আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পেঁয়াজের ঝাঁজ ঠেকায় কে!!!

বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...

কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজের দাম। পাইকারীদারগণ বলছেন, বিদেশে পেঁয়াজের দাম কমায় আর আমদানি বেশি হওয়ায় বাজারের তার প্রভাব পড়ছে। প্রতিবেশী ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আমদানি হয় বাংলাদেশে। ভারতে পেঁয়াজের দাম কমেছে যার প্রভাব এখন বাংলাদেশের বাজারেও পড়ছে। তাছাড়া শীত মৌসুমের নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসা শুরু করেছে।

হরতাল, অবরোধ বা পরিবহণ ধর্মঘট না থাকলে পেঁয়াজের দাম আরো সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। কিন্তু হঠাৎ করেই চলতি বছরের আগস্ট মাস থেকে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ কি? দেশে উৎপাদিত পেঁয়াজ ছাড়াও বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে ভারতীয় পেঁয়াজের অবাধ বাজার লক্ষ্য করা যায়। কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়া এভাবে পেঁয়াজের দাম বেড়ে কেজি প্রতি একশো টাকার উপরে চলে যাবার রহস্য কি? আমার কাছে পেঁয়াজের দাম বাড়ার যেসব কারণ রয়েছে বলে মনে হয় সেগুলো এরকম- ১. কোরবানীর ঈদের সময় দেশে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের প্রচুর চাহিদা বাড়ে। যা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুন বেশি। দুবৃত্ত ব্যবসায়িক সিন্ডিকেট সেই মোক্ষম টাইমে একটি কৌশলের আশ্রয় নিয়ে ব্যাটে বলে ছক্কা হাঁকিয়েছে।

২. প্রতি বছর কোরবানীর ঈদে গরম মশলার বাজার একটু গরম হয়। এবার যেহেতু গরম মশলার বাজার অনেকটা নিয়ন্ত্রণে ছিল, তাই দুবৃত্ত ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কৌশলে পেঁয়াজের উপর থেকেই মুনাফা ঘরে তুলেছে। ৩. এ বছর ভারত থেকে চোরাই পথে কোরবানীর গরু কম আসতে পেরেছে। ফলে চোরাকারবারীদের গরুতে ব্যবসা তেমন হয়নি। গরুতে ব্যবসা না হলে কি তারা মুনাফা তুলবে না? তাই পেঁয়াজের উপর সেই ঝাঁজ মিটিয়েছে তারা।

৪. ভারত থেকে চোরাই পথে গরু কম আসায় চোরাই পথের পেঁয়াজও তেমন আসতে পারেনি। যা পেঁয়াজের দাম বাড়াতে ব্যবসায়ীদের উৎসাহিত করেছে। ৫. চোরাই পথে পেঁয়াজ কম আসায় পেঁয়াজ আমাদানি খরচে বেড়ে গেছে। যা পেঁয়াজের দাম বাড়ার ক্ষেত্রে আরেকটি ভূমিকা পালন করেছে। ৬. আরতদারগণ সেই সুযোগে পেঁয়াজের মজুদ বাড়িয়ে দিয়েছে, যা পেঁয়াজের দাম বাড়াতে পাইকারী/খুচরা ব্যবসায়ীদের আরো উসকে দিয়েছে।

৭. আন্তর্জাতিক বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছু বাড়তির দিকে ছিল, সেই সুযোগটি স্থানীয় দুষ্টচক্র শতভাগ কাজে লাগিয়েছে। ৮. প্রধান বিরোধীদলের ডাকা ঘন ঘন হরতাল, অবরোধ আর পরিবহণ মালিকদের অকারণে পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে সারা দেশে পেঁয়াজের স্বাভাবিক চলাচল বাধাগ্রস্থ হয়েছে। যা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির একটি অন্যতম কারণ। ৯. সরকারিভাবে খোলাবাজারে পেঁয়াজ বিক্রির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির আরেকটি অন্যতম কারণ। পরবর্তী সময়ে অবশ্য খোলাবাজারে সরকারি উদ্যোগে পেঁয়াজ বিক্রির উদ্যোগ পেঁয়াজের দাম কমানোর কৌশল না হলেও মানুষের আস্থা অর্জনের কৌশল ছিল।

