আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এসপি সাহেবের তেরো বছর বয়সী আত্মভোলা রুপবতী কন্যা আর অদ্ভুত সব ভালোবাসা।

http://rmpalash.blogspot.com/ আমার ছবির মত সুন্দর গ্রামে আম-জাম ফলের গাছ, বিশাল সব পুকুর আর কচুরিপানায় ভরা ডোবা, ভয় জাগানো বাশের ঝাড় কিংবা পাটশোলায় ঘেরা পানের বরজের অভাব না থাকলেও অভাব ছিল একটা ভালো স্কুলের। স্কুল অবশ্যই একটা ছিল ধামারন উচ্চ বিদ্যালয়, বিশাল বটগাছের নিচে একতালা একটা দালান বিশিষ্ট এই স্কুলটা আমার খারাপ না লাগলেও সেটা আমার মায়ের ভাল মানদন্ডে উত্তীর্ন হতে না পারায় আমার এখানে ঠাই না হয়ে ঠাই হয় জেলা সদরের পালং সরকরি উচ্চ বিদ্যালয়ে। একই সাথে আমার মামার আন্তরিক আগ্রহে থাকার ব্যবস্থা হয় নিকটবর্তী দাসার্ত্তাগ্রামের মামাবাড়িতে। একটা পুকুর, বিশাল ফলের বাগান, কিছুটা নিম্ন জলাভুমি আমরা যেটাকে ব্যাড় বলে থাকি এইসব নিয়ে মামার বাড়িটা ছিল বিশাল। সেই বিশাল বাড়িতে আমিসহ মানুষ মাত্র চারজন।

আমি, মামা-মামী এবং আমার একই ক্লাসে পড়ুয়া মামাতো বোন শাকিলা। লালইট বিছানো, মাঝখানে মাঝখানে ভাঙ্গা, চারপাশের অসামান্য গ্রাম্য সৌন্দর্য্যের ভেতর দিয়ে আকাবাকা রাস্তায় দুই কিলোমিটার হাটতে হাটতে স্কুলে যেতাম। বিশাল একটা মাঠের পাশে একটা ততোধিক বিশাল রেইনট্রি গাছের সাথে গলাগলি করে দাঁড়ানো তিনতলা স্কুল বিল্ডিং। স্কুলের পাশে পাকা রাস্তা পেরিয়ে খাল, তারপরে আদিগন্ত বিস্তৃত ধানক্ষেত। রাস্তার ধারে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা চিরল পাতার শিশুগাছের সারি, খালের পানিতে কচুরি পানার সাদা-নীল ফুল আর জানালার ধারে আমার বসার জায়গা এই তিনে রচিত হয়েছিল এক মধুর সম্মিলন।

এই রাস্তা ধরে কিছুদুর আগালেই পড়ে পালং বাজার। সারাদিন রাস্তা দিয়ে অগনিত লোকের ব্যস্ত আনাগোনা। জানালা দিয়ে দেখতাম রাস্তা দিয়ে চলন্ত রিকসা, সাদা সিলভারের লোটাভর্তি দুধ মাথায় দুধ-বিক্রেতা, ছুটন্ত গরুর পেছনে হেই হট হট শব্দে ছুটন্ত গরুর মালিক, বিশাল মাছের কানকোতে দড়ি বেধে চলা স্বচ্ছল গৃহস্বামী কিংবা পুটলিতে করে চালডাল কিনে বাড়ির পথে চলা দরিদ্র লোক। ক্লাস সিক্স-সেভেন কেটে গেল এইসবের সাথেই, বলার মতো কোন বন্ধুত্ব পেলাম না। পাওয়ার চেষ্টাও হয়তো করিনি বোধহয়, এছাডা ক্লাস সিক্সে পরে ভর্তি হবার কারনে রোল ছিল শেষের দিকে তাই কেউ আমার সাথে বন্ধুত্ব করার আগ্রহও তেমন দেখায় নি।

