আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিশ্বব্যাপী ইসলামী আন্দোলন কি পরাজিত হচ্ছে? লেখকঃ তিউনিশিয়ার আন নাহদা পার্টির নেতা রশিদ আল ঘানুচি



পরিসংখ্যানিক তথ্য অনুযায়ী ইসলাম হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্রমবর্ধমান ধর্ম এবং তার অনুসারীরা ধর্মের কারণে তাদের মূল্যবান ধন-সম্পদ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। কাজেই পলিটিক্যাল ইসলাম বা ইসলামীক মুভমেন্ট যাই বলিনা কেন এটাই হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের মাঝে সবচেয়ে বড় আন্দোলন যার রয়েছে ধর্মীয় ভিত্তি। আধুনিক যোগাযোগ-প্রযুক্তির কারণে ইসলামীক মুভমেন্ট সম্প্রসারিত হচ্ছে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত গতিতে। আর এটি হচ্ছে সেকিঊলারাইজেশনের ক্রমাগত বৃদ্ধির একটি ফলাফল। ফলে মানুষ সেকিঊলারাইজেশনের পরিবর্তে সংস্থা-সংগঠনের এমন একটি কেন্দ্রের সন্ধান করেছে যেখানে দেহ ও আত্মার চাহিদা, ব্যক্তি ও সমষ্টির চাহিদা, ধর্মীয় ও পার্থিব চাহিদা এবং জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক সকল কিছুরই সন্নিবেশ আছে।

ইসলামের যে সর্বব্যাপী ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি তাতে বর্তমান সমাজের প্রার্থিত এসব বৈশিষ্ট্যের সব কিছুই বিদ্যমান। আর এসব কারণেই ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন ও ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা, অপপ্রচার এবং দানবীয় নানা দোষ যুক্ত করার পরও বিভিন্ন পেশা ও সংস্কৃতির মানুষ ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে। ইসলামীক আন্দোলন সব সময় বিশ্বাস করে- ইসলাম মানুষের সহজাত ধর্ম। তাই ইসলামী আন্দোলন মানব সমাজের সমস্যা সমাধান করতে চায় এবং মানব সমস্যার যে কোনো সমাধানে অবদান রাখতে চায়। আর একাজ করতে গিয়ে ইসলামী আন্দোলন ইসলামের চিন্তা-দর্শনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ যে কোনো সভ্যতার অর্জিত অভিজ্ঞতা-যা মানব সমাজের সামষ্টিক স্বার্থ অক্ষুণ্ন রাখে তার সাহায্য গ্রহণ করে।

ইসলামী আন্দোলন মানব জাতির নীতি চেতনা ও বিবেকের সবচেয়ে নিকটবর্তী। ইসলামী আন্দোলনের সহজাত আবেদন নিঃসন্দেহে সকল বিতর্ক ও অপপ্রচারকে ছাড়িয়ে যাবে। বিগত অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময়ব্যাপী ইসলামী আন্দোলনগুলো বিশ্বব্যাপী ক্রমাগত নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে এবং বিরামহীনভাবে এ নির্যাতনের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ইসলামী আন্দোলনের উপর ক্রমাগত নির্যাতনের অনেক ইতিবাচক ফলাফল রয়েছে। যেমন- আন্দোলনের একটি উত্তরাধিকার প্রজন্ম তৈরি হয়েছে।

ইসলামপন্থী আন্দোলনের মধ্যে বিদ্যমান দল বা গোষ্ঠীগুলো নিজেদের মধ্যে পরস্পর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে যুক্ত হচ্ছে এবং বিগত তিনটি জেনারেশনের ভেতর ইসলামী আন্দোলনের অংশীদারিত্বমূলক অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে। ইসলামী আন্দোলনের ওপর চালানো অকথ্য নির্যাতনের ফলে তারা অতিরিক্ত সুবিধা হিসেবে অন্য যে কোনো রাজনৈতিক দলের তুলনায় জনগণের সহানুভূতি অর্জন করেছে। ইসলামী আন্দোলন শুধুমাত্র জনগণের আর্দশগত ও সংস্কৃতিগত চিন্তাকেই সম্মান করছে না- বরং জনগণের মৌলিক মানবাধিকার ও ভোটের যে অধিকার রয়েছে তা সংরণ করার জন্য লড়াইও করছে বিশেষ করে মিসরের ক্ষেত্রে। মুসলিম ব্রাদারহুড আরব বিপ্লবের যে চেতনা ও প্রত্যাশা ছিল- যেমন মিডিয়ার স্বাধীনতা, বহুত্ববাদি রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং রাষ্ট্রের সকল কাজে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ফিরিয়ে আনা- ইত্যাদির জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে । অন্যদিকে ওয়াফদা পার্টিসহ অন্যান্য তথাকথিত উদারপন্থী দলগুলো আরব বিপ্লবের চেতনার বিপরীতে দাঁড়িয়েছে।