যে কৌশলটি দুষ্টু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের সবাই নজরদারীতে রেখে শতভাগ সুযোগ নিয়েছে পেঁয়াজের আরেক দফা দাম বাড়িয়ে। ১০. পেঁয়াজ একটি পচনশীল খাদ্যপন্য। স্বল্প সময়ে এটাকে মজুত করা সম্ভব হলেও দীর্ঘ মেয়াদে এটাকে মজুদ করাটা ঝুঁকিবহুল। ফলে স্বল্প সময়ের মুনাফা বৃদ্ধির কৌশল হিসেবে পেঁয়াজ মজুদ করা হয়েছিল। আর দাম বাড়িয়ে এটা থেকে মুনাফা ঘরে তোলার পর এখন দাম কমা শুরু করেছে।

এখন প্রশ্ন হল, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় অনেক দ্রব্য থেকে দুষ্টু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট এবার পেঁয়াজ নিয়ে কেন বাজার অস্থির করলো? এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে আপনাকে অর্থনীতির বিশেষজ্ঞ হবার প্রয়োজন নাই। চোরাকারবারীদের দৌরাত্ম সম্পর্কে একটু ধারণা থাকাই যথেষ্ট। চোরাকারবারীরা মিডিয়ার পেছনেও ইনভেস্ট করে। মৌসুম এবং বাজারে চাহিদা বুঝেই তারা কোন দ্রব্যের দাম নিয়ে খেলবে, সেটি আগে ভাগে ঠিক করে। ভারতের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ে চলমান ফালানি হত্যা মামলা'র পর কোরবানী ঈদের সময় যে ভারত যে চোরাই পথে গরুর উপর কড়াকড়ি আরোপ করবে এটা চোরাকারবারীরা জানতো।

গরু রান্না করতে যেসব মশলা লাগবে, বাজারে সেসব মশলার সরবরাহ মোটামোটি স্বাভাবিক ছিল। কিন্তু পেঁয়াজের মৌসুম না হওয়ায়, পেঁয়াজের একটি কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করা দুষ্টু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের পক্ষে যতোটা রাতারাতি সম্ভব, ততোটা অন্য মশলা দিয়ে অতোতা সহজ নয়। গরম মশলার বাজার গরম হলেও ভোক্তা তখন গরম মশলা কেনা অনেকটা কমিয়ে দেয়। কিন্তু পেঁয়াজ খুবই প্রয়োজনীয় দ্রব্য। এটার ভোগ রাতারাতি কমানো সম্ভব নয়।

তাছাড়া গরুর মাংসে পেঁয়াজের প্রয়োজনটা সবচেয়ে বেশি। সুতরাং দুষ্টু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সেই সুযোগটি এবার গ্রহন করেছে। সেজন্য তারা মিডিয়ায় একটি উড়ো খবর প্রচার করার চেষ্টা করেছে। মিডিয়া বুঝে হোক আর সিন্ডিকেটের পয়সার জোরে হোক, পেঁয়াজ নিয়ে একটু বাড়াবাড়ি রকম খবর প্রচার করে ব্যবসায়ীদের সেই গোপন ইচ্ছাকে আরো শক্তি যুগিয়েছে। ফলে সারা দেশে হঠাৎ করেই পেঁয়াজের দাম লাফিয়ে একশো'র উপরে চলে গেছে।

যদি আমাদের গোয়েন্দা বিভাগ ঠিক মতো কাজ করত, হয়তো দু'চারজন মিডিয়া ব্যবসায়ীদের এই পেঁয়াজের গলদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ হাতে নাতে ধরতে পারতো। কিন্তু আমাদের দুষ্টু সিন্ডিকেট টাকা দিয়ে সব পথ কিনে রাখে। তারা মিডিয়াকে টাকা দেয়। পেঁয়াজের উপর গরম খবর প্রচার করার জন্য। পরিবহণ মালিকদের টাকা দেয় একটা পরিবঞন ধর্মঘট চালাতে।

হয়তো দেশের প্রধান বিরোধীদলও পেঁয়াজের দাম বাড়ায় অনুঘটকের ভূমিকা পালন করেছে, সেখানে গোপন লেনদেন থাকাটা বিচিত্র কিছু নয়। কিন্তু আমরা পেঁয়াজের ভারী ঝাঁজ দেখলাম এটাই আসল খবর। শীত আসছে। এখন আর শত চেষ্টা করেও পেঁয়াজ কৌশল কাজে লাগবে না। এটা দুষ্টু সিন্ডিকেটও জানে।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.