অবস্থার পরিবর্তন দেখা গেল ক্লাস এইটে ওঠার পরে। এতদিনে স্কুলের সাথে কিছুটা মানিয়ে নেবার কারনে রেজাল্ট অনেকটা ভাল হয়ে এসেছে। বৃত্তি পরীক্ষা দেবার জন্যে মনোনীত হলাম। আমরা দশ-পনের জন যারা বৃত্তি দেয়ার জন্যে মনোনীত হয়েছিলাম, আমাদের আলাদা ক্লাস হতে লাগলো, যাকে আমরা বলতাম কোচিং ক্লাস। মাত্র দশবারোজন কাছাকাছি মেধার ছেলেমেয়ে একসাথে সকাল দশটা থেকে বিকাল পাচটা পর্যত্ন ক্লাস করি, একসাথে থাকতে থাকতে আমাদের সবার ভেতরে গভীর বন্ধুত্ব হতে দেরী হয়নি।

আমাদের ছোট বেঞ্চে আমরা দুইজন করে বসতাম। একজন ছেলে এবং একজন মেয়ে। এবং কোন ছেলের সাথে কোন মেয়ে বসবে সেটাও নির্দিষ্ট ছিল। আমরা এইকয়জন ঘুরতাম আলাদা, খেলাধুলা করতাম আলাদা, টিফিন খেতাম আলাদা। আমাদের ভেতরে জনপ্রিয় খেলা ছিল পেপসি নামের একটা খেলা, সবাই হাতধরে গোল করে দাঁড়িয়ে লাফ দিয়ে যতদুরে সম্ভব সরে যাওয়া, তারপরে পেপসি বলে একজন আরেকজনের পায়ের পাতার ওপর লাফিয়ে পড়ার চেষ্টা করা।

কে কার পাশে কার হাতধরে দাড়াবো তাও ঐ বেঞ্চিতে বসার মতই নির্দিষ্ট ছিল এবং কেউ তার জুটির ওপর কখনো লাফিয়ে পড়ে তাকে বাদ করে দিতনা। আমার সাথে বসত তাজিন নামের একটা মেয়ে, ফুলের মত সুন্দর এই মেয়েটারন নিচের ঠোটে একটা কালো তিল ছিল, যেটা প্রথম দিনেই আমার নজরে পড়ে। ঐটা দেখলেই আমার ছুয়ে দেখতে ইচ্ছে হত। তার সাথে আমার বেশ ভাল একটা রিলেশন তৈরি হয়েছিল, সেই বয়সেই তাকে নিয়ে মাঝে মাঝে রঙ্গীন কল্পনা করতে মজা লাগতো, সেও মাঝে মাঝেই বাড়ি থেকে নানা জিনিস নিয়ে এসে আমাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করতো, যদিও অধিকাংশ সময়ই অন্যদের কারনে ব্যর্থ হতে হত, ফলশ্রুতিতে আমার ভাগেই পড়তো সবচেয়ে কম। তা আমার তাজিনের ভাল লাগবে কেন, বিকল্প ব্যবস্থা সে বের করে ফেললো।

স্কুলের পাশে একটা একটা বিশাল জংলামত ছিল, সেখানে কেউ যেতনা, আর সেই সুযোগটা নিলাম আমরা। তাজিন আনতো রান্না করা খাবার, আর আমি দিতাম চকোলেট। ছোট খালা আমেরিকা থাকার সুবাদের আমার কাছে সেই জিনিস অনেক থাকতো, আর মফঃস্বলে সেই জিনিস তখনো সহজলভ্য না থাকায়, আমার হাতে অনেক বিশাল সুযোগ ছিল চকোলেট খাইয়ে কন্যা বশীকরণে। আমাদের এইসব কার্যকলাপ বন্ধুরা ভালই জানতো, কিন্তু তারপরেও আমার প্রতি তার নিরংকুশ পক্ষপাতিত্ব ওদের কারোই নজর এড়াতো না এবং সেই জিনিস আমার কাছে ঐ বয়সেই অনেক উপভোগ্য ছিল, একটা মেয়ের সবটুকু ভালবাসা যার জন্যে হাজার পুরুষ জনম জনম অপেক্ষা করতে পারে সেই ভালবাসা আর নিদারুন পক্ষপাতিত্ব আমি সেই বয়সেই ভোগ করেছিলাম, সেইটা নিয়ে কারো কোন অভিযোগও ছিলোনা। এমনকি তাজিনের দেখাদেখি অন্যেরাও তাদের ছেলেবন্ধু কিংবা জুটির জন্যে খাবার নিয়ে আসতো।

