আল্লাহ মহান, যাহা বলিব সত্য বলিব।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করেছিল বিপথগামী একদল সেনাসদস্য। ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনির ফাঁসির রায় কার্যকর হওয়ার পর একই পরিণতির আশঙ্কায় বাকি ছয় খুনি বারবার অবস্থান বদল করছেন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন।
পলাতক খুনিরা হলো
লে. কর্নেল (বরখাস্ত) নূর চৌধুরী
মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম
লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ
লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী
ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ ও
রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৬ আসামিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সব ধরনের কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে হত্যাকারীদের ফিরিয়ে আনারও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করে সার্বিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে পলাতক আসামিদের অবস্থানরত যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাসহ ৫টি দেশের সরকারের কাছে নতুন করে চিঠি দেওয়া হবে। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের বিষয়ে দেশে ফিরিয়ে আনতে গঠন করা টাস্ক ফোর্সের ১৩তম বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, বৈঠকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেম মাজেদের দুই জামাতাকে বিমান বাহিনীর অপারেশন বা গুরুত্বপূর্ণ পোস্টিং না দিতে বিমান বাহিনী প্রধানকে জানাতে এনএসআইকে বলা হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক ৭ জন আসামির মধ্যে ৬ জন এখনও পলাতক আছেন। এদের মধ্যে আজিজ পাশা মারা গেছেন। পলাতক ৬ আসামি হলেনÑ লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ, মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম, মেজর (অব্যাহতি) এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, রিসালদার মোসলেহ উদ্দিন, লে. কর্নেল (অব্যাহতি) এ এম রাশেদ চৌধুরী ও ক্যাপ্টেন (অব্যাহিত) আবদুল মাজেদ।
বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, কানাডায় অবস্থানরত নূর চৌধুরী ও যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত রাশেদ চৌধুরীকে মানবতাবিরোধী অপরাধী হিসেবে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর প্রতি আবেদন জানানো হবে।
নূর চৌধুরী ও রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ জানান, ক্যানাডায় নূর চৌধুরীর করা রিস্ক এসেসমেন্ট আবেদনের নিষ্পত্তি হলে তাকেও ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইতিমধ্যেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিদেশি মিশনের সহায়তায় মানবতা বিরোধী অপরাধী হিসেবে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার আবেদন জানানো হবে। তাদের জানানো হবে এ হত্যাকারীরা নারী ও শিশুদের খুন করে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, রাশেদ চৌধুরীর বিষয়েও যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সরকারের কাছে আবেদন জানানো হবে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডাকে জানানো হবে তাদের দেশে ফিরিয়ে এনেই ফাঁসি দেওয়া হবে, এমনটি ভাবা ঠিক নয়। তাদের সর্বোচ্চ আদালতে আপিল, রিভিউ পিটিশন করার এবং রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
পলাতক দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে যে আইনজীবী নিয়োগ করা আছে তাদের মাধ্যমে নূর চৌধুরী ও রাশেদ চৌধুরীকে ফিরিয়ে আনারও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, কানাডায় নূর চৌধুরী এবং আমেরিকায় রাশেদ চৌধুরীর অবস্থান নিশ্চিত হলেও অন্যরা কোথায় কীভাবে রয়েছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
আইনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় পলাতক মুত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের সম্পত্তি চিহ্নিত করতে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নিবন্ধন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শককে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, দেশে তাদের কোথায় কোথায় সম্পদ রয়েছে। রাজউকের চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে ঢাকার কোথায় তাদের সম্পত্তি রয়েছে তার হিসাব দেওয়ার জন্য।
আর বাংলাদেশ ব্যাংকে বলা হয়েছে, তাদের কোথায় কোথায় ব্যাংক হিসাব রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের কিছু সম্পদ চিহ্নিত করা হয়েছে। সব সম্পদ ও ব্যাংক হিসাব যাচাই-বাছাই করে কয়েকদিনের মধ্যেই সম্পত্তি ও সম্পদের হিসাব জানানো হবে।
টাস্কফোর্সের সভাপতি আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত টাস্কফোর্সের ১৩তম বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সি কিউ কে মুশতাক আহমেদ, আইন মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব কাজী জহুরুল হক, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকারসহ পররাষ্ট্রসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ফিরিয়ে আনার সহায়তা চেয়ে নতুন করে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, লিবিয়া, ভারত ও পাকিস্তান সরকারকে দ্রুত চিঠি দেওয়া হচ্ছে।
এর আগেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কয়েক দফা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের চিঠি দেওয়া হয়। আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা গিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টি এড়িয়ে গেলেও কানাডা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তিকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়া সম্ভব নয়। এ অবস্থাতে নূর চৌধুরী কানাডা আদালতে আশ্রয় প্রার্থনা করলে কানাডার দুটি আদালত তার আবেদন খারিজ করে দেন। নূর চৌধুরীকে আনতে আদালত বা সংসদের সিদ্ধান্তের প্রয়োজন নেই।
এখন শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হলেই তাকে দেশে আনা যাবে বলে পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানান। এর আগে গত ২১ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিদের আইন মোতাবেক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। টাস্কফোর্সের ১২তম সভায় বিদেশে পালিয়ে থাকা আসামিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার কার্যকর করতে বিদেশি মিশনকে তৎপর হওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়। বিদেশে বাংলাদেশি মিশনের মাধ্যমে পালিয়ে থাকা আসামিদের পাসপোর্ট ভিসা না দেওয়ার ব্যবস্থা নিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেয় টাস্কফোর্স। এসব সিদ্ধান্তের ফলোআপ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈঠকে অবহিত করে।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ফিরিয়ে আনতে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় দুটি আইনি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নিয়োগ দেয় সরকার।
আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, সরকার বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার পলাতক আসামিদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে পলাতক আসামিদের সম্পত্তির খোঁজ করতে বাংলাদেশ ব্যাংক, নিবন্ধন পরিদফতর ও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।
গতকাল আইনমন্ত্রীর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার অগ্রগতি পর্যালোচনার ১৩তম বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আইনমন্ত্রী বলেন, 'বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছয়জন পলাতক আসামির সম্পত্তির সন্ধান করা হচ্ছে।
সন্ধান পাওয়া গেলে তা বাজেয়াপ্ত করা হবে। ' পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।