মার্কিন কংগ্রেসের পর বাংলাদেশের নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। গত বৃহস্পতিবার রাতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে আলোচনার পর একটি প্রস্তাবনাও পাস হয়েছে। এ প্রস্তাবনায় নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিতে সব পক্ষকে শান্ত থাকা ও নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনার আহ্বান জানানো হয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ওয়েবসাইটে গতকাল প্রকাশিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের আগে ও পরে সহনশীলতা প্রদর্শন এবং শান্ত থাকার জন্য পার্লামেন্ট সদস্যরা সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে। পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।
পার্লামেন্ট সদস্যরা আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের এ সময়ে সংঘাতের পথ এড়িয়ে চলবে।
তবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে গৃহীত মূল প্রস্তাবে ১৫টি অনুচ্ছেদ আছে। প্রত্যেকটি অনুচ্ছেদে উলি্লখিত বাক্যগুলো সর্বসম্মতিক্রমে পার্লামেন্টের সদস্যরা গ্রহণ করেছেন। এতে বলা হয়, ১. বাংলাদেশের বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ডাকা হরতাল-অবরোধ এবং সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিরোধী দলের বিরোধে দৈনন্দিন জনজীবনে বিপর্যয় নেমে আসায় পার্লামেন্টের সদস্যরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ২. বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থার বিষয়ে সংসদে আলোচনা করে সর্বসম্মত সমাধানে আসতে না পারার নিন্দা জানিয়েছেন পার্লামেন্টের সদস্যরা।
কারণ বিশ্বের বেশিরভাগ গণতন্ত্রই এ ধরনের পরিস্থিতির মোকাবিলা করে থাকে। ৩. বাংলাদেশকে স্থিতিশীল ও বহুমতের মানুষের সমাজ হিসেবে গণ্য করা হলেও কয়েকটি বিশেষ স্বার্থান্বেষী গ্রুপ তাদের নিজেদের স্বার্থে সমাজের মধ্যে অস্থিতিশীলতা নির্বাচনের আগে-পড়ে অস্থির পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। ৪. পার্লামেন্ট সদস্যরা বাংলাদেশের সব পক্ষকে নির্বাচন বয়কট না করতে আহ্বান জানাচ্ছে। কারণ এতে জনগণ রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখে পড়বে এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও উন্নয়ন কাজে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি, সহস াব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, নারী ক্ষমতায়ন ও শ্রমিক অধিকার রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বাধাপ্রাপ্ত হবে। ৫. পার্লামেন্টের সদস্যরা নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে আগামী সাধারণ নির্বাচন সম্পূর্ণ স্বচ্ছভাবে আয়োজনের।
সেখানে নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনকে পার্লামেন্ট সদস্যরা সাধুবাদ জানিয়েছে এবং বলেছে, রাজনৈতিক দল ও প্রতিনিধিদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য গ্রহণযোগ্য মাপকাঠি নির্ধারণ করতে হবে। ৬. বাংলাদেশের সব পক্ষের প্রতি নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন সময়ে সহিংসতা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। ৭. একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্যরা। ৮. বাংলাদেশে ক্রমেই বাড়তে থাকা মৃত্যুদণ্ডের নিন্দা জানাচ্ছেন ইইউ পার্লামেন্টের সদস্যরা। সেই সঙ্গে ২০০৯ সালে সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় বিশাল সংখ্যক মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিচারের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে পুনর্বিবেচনার সুযোগ খুঁজতে আহ্বান জানানো হচ্ছে।
৯. সব মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে পার্লামেন্ট সদস্যরা বাংলাদেশের সরকারের প্রতি নতুন একটি সর্বোচ্চ সাজার মাপকাঠি খুঁজতে অহ্বান জানাচ্ছে। ১০. মানবাধিকার সংগঠনগুলোসহ বাংলাদেশের সুশীল সমাজের প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। কারণ বাংলাদেশের উন্নয়নে এ সংগঠনগুলোর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ১১. শ্রমিক নেতা আমিনুল ইসলাম ও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনীর হত্যাকাণ্ডের বিচারসহ অন্যান্য মানবাধিকার হরণকারীদের হত্যাকাণ্ডের জন্য দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে স্বাধীন, স্বচ্ছ তদন্ত চালাতে বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পার্লামেন্ট সদস্যরা। ১২. রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশ সরকার ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও-এর উদ্যোগে সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের ত্রিপক্ষীয় উদ্যোগকে স্বাগত জানায় ইউরোপীয় পার্লামেন্ট।
১৩. ট্রেড ইউনিয়নের রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ প্রতিনিধিত্বে বাধ্যবাধকতা পুনর্বিবেচনা, ইপিজেড এলাকায় শ্রম আইনের প্রয়োগ এবং শ্রমিকদের ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনগুলোকে সঠিকভাবে আলোচনার সুযোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছে পার্লামেন্ট সদস্যরা। ১৪. জাতিসংঘকে পূর্ণ সহায়তাকারী এবং জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের নীতি পালনকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে দেখতে আগ্রহী ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। ১৫. ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্টের প্রতি গৃহীত প্রস্তাবনা জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিল, বাংলাদেশ সরকার ও সংসদ এবং ইউরোপীয় কাউন্সিল ও কমিশনের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে পেঁৗছে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে পার্লামেন্ট সদস্যরা। উল্লেখ্য, ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রভাবশালী দল ইউরোপিয়ান পিপলস পার্টি ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি এ প্রস্তাবনাটি পার্লামেন্টে উত্থাপন করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।