একদিন আমাকে খুব করে ধরে তাজিন বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল, পশুহাসপাতালের তিনতলা বিল্ডিংটা হাতের বামে রেখে সুতার মিলের সামনে দিয়ে, দুপাশে নারকেল গাছের উদ্ধত পাহাড়ায় ওদের সরকারী বাড়িটাতে। ওর আব্বা ছিল পুলিশ সুপার। বাড়ির পাশে একটা চওড়া খাল বিশাল একটা বাক্ নিয়ে বহমান, বাকটা কংক্রিট করা, দিনমান ঘোলা জল শব্দ করে সেই কংক্রিটে আছড়ে পরে, তারপরে একরাশ ক্রন্দনের সুর তুলে হারিয়ে যায়। আর আমি হারিয়ে গিয়েছিলাম সুন্দর আকাশি কালারের পেইন্ট করা তাজিনের ছোট্ট সুন্দর রুমটায়। তাজিনের সেদিন আমার কাছে একে একে উন্মোচিত করেছিল তার আশৈশব জমানো সম্পদের ভান্ডার।

তার জীবনে পাওয়া প্রথম ডাইরি, বাহারী রংপেন্সিল বক্স, এলোমেলো চিত্রকলা, পছন্দের চুলের ক্লিপ। পুতুল খেলার প্রিয় পুতুল, পুতুলের বাক্স, বাক্সে জমানো গোপন লাটিম। দেখিয়েছিল তার বিশাল বইয়ের সংগ্রহ। ওয়াল্ট ডিজনির কার্টুন, সুপারম্যান আর স্পাইডারম্যানের সংগ্রহশালা, দেখিয়েছিল আমার অজানা মিকি মাউসের ইদুর-বিড়াল দৌড়ের সেই কল্পকাহিনী। শিখিয়েছিল রুবিকস কিউবের রহস্য।

দই-মিষ্টি, নানাবিধ ফল, নুডলস মুখে তুলে খাইয়ে দিতে চেয়েছিল, আমার লজ্জার বাধার পাহাড়ে তার সে চাওয়া মিলিয়ে গেলেও আমার গোগ্রাসে খাওয়া থেমে যায়নি। সকাল পেরিয়ে দুপুর হয়েছিল, তার স্নেহময়ী মা মেয়ের একমাত্র বন্ধুকে দুপুরে না খাইয়ে আসতে দেননি। দুপুরের রৌদ্রের নিদারুন অত্যাচার, মাঝে মাঝে এক পরশ হাওয়া, সিলিং ফ্যানের মৃদু শো শো শব্দের ভেতরে দাবা খেলতে খেলতে তাজিন আমাকে শুনিয়েছিল তার জীবনের একের পর এক সব কাহিনী। একটা মেয়ের জমানো সব গল্পের ভান্ডার উজার করেছিল আমার কাছে, বেনী দুলিয়ে, কাধ ঝুলিয়ে চোখ বড় বড় করে গল্প বলা এই সদ্য কিশোরির ঠোটের কালো তিলের আকর্ষন আমি এড়াতে পারিনি, ছুয়ে দেখার অলংঘনীয় লোভ দমন করতে না পেরে তর্জনী বাড়িয়ে ছুয়ে দেখেছি, গল্পে সাময়িক বিরতি হয়েছে, ছন্দপতন ঘটেনি। পরেরদিন সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে আমাদের ভিতরে ঝগড়া হয়ে গেল, পরস্পরের প্রতি আকর্ষন বেশি থাকায় প্রত্যাশা ছিল আরো বেশি, চাওয়া পাওয়ার সামান্য স্ফুলিংগ সেই আকাশ সমান প্রত্যাশার পাহাড়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছিল, অল্পতেই ঝগড়া বিশাল হয়ে দাড়ালো, আমার জন্যে তাজিনের সযত্নে রক্ষিত জায়গাটা ছেড়ে একেবারে পেছনে বসে পড়লাম।

