সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় থাকলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এক থেকে দেড় শতাংশ বেশি হতো।
গত এক দশক ধরে গড়ে ৬ শতাংশের বেশি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। বলা হচ্ছে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ হওয়া দরকার।
শুধু চলতি বছরে এ পর্যন্ত ৫৫ দিন হরতাল করেছে বিরোধীদল। এসব কর্মসূচিতে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছে কয়েক হাজার গাড়ি।
আর প্রাণ দিতে হয়েছে শতাধিক মানুষকে। আহতের সংখ্যাও কয়েক হাজার।
বিনিয়োগ বোর্ডের হিসেব অনুযায়ী ২০১১-১২ অর্থবছরে ১৭৩৫টি বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধন নেয়। ২০১২-১৩ অর্থবছরে যা কমে দাঁড়ায় ১৪৫৭টিতে। আর চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ২৭০টি প্রস্তাব নিবন্ধন নিয়েছে।
বিদেশি বিনিয়োগের নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। ২০১১-১২ অর্থবছরে ২২১টি নিবন্ধন নিলেও পরের অর্থবছর তা কমে ২১৯টি হয়। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগের নিবন্ধন হয়েছে মাত্র ৩৫টি, যাদের অধিকাংশই এখনো কার্যক্রমে যায়নি। ফলে সম্ভাব্য কর্মসংস্থান তৈরির পথও থেমে গেছে।
বিনিয়োগের নিবন্ধন কমার কারণ হিসেবে বোর্ডের পরিচালক তৌহিদুর রহমান খান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পাশাপাশি জ্বালানি, অবকাঠামো সংকটকে দায়ী করেছেন।
এদিকে বিনিয়োগ না হওয়ায় ব্যাংকগুলোতেও জমছে অলস তারল্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসেবে দেখা গেছে ১২ নভেম্বর ব্যাংকগুলোতে ঋণ দেয়ার মত ২৮ হাজার কোটি টাকা পড়ে আছে।
ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন এবিবির ভাইস চেয়ারম্যান ও পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হেলাল আহমেদ চৌধুরী রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যাংকগুলোতে ঋণযোগ্য তহবিল বেড়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন। এই কারণে মন্দ ঋণও বাড়ছে বলে তার অভিমত।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান সম্প্রতি ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরো এক থেকে দেড় শতাংশ বেশি হতো।
বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যেকোন অর্থনীতি ভালো করার পূর্বশর্ত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশের কারণে ব্যবসা-বিনিয়োগের পরিবেশ অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। পণ্য সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এতে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি পণ্যমুল্য বাড়ে। মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে যায়।
এক কথায় আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি থমকে যায়। ”
অন্যদিকে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলছে, শুধু একদিনের হরতালে পোশাক খাতে ক্ষতির পরিমাণ ২০০ কোটি টাকা। আর ঢাকা চেম্বারের সাম্প্রতিক এক সমীক্ষা অনুযায়ী প্রতিদিন হরতালে আর্থিক ক্ষতি ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউএনডিপি এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশি বলে দাবি করেছে।
আন্তর্জাতিক এই সংস্থা এক সমীক্ষায় বলেছে, হরতালের কারণে বাংলাদেশে সার্বিক ক্ষতি হয় জিডিপির কমপক্ষে ৩ থেকে ৪ শতাংশ।
বাজারমূল্যে বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতির আয়তন (জিডিপি) ১০ লাখ কোটি ৩ লাখ ৭৯ হাজার ৮৬৭ টাকা, যা শতকরা হারে ৬ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।
দাতা সংস্থা বিশ্বব্যাংক ও এডিবি বলেছে, রাজনীতিতে যে অস্থিরতা চলছে, তার শান্তিপূর্ণ সমাধান না হলে এ বছর কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে না।
চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
বিশ্ব ব্যাংকের এক হিসাব মতে, হরতালের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশে প্রতিবছর মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রায় ১ শতাংশ ক্ষতি হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।