মালিক-শ্রমিক উভয়পক্ষের সম্মতিতে বৃহস্পতিবার ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের দশম সভায় এই প্রস্তাব চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।
সভার পর বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে রায় সাংবাদিকদের বলেন, “মালিক, শ্রমিক ও নিরপেক্ষ সদস্যদের নিয়ে দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পর সবাই ৫ হাজার ৩০০ টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাবে একমত হয়েছে। ”
সাত ধাপের এই নতুন কাঠামোতে শ্রমিকদের জন্য রাখা হয়েছে পাঁচটি ধাপ।
একজন শ্রমিক শিক্ষানবিশ হিসাবে যোগ দেয়ার ছয় মাস পর সহকারী অপারেটর হিসাবে নিয়োগ পাবেন এবং তার ক্ষেত্রে ন্যূনতম মজুরি (গ্রেড-৭) অর্থাৎ, সাকুল্যে ৫ হাজার ৩০০ টাকা প্রযোজ্য হবে।
আর শ্রমিকদের মধ্যে সর্বোচ্চ ধাপের বেতন পাবেন গ্রেড-৩ এ থাকা সিনিয়র অপারেটররা।
৪ হাজার ৭৫ টাকা মূল বেতনে তারা সব মিলিয়ে মাসে পাবেন ছয় হাজার ৮৫০ টাকা।
আর সর্বোচ্চ ধাপে, অর্থাৎ গ্রেড-১ এর বেতন পাবেন কোয়ালিটি মাস্টাররা। আট হাজার ৫০০ টাকা মূল বেতনে তারা সাকুল্যে ১৩ হাজার টাকা পাবেন।
এই কাঠামোর সব সুবিধা স্যুয়েটার শ্রমিকদের জন্যও প্রযোজ্য হবে।
এর আগে বোর্ডের নবম সভায় বোর্ড ৫ হাজার ৩০০ টাকার প্রাথমিক প্রস্তাব করলে মালিকপক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করে।
ওই প্রস্তাবে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরিতে মূল বেতন (বেসিক) ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ২০০ টাকা।
পরে সরকারের মধ্যস্ততায় মূল বেতন ২০০ টাকা কমিয়ে ৩ হাজার টাকা করার প্রস্তাব চূড়ান্ত করা হয়।
বোর্ডের সদস্যরা জানান, এই প্রস্তাব শ্রম মন্ত্রণালওয়ের অনুমোদনের পর গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে।
শ্রমমন্ত্রী আগেই জানিয়েছিলেন, ২৫ নভেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত গেজেট প্রকাশ করে ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন মজুরি কাঠামো কার্যকর করা হবে। শ্রমিকরা নতুন কাঠামোয় বেতন পাবেন জানুয়ারি থেকে।
এই কাঠামো অনুসারে এখন থেকে প্রতি বছরই মূল বেতনের ৫ শতাংশ হারে মজুরি বাড়বে শ্রমিকদের। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকেই তা কার্যকর হবে।
শ্রমিক নেতাদের ভাষায়, এই কাঠামোর মধ্যে দিয়ে মজুরি বৃদ্ধির পদ্ধতি ‘নতুন ট্রেনে’ উঠল। এর আগে কখনো এ ব্যবস্থা ছিল না।
বোর্ড চেয়ারম্যান জানান, মজুরি বোর্ডের খসড়া প্রস্তাব গত ৫ নভেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশ হওয়ার পর আপত্তি জানানোর ১৪ দিনের সময় শেষ হয় ১৯ নভেম্বর।
এই সময়ের মধ্যে ৪৭৬টি আপত্তি, মতামত, ও অনুসমর্থন জমা পড়ে। এর মধ্যে ৪৫৯টি অভিযোগ দেয় মালিক পক্ষ, ১৭টি শ্রমিক পক্ষ এবং একটি ‘সাধারণ নাগরিকদের’ পক্ষ থেকে আসে।
নূন্যতম মজুরির মূল বেতন ২০০ টাকা কমানো প্রসঙ্গে শ্রমিক পক্ষের প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, “এই শিল্পের ক্ষুদ্র ও মাঝারি কারখানার সক্ষমতা বিবেচনা করেই আমরা এটা মেনে নিয়েছি। ”
মালিকরা কয়েক দিন আগে এই প্রস্তাব মেনে নেয়ার ঘোষণা দিলেও শ্রমিকদের একটি অংশ কারখানা ভাংচুর চালিয়ে যায়। এর দায়িত্ব শ্রমিক সংগঠনগুলো নেবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে রনি বলেন, “প্রস্তাবিত মজুরিতে সব শ্রমিকদের বেতন বাড়বে না বলে ভুল বার্তা শ্রমিকদের দেওয়া হয়েছে।
তাই তাদের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। আমরা এ নিয়ে তাদের সচেতন করার চেষ্টা চালাব। ”
মালিক পক্ষের সদস্য আরশাদ জামাল দিপু বলেন, “বাস্তবায়ন করা কষ্টকর হলেও আমরা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে শিল্পকে বাঁচাতে এই দাবি মেনে নিয়েছি। এই বেতন কাঠামো যাতে দ্রুত কার্যকর হয় সেই চেষ্টা করা হবে। ”
বিজিএমইএ, সরকার ও আন্তার্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এটা পর্যবেক্ষণ করবে বলে তিনি জানান।
সর্বশেষ ২০১০ সালে তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের জন্য ৩ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়।
এর তিন বছরের মাথায় অভ্যন্তরীণ বাজার পরিস্থিতি ও আন্তর্জাতিক চাপে নতুন এই মজুরি কাঠামো চূড়ান্ত করা হলো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।