আমি আশায় রইলাম সে আমাকে আবার ডাকবে, সে আশায় রইলো আমি আবার তার কাছেই ফিরে যাবো। কিন্তু উভয়েই অপরের আশায় থাকতে থাকতে দিন কেটে যেতে লাগলো। একসময় আমাদের আলাদা বসে থাকাটাই স্বাভাবিক হয়ে দাড়ালো। প্রকৃতি শুন্যস্থান পছন্দ করে না, তারপরে সেখানে আবার তাজিনকে দেখানোর একটা ব্যাপার ছিল। অভিমান থেকে রাগ, রাগ থেকে ঘৃনা, ঘৃনা থেকে অপমান বোধের প্রলোভনে কিছুদিনের ভেতরেই সুমির সাথে আমার খাতির হয়ে গেল, সে হল আমার নতুন পার্টনার।

বাকি সময়টা আমি আর সুমি একসাথেই ক্লাস্ করেছি, আমাদের ভেতরেও ভাল বন্ধুত্ব হয়েছিল। আমাদের গ্রুপ সাময়িক তালভংগের বিরতিতে পুনরায় সুরময় হয়ে উঠলো, আমরা সবাই মিলে দস্যিপনার চুড়ান্তপনা করলাম। সায়েন্স প্রজেক্ট কম্পিটিশনে আমরা ফার্ষ্ট, সেকেন্ড, থার্ড সবকটা প্রাইজ বগলদাবা করে নিয়ে এলাম। সাধারন জ্ঞান প্রতিযোগিতায় সুমিকে খাতা খুলে দেখালাম, ফলস্বরুপ আশিক ফার্ষ্ট, অন্য স্কুলের এক মেয়ে সেকেন্ড আর সুমি পেল থার্ড প্রাইজ আর আমি কিছুই পেলাম না। আরেকদিন সবাই মিলে নৌকা করে ঘুরতে গেলাম বিলের ভেতরে, তারপরে পানিছিটিয়ে বিলের মাঝে নৌকা থামিয়ে সাতার কেটে সাপলা তুলে বাসায় ফিরলাম সন্ধায়, বৃষ্টি নামলেই আমরা সবাই মিলে ছাতামাথায় ঘুরতে বেরোতাম, একছাতা দুই জনে শেয়ার করে।

আমাদের অভিভাবক এবং স্যারদের প্রদত্ত অমফস্বঃসুলভ স্বাধীনতার পুর্ন সদ্ব্যবহার আমরা করেছিলাম, জীবনে কোন দিন যদি পেছনে যাবার সুযোগ থাকে নিঃসন্দেহে বার বার আমি এই জীবনেই আসতে চাইবো। তাজিনের সাথে ততদিনে অমি নামের আরেক মেয়ের কিছু খাতির হয়েছে, তারা দুইজনে মিলে একমাত্র মেয়ে গ্রুপ, যেকোন কাজে তাদের অংশগ্রহন কম, খেলাধুলায়ও তাজিন আগের মত অংশগ্রহন করেনা। আমি মাঝে মাঝে সেটা খেয়াল করতাম কিন্তু আমার ভেতরে খারাপ লাগার বোধ হতোনা। তার সেই উচ্ছল হাসি আমার কানে বাজতো, সেই বাজা কান থেকে মাথায় সেখান থেকে আর মনে আঘাত হানতোনা। সুমীর সাথে আমার বেশ ভাল একটা রিলেশন হয়ে গেল শেষ পর্যন্ত, কিন্তু সেই প্রতিকারহীন মায়াময় ভালবাসা সুমীর মাঝে আমি কখনোই পাইনি, সেই তীব্র অধিকার সে আমাকে কখনোই দেয়নি।

আর ওসবের জন্যে আমি লালায়িত ছিলামও না, কদাচিৎ কখনো মনে যদি তাজিনের কথা আসতো তবে আমি সযতনে তা এড়িয়ে চলতাম। আমি কিন্তু তাজিনকে ছেড়ে সুমীকে নিয়ে শান্তিতে ছিলাম না, জিনিসটা এরকম আমি তাজিনকে দেখাতে চাইতাম যে তাকে ছাড়াও আমি চলতে পারি। আমার জীবনে সে একচ্ছত্র নয়, সুতরাং তার উচিত আমার কাছে ক্ষমা চাওয়া, কিন্তু সে ছিল নির্লিপ্ত, তার সেই এক আকাশ নির্লিপ্ততা আমাকে আরো বেশি রাগিয়ে দিতো, আমি তাজিনকে দেখিয়ে সুমীর সাথে আরো বেশি মিশতাম। কিন্তু কিছুতেই কিছু হতোনা, শুধুমাত্র আমার রাগ ঘৃনায় রুপান্তরিত হওয়া ছাড়া। আমি তাকে এত দেখাতে চাইলেও সে সবসময়ই ছিল নীরব, সে অন্য কোন ছেলের সাথে জুটিও বাধেনি, আমাকে দেখিয়ে কিছু করার চেষ্টাও করেনি।

