আর দশটা মানুষের মতো নন তিনি; আছে সামাজিক প্রতিবন্ধকতাও। এসব বাধাবিঘ্ন পিছু ফেলে বীথি বেগম ইজিবাইক নিয়ে ছুটে চলেন যশোর শহরে।
কত দিন ধরে ইজিবাইক চালান?
দুই বছর ধরে চালাই। এর আগে কাপড়ের ব্যবসা করতাম।
চালানো শিখলেন কীভাবে?
একদিন পাশের বাড়ির আপারে বললাম, ইজিবাইক চালাব।
আপা উৎসাহ দিলেন, আম্মা না করলেন। আমি মানলাম না। পরিচিত এক চাচার কাছ থাইক্যা একটা ইজিবাইক আধা ঘণ্টার জন্য ৩০০ টাকায় ভাড়া নিলাম। প্রথম দিন ওই চাচা সঙ্গে থাইক্যা চালানো শিখাইলেন। তারপর একা একা চেষ্টা করলাম।
দেখি, কাজটা অত কঠিন নয়। এর পর থাইক্যা নিজেই চালাই।
রোজগারপাতি কেমন হয়?
ঠিক নেই। মালিকরে রোজ ৫০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। এরপর কোনো দিন ২০০, কোনো দিন ২৫০, আবার ৩০০ টাকাও থাকে।
কোনো কোনো দিন আবার বেশিক্ষণ চালাইতে পারি না। সেই দিন নিজের পকেট থাইক্যা টাকা ভইরা মালিকরে দিতে হয়।
কেন এলেন এ কাজে?
আমি প্রতিবন্ধী। হাত-পায়ে সমস্যা। রান্নাবান্না, সেলাইয়ের কাজ করতে পারি না।
নয় বছর আগে স্বামী মারা গেছে। সংসারে দুই ছেলে, মা আর নানি। তাদের খাওয়াতে হয়। তাই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বাইক চালাই।
চালক হিসেবে কোনো তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে?
হ্যাঁ।
পুরুষেরা প্রায়ই আজেবাজে কথা বলে। আবার ভালো ব্যবহারও করে। কিছুদিন আগে যশোরের এসপি সাহেব খুব সম্মান দেখাইলেন। দড়াটানা মোড়ে আমি বাইকে বসা। হঠাৎ গাড়ি থাইক্যা নেমে তিনি আমারে স্যালুট করলেন।
বললেন, ‘আপনি বড় সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন। সময় পেলে একদিন আপনার বাইকে চড়ব। ’
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আমার যদি নিজের একটা বাইক থাকত, তাইলে পরিবার নিয়া ভালোভাবে চলতে পারতাম। নিজে পড়তে পারি নাই। ছেলে দুইটারে পড়াশোনা করায়্যা মানুষ করতে চাই (দুজনই মাদ্রাসায় পড়ে; বড়টি তৃতীয়, ছোটটি দ্বিতীয় শ্রেণীতে)।
সাক্ষাৎকার: আবুল হাসনাত
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।