তারা সামরিক প্রশাসনের সহযোগিতা নিচ্ছে। আবার জনগণের বিপরীতে সামরিক ক্যু-কে সহযোগিতা ও সমর্থন দিচ্ছে । জনগণের ভোটাধিকার যখন সামরিক শাসক ও তার বন্ধুকের গুলির সামনে ছিনতাইয়ের স্বীকার হচ্ছে, জনগণের ইচ্ছা যখন পদদলিত হচ্ছে, মানুষ যখন তার বাক-স্বাধীনতা হারাচ্ছে, জেলখানাগুলো যখন রাজনৈতিক দলের কর্মীদের দ্বারা নির্বিচারে ভর্তি হচ্ছে, যখন বেসামরিক জনগণ অকারণে গুলির স্বীকার হচ্ছে তখন তথাকথিত উদারতাবাদী দলগুলো এ সবের পেছনে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্যভাবে সহযোগিতা করছে। তাদের এ অবস্থান ইসলামী আন্দোলনের বিপরীত। তাদের নৃশংস সামরিক ক্যু ও তার সমর্থনকে উদারতাবাদ, প্রগতিশীল, জাতীয়তাবাদী অথবা সেকিউলারের বিজয় বলতে পারি? অথবা ইসলাম তথা ইসলামী আন্দোলনের পরাজয় বা মৃত্যু বলে বিবেচনা করতে পারি? প্রকৃতপক্ষে মিসরে যা ঘটেছে তা কোনোভাবেই ইসলামী আন্দোলনের পতন নয়।

এটি বরং আরব জাতীয়তাবাদ ও সেকিউলারদের পরাজয় । মিসরের সামরিক এই ক্যু ইসলামী আন্দোলনের জন্য অনেক বাড়তি সূযোগ নিয়ে আসবে। ইসলামী আন্দোলন রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের গৃহীত নীতির পুনর্মূল্যায়ন করতে পারবে এবং তাদের ভুলগুলো সংশোধন করতে পারবে। মিসরসহ যে কোনো দেশের ক্ষেত্রেই ইসলামী আন্দোলন বিরোধী দলগুলোর সাথে আরও যোগাযোগ বাড়াতে শিখবে। বিগত ষাট বছরে মিসরে মোট শাহাদাতের সংখ্যা ষাট (৬০) এর বেশি নয়।

কিন্তু জেনারেল সিসির হাতে শুধুমাত্র মিসরের প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের সামনেই এর চাইতে বেশি লোক শহীদ হয়। এর পরেই আমরা শুনতে পেলাম হাজার হাজার লোকের শাহাদাতের সংবাদ, আহত হবার এবং জেলে যাবার ঘটনা। জামাল আব্দেল নাসের এবং জেনারেল সিসির মধ্যে পার্থক্য এই যে, জামাল আব্দেল নাসের বিরোধী দলের ওপর একদিকে যেমন নির্যাতন করেছে অন্যদিকে তেমনি জনগণের জন্য পপুলার অনেক মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। রাজনৈতিক বিরোধীদের ওপর চালানো দমন-নিপীড়ন ঢাকবার জন্য গৃহীত এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য আকর্ষণীয়, চিত্তাকর্ষক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রকল্প। যেমন- কৃষি সংস্কার প্রকল্প, শিক্ষা-সংস্কার প্রকল্প, আল-আযহার সম্প্রসারণ প্রকল্প, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা, আরব জাতীয়তাবাদের জন্ম, সাম্রাজ্যবাদ-বিরোধিতা, জোট-নিরপেক্ষ আন্দোলন গঠনে ভূমিকা পালন ইত্যাদি।

বিপরীত পক্ষে, আল সিসি জনগণের জন্য দৃশ্যমান কোনো প্রকল্প গ্রহণ করতে পারেনি। আল সিসি তার দমন-পীড়ন ঢাকবার জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক শঠতা অবলম্বন করেছে এবং একজন নির্বাচিত বৈধ প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে হামাসের সাথে সহযোগিতার অভিযোগ এনেছে। আধুনিক যুগে স্বৈরশাসকদের নির্যাতন সংঘটিত হচ্ছে হাজারো শক্তিশালী স্যাটেলাইটের আলোক রশ্মির সামনে- যা লুকানো অসম্ভব। অতীতে ফারাও সম্রাটদের সময় এ জাতীয় নির্যাতন সংঘটিত হতো অনেকটা সংগোপনে এবং পর্দার অন্তরালে। ফলে তথ্য গোপনের মাধ্যমে ফারাও রাজা জনগণের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ রাখতে সক্ষম হয়েছিল যা সিসির পক্ষে সম্ভব নয়।

ফলাফল : উপরোক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে আমি পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি যে, মিসরসহ কোনো দেশেই পলিটিক্যাল ইসলাম বা ইসলামী আন্দোলন পরাজিত ও ব্যর্থ হয়নি। অতীতের যে কোনো সময়ের চাইতে দর্শন ও চিন্তার জগতে ইসলাম আজ আরো শক্তিশালীভাবে দৃশ্যমান। --- সংগৃহীত ও সংকলিত

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.