বরঞ্চ এক বিশাল নীরবতার পাহাড়ে নিজেকে ঘিরে দিয়েছিল। তাজিনের সাথে আমার আর কথা হয় নি, একটি মাত্র বাক্যও না। এরপরে ক্লাস এইটের বৃত্তি পরীক্ষা দিলাম, বৃত্তি পরীক্ষার পরে ছুটিতে বাড়িতে চলে আসলাম। চেনামাটি এতদিনে অচেনা হতে শুরু করেছে, বুকের ভেতরে রক্তের গর্জন স্তিমিতপ্রায়। নিজের বাড়ি আর আমাকে টানে না।

আমার মন চলে যায় সেই অন্যজমিনের পানে, অন্য হাওয়ায় মন রাঙ্গায়। ছুটি শেষ হবার অল্প আগে টাইফয়েডে আক্রান্ট হয়ে বিছানায় গেলাম, দুমাস পরে সুস্থ হয়ে স্কুলে গিয়ে দেখি তাজিন নেই, তার বাবা ট্রান্সফার হয়ে অন্য কোন জেলায় পোষ্টিং পাওয়ার কারনে তার গোটা ফ্যামিলি মুভ করেছে এবং সে আমাদের স্কুল ছেড়ে দিয়েছে। যাবার আগে নাকি আমার সাথে দেখা করতে চেয়েছিল, কিন্তু আমিতো তখন আমার অনেক দূরের নিজেদের বাড়িতে। বিদায়বেলায় সবাই তার সাথে দেখা করেছিল, বেশ কান্নাকাটিও হয়েছিল। সবাই চাদা তুলে তাকে একটা ওয়াকম্যান প্লেয়ার গিফট করেছে, সেও সবাইকেই কিছু না কিছু দিয়েছে।

আমার জন্যে সে গোপনে একটা সুন্দর ছোট্র কথাবলা পুতুল রেখে গিয়েছিল রিমনের কাছে। সেটা পাচ-ছয়টা গান গাইতে পারতো! সেই জিনিস মামার বাড়িত সোকেছে শোভা পেল, গিফটের জিনিস ফেলে দিতে মনে সায় দেয় নি বলেই। মাঝে মাঝে সেটার দিকে প্রবল রাগ আর ঘৃনা নিয়ে তাকিয়ে থাকতাম, তাজিনের উপর জমে থাকা সব রাগের ভাগীদার হত এই পুতুলটা, মাঝে মাঝে মনে হত ছুড়ে ফেলে দেই। কিন্তু কেন আবার যেন দিতাম না। মনে হত ভেংগে গুড়া গুড়া করে ফেলি এক দুর্বিনীত আর অহংকারি সুন্দরীর দেয়া উপহার, যাকে আমি কিছু দেইনি এবং সে আমাকে এটার মাধ্যমে একটা দায়ের জালে আটকে রেখেছে, এবং সেই দায় শোধে আমি নিরুপায়, কারন নিরুদ্দেশ তাজিনের কোন ঠিকানাই আমাদের কারো কাছে নেই।

মেয়েটা আমাদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে একেবারেই হারিয়ে গেল। মাঝে মাঝে তার সেই কালো তিল আমার চোখে ভাসত, ইচ্ছা করতো তর্জনী দিয়ে আবার একটু ছুয়ে দেই, কিন্তু কিভাবে দেব? সে কোথায় আছে আমি জানিনা যে! সেই ইচ্ছা আবার রাগে রুপান্তরিত হতে সময় লাগতো না। ক্রমাগত রাগ আর অনুরাগে ক্লান্ত হওয়া ছাড়া আমার আর কিছুই করার ছিলোনা। । (চলতে থাকবে আরো এক পর্ব) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.