয়ারে একটা মেয়ে বসে আছে ।
-চা খাবেন?
-আপনিই কি নুসরাত জাহান?
-কন্ঠস্বর শুনে কি মনে হচ্ছে না ?
-আপনার এই অবস্হা কেমন করে?
-তার কারণ জানানোর জন্য আপনাকে এখানে আনা হয়নি ।
-তবে কেনো আনা হয়েছে?
-সুন্দর কন্ঠস্বরের মেয়েটি যে চেয়ারবন্দি সেই সত্য টার মুখোমুখি দাড় করানোর জন্য ।
আপনি যখন হেল্প লাইনে আবল তাবল বকছিলেন,
তখনি ভাবলাম আপনাদের মতো মানুষের কিছু নির্মম সত্যের মুখোমুখি করানো খুবই দরকার ।
আপনি এখন যেতে পারেন!!
আমি মাথা নিচু করে নিঃশব্দে বসে রইলাম ।
কয়েকটা মিনিট আমাদের কে অদ্ভূত নীরবতা গ্রাস করল ।
নিষ্টুর সত্যের মুখোমুখি বেশিক্ষণ বসে থাকার ক্ষমতা হয়তো আমাকে দেওয়া হয়নি ।
আমি শব্দহীন পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যাচ্ছি ।
পিছন থেকে অসম্ভব সুন্দর কন্ঠ নিয়ে জন্ম নেওয়া মেয়েটি বলে উঠল,
-পালিয়ে যাচ্ছেন, মিস্টার???
"নিঝুম দ্বীপ #থেকে অবুঝ অরণ্য"
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।