গত তিন সপ্তাহে বিরোধী দলের ডাকা ১০ দিন হরতালে দেশের বাণিজ্যের মূল কেন্দ্র চট্টগ্রাম নগরীতে ব্যাপক সংখ্যক হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন অনেকে।
বিস্ফোরণের পাশাপাশি হাতবোমা পাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। গত ৫ নভেম্বর খুলশী থানার আমবাগান এলাকায় বল ভেবে হাতে নিয়ে খেলতে গিয়ে হাতবোমার বিস্ফোরণে আহত হয় দুই শিশু।
হাতবোমা বিস্ফোরণের এই ঘটনায় বেশি আতঙ্কে রয়েছেন স্কুলশিশুদের অভিভাবকরা।
লাভ লেইন এলাকার বাসিন্দা আয়েশা খানম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন তো শুধু হরতাল না, আগের দিনও রাস্তাঘাটে ব্যাপক বোমাবাজি হয়। কখন-কোথায় যে বোমা ফাটবে, তার ঠিক নেই।
“হরতালের আগের দিন ছেলেকে নিয়ে স্কুলে যেতে ভয় লাগে,” বলেন আয়েশা, যাকে প্রতিদিন সন্তানকে নিয়ে নগরীর জামালখান এলাকার স্কুলে যেতে হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গোয়েন্দা) বাবুল আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন,হরতালকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরির জন্য দুষ্কৃতকারীরা এ বিস্ফোরণগুলো ঘটিয়ে থাকে।
গত ২ অক্টোবর বাবার সঙ্গে মোটর সাইকেলে করে যাওয়ার সময় হাতবোমা বিস্ফোরণে আহত হয় ফুয়াদ (৫) নামে এক স্কুলশিশু।
তার আগে ২৭ অক্টোবর হালিশহর এলাকায় স্কুলে যাওয়ার পথে বোমা বিস্ফোরণে আহত হন ক্যান্টনমেন্ট স্কুলের এক শিক্ষিকা।
গত ১২ মার্চ নগরীর চেরাগী পাহাড় মোড়ে হাতবোমায় এক চোখ হারান বেসরকারি মেডিকেল কলেজের পঞ্চম বর্ষের ছাত্র সুজন নাথের। তার ১০ দিনের মধ্যে মোমিন রোডে বোমায় চোখে আঘাত পান স্কুলছাত্র ছাত্রী অন্তু বড়ুয়া।
গত ৫ নভেম্বর স্টেশন রোড এলাকায় হাতবোমায় আহত হন চ্যানেল আই ও দেশ টিভির চট্টগ্রাম ব্যুরোর ক্যামেরাম্যান শামসুল আলম বাবু ও মো. হাসান। এর আগে ১৬ জুলাই বাদুরতলায় আহত হন বাংলা ভিশনের ইসমাইল হোসেন পলাশ।
গত ১১ নভেম্বর পরিবেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদের চট্টগ্রামের বাড়িতে এবং ১০ নভেম্বর ভারতের সহকারী হাইকমিশনার কার্যালয় এবং চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজের বাসভবনের ফটকেও হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়।
হরতালের দিনে সড়কে যানবাহন চলাচল কম থাকলেও পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অফিসের কার্যক্রম চলে পুরোদমে। বিরোধী দলের হরতালের সময় শ্রমিক-কর্মচারীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়েই রিকশা বা পায়ে হেঁটে অফিসে যেতে হয়।
চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকার (সিইপিজেড) একটি পোশাক কারখানার কর্মকর্তা অজয় মিত্র বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অন্যদিন অফিসের গাড়ি থাকলেও হরতালের দিন থাকে না। জীবনের তাগিদে হরতালের সময় আতঙ্ক নিয়েই অফিসে যাই।
”
মীর কাশেম নামে পঞ্চাশোর্ধ এক ব্যক্তি বলেন, “বর্তমানে রাস্তায় যে হারে হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়, তাতে বয়স্ক ব্যক্তিদের চলাচল বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। ”
দেখা গেছে, হরতালের সমর্থনে মিছিল, পিকেটিং, সমাবেশ বিস্ফোরণ ঘটানোর পর সটকে পড়ছে বিস্ফোরণকারীরা।
পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল আক্তার বলেন, “হামলাকারীরা সাধারণ মানুষের মতো চলাচল করে। কোনো স্থানে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে মোটর সাইকেল বা অটোরিকশায় করে দ্রুত পালিয়ে যায়। এ জন্য তাদের ধরা কঠিন হচ্ছে।
“বোমাগুলো তৈরির পর অনেক ক্ষেত্রে তারা বিস্ফোরণের জন্য লোক ভাড়া করে। টাকার বিনিময়ে তারা এগুলো বিভিন্ন স্থানে ফাটাচ্ছে। ”
এসব হামলার জন্য অনেক সময় ভাসমান লোকদেরও ব্যবহার করা হয় বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা বাবুল।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।