আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার শাবিপ্রবি

------

সে ১৯৯৭ সালের কথা। এক মোহে ছুটে গিয়েছিলাম সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। মোহটা ছিল এরকম- -দেশের একমাত্র বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় -সেমিস্টার পদ্ধতি -গ্রেডিং পদ্ধতিতে ফলাফল -রাজনীতি মুক্ত -অত্যাধুনিক সিলেবাস -ফাইবার অপটিক ক্যাবলে সংযুক্ত সমৃদ্ধ কম্পিউটার ল্যাব -সর্বোপরি আমার একজন প্রিয়মানুষ সে ক্যাম্পাসে। তিনি হলেন ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল ৯৯ সালে দীর্ঘ ন'মাস নামকরণ বিরোধী আন্দোলনে আমাদের পড়াশোনার যে ক্ষতি হয়েছিল তার কিছুটা গ্লানি আমরা বয়ে বেড়াচ্ছি। তারপর শাবিতে মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য তৈরি নিয়েও একটা কতিপয় গ্রুপ বিরোধীতা করে আসছিল।

মুক্তিযুদ্ধের চেতানায় ভাস্কর্য নির্মিত হয়েছে। এখন আরেকটি নতুন খেলার অবতারনা। যাদের নাম সচেতন সিলেটবাসী। শাবি'র প্রাক্তন শিক্ষার্থী হিসেবে শাবি সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো আমাকে খুব নাড়া দেয়। এ ইস্যুটাও ব্যতিক্রম কিছু নয়।

শাবিপ্রবি'র ভর্তি পরীক্ষা স্হগিত করা হয়েছে। কারন হিসেবে বলা হয়েছে, সিলেটের বিভিন্ন মহল থেকে নতুন গুচ্ছ পদ্ধতি ভর্তি বাতিল দাবী করার বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ তা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। "সচেতন সিলেটবাসী' নামের একটি সংগঠন এ পদ্ধতি বাতিলের আন্দোলন করে আসছিল। এ পদ্ধতিটি নাকি সিলেটী ছেলেমেয়েদের জন্য বৈষম্যমূলক এবং বঞ্চিত হবার আশংকা রয়েছে। শাবি'র ভর্তি কমিটির পক্ষ থেকে দেয়া ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, সমন্বিত এই ব্যবস্থায় কোনো এলাকার শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত হওয়ার কারণ নেই।

কেবল শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি লাঘবেই এ উদ্যোগ। কেবল শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে ৪৩ হাজার ৮২৯ জন শিক্ষার্থী। আর যশোরের জন্য ৫ হাজার ৮২৫ জন শিক্ষার্থী। আর দুটি বিশ্ববিদ্যালয়েই ভর্তির আবেদন করেছে- এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৫ হাজার ৬১৩ জন। এদের মধ্যে ৬ হাজার ৮১৮ জন যশোর কেন্দ্রে বসে শাহজালালে ভর্তি পরীক্ষা দিতে চান।

আর সিলেট কেন্দ্রে বসে যশোরের জন্য পরীক্ষা দিতে আগ্রহী ৩ হাজার ২০৩ জন শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ব্যাখায় সন্তুষ্টি না হয়ে ভর্তি পরীক্ষা প্রতিহতের ঘোষণা দেয় ‘সচেতন সিলেটবাসী’ নামে আন্দোলনকারীরা। সচেতন সিলেটবাসীদের এ রকম বক্তব্য আমাদেরকে সত্যিকার অর্থেই মর্মাহত করেছে। অন্যান্য জেলার শিক্ষার্থীরা যেমন এই পদ্ধতিতে পরীক্ষায় অংশগ্রহন করবে ঠিক তেমনি সিলেটী শিক্ষার্থীরাও। এখানে বৈষম্য বা বঞ্চিত হবার কিছুই নেই।

কিন্তু এ আন্দোলনের নেপথ্যে আরেকটি কারন জানা গেছে। সিলেটবাসীরা চাচ্ছেন ৫০শতাংশ কোটা। এই কোটা পদ্ধটি যাতে বহাল না হয় সেজন্য শাবির শিক্ষার্থীরা অযৌক্তিক "৫০% কোটা" দাবীর বিরুদ্ধে এবং "সমন্বিত ভর্তি প্রক্রিয়া" বহাল রাখার দাবীতে মানববন্ধন করেছে। তাদের দাবী আমরা SUSTIAN রা মনে করি রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়িক স্বার্থে কিছু মূর্খ লোকের অন্যায় এবং অযৌক্তিক দাবির মাধ্যমে আমাদের সাধারন সিলেটিদেরকে অপমান করা হচ্ছে । এমতাবস্থায় এই অযৌক্তিক দাবির বিরুদ্ধে আমরা একটি মানববন্ধন করতে যাচ্ছি ।

যদিও এটা organize করবে SUSTIAN রা , কিন্তু এতে দলমত, নির্বিশেষে যে কেউ অংশ নিয়ে আমাদের দাবিকে আরও জোরালো করতে সহযোগিতা করতে পারেন । ইতিমধ্যে জানতে পেরেছি, ইয়াসমিন ম্যাডাম এবং জাফর ইকবাল স্যার পদত্যাগ করেছেন। এটা আমাদের জন্য খুবই কষ্ঠের ব্যাপার। বিশ্ববিদ্যালয় কারো ব্যাক্তিগত সংগঠন, প্রতিষ্ঠান নয়। সচেতন সিলেটবাসী যেসব দাবী দাওয়া পেশ করেছে তা এ বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো পিছিয়ে দেবে।

যেখানে কালচারাল এক্সচেন্জ হবে, সুস্হ ও মুক্তবুদ্ধির জ্ঞানচর্চা হবে তা নাকরে এক ঘরে করার প্রবণতা নিয়ে আঞ্চলিকতা ও ইজমকে কাজে লাগানোর প্রচেষ্ঠা শুরু হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এটা শুভকর নয়। আজ বলছে ৫০ শতাংশ সিলেটী কোটা, কাল বলবে শিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে রাজনীতি ও স্বেচ্চাচারী মনোভাব আমাদের পরিহার করা উচিত। সিলেটী ছেলেমেয়েদের এতো দূর্বল ভাবার কারণ আমি খূঁজে পাচ্ছিনা।

অন্যান্য জেলার ছেলেমেয়েদের মতো তাদের মেধা ও মনন রয়েছে। আমি যখন শাবির শিক্ষার্থী ছিলাম তখন সিলেট বিভাগের অনেক বন্ধুরা আমাদের সাথে পড়াশোনা করেছে। তারা ভাল রেজাল্ট করেছে, এখন হুট করে কেন ৫০ শতাংশ সিলেটী কোটার দরকার হয়ে পড়লো। ঢাকা স্হানীয় বাসিন্দারা তো বলেনা ঢালা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের ছেলেমেয়েদের ৫০% ভর্তি কর। কিংবা ময়মনসিংহ কৃষি বিদ্যালয়ে, অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদালয়ে।

তাহলে সিলেটকে কেন একটা আলাদা প্রদেশ বানাতে হবে। আমার কাছে সবকিছু কেমন যেন উল্টাপাল্টা লাগছে। তাদের দাবীটা কখন যে এমন হয়ে যায়- "১০০% ছিলেটী ছাত্র ভর্তি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণ "ছিল্‌টী বিশ্ববিদ্যালয় করা হউক। "

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.