সাতজন নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দেশজুড়ে ১৮ দলের ডাকা টানা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের প্রথম দিন। সাতক্ষীরায় যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের নেতা-কর্মীরা। বগুড়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন যুবদল নেতা। কুমিল্লায় পুলিশের গুলিতে বিএনপি কর্মী ও মাথায় গুলি লেগে নিহত হয়েছেন এক বিজিবি সদস্য। সিরাজগঞ্জে পুলিশের টিয়ার শেল বুকে লেগে পানিতে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক পথচারীর।
ওই পথচারীকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে বিএনপি। ফেনীর শহিদুল্লাহ কায়সার সড়কে অবরোধকারীদের ইটের আঘাতে মারা যান সিএনজি অটোরিকশা চালক। এসব ঘটনায় বগুড়ায় আজ বুধবার ও সিরাজগঞ্জে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল-সন্ধ্যা এবং কুমিল্লায় একই দিন অর্ধদিবস হরতালের ডাক দিয়েছে স্থানীয় বিএনপি। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৮ দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিপুলসংখ্যক ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় অবরোধকারীরা।
সহস্রাধিক রাউন্ড শটগান, টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছোড়ে পুলিশ। বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করা হয়। অবরোধকারীরা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় বাস-ট্রাক, সিএনজি অটোরিকশাসহ বহু যানবাহন। এসব ঘটনায় আহত হন সাংবাদিক ও পুলিশসহ তিন শতাধিক ব্যক্তি। গ্রেপ্তার করা হয় শতাধিক।
নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর :
সাতক্ষীরা : ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের প্রথম দিন গতকাল জেলায় এক যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে ও এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির। বেলা ১১টা দিকে কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান বাবুকে পিটিয়ে হত্যার মাত্র ছয় ঘণ্টার ব্যবধানে কুপিয়ে হত্যা করা হয় একই ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলামকে। কলারোয়া থানার ওসি শাহ দারা জানান, যুবলীগ নেতা মাহবুবুল হাসান বাবু ১১টার দিকে সলিমপুর থেকে মোটরসাইকেলে কলারোয়া বাজারে ভাইয়ের দোকানে আসছিলেন। পথে আলাইপুর গ্রামে পেঁৗছালে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা তার ওপর লাঠিসোটা দিয়ে হামলা চালিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে ফেলে রেখে যায়। নিহত বাবু কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
তিনি উপজেলার সলিমপুর গ্রামের গোলাম রহমান মোড়লের ছেলে। এদিকে বিকেল ৪টার দিকে একই ইউনিয়নের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করেছে একই চক্র। নিহত রবিউল দেয়াড়া গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে। এলাকাবাসী জানান, মাহবুবুর রহমান বাবু হত্যার খবরে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের ক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা দেয়াড়া বাজারে বিএনপি-জামায়াত মালিকানাধীন ১০-১২টি দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে। এ ঘটনার জের ধরে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা রবিউল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করে বিএনপি ও জামায়াত-শিবির।
অন্যদিকে বেলা ১২টার দিকে আশাশুনির বেউলা গাজীর হাট এলাকায় জামায়াত-শিবির পিটিয়ে জখম করেছে আওয়ামী লীগ কর্মী শরিফ মাহমুদ ও ফজলুর রহমানকে। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। সূর্য ওঠার পর থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে পুরো জেলা। সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কের ইটাগাছা মোড়ে জামায়াত-শিবিরের মিছিলে ১০ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোড়ে পুলিশ। কদমতলা এলাকায় জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়।
তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ থেমে থেমে ৯৭ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এ সময় আহত হন জামায়াত-শিবিরের ৪০ জন। এসব ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বগুড়া : পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন এক যুবদল কর্মী। বিকেল সাড়ে ৪টায় শহরের বনানী মোড়ে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভের চেষ্টা করে জেলা যুবদল।
এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। এ সময় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয় পুলিশ ও অবরোধকারীদের মধ্যে। ২০-২৫টি ককটেলের বিস্ফোরণ ও অর্ধশতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ছোড়ার ঘটনা ঘটে। বেশ কয়েক রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে পুলিশ। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গুলিতে আহত হন ইউসুফ হোসেন নামের এক যুবদল নেতা।
হাসপাতালে নেওয়ার পথে তিনি মারা যান। ইউসুফ হত্যার ঘটনায় আজ বুধবার জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে জেলা যুবদল ও ১৮ দল। একই ঘটনায় গুলিবিদ্ধ অন্য দুজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এর মধ্যে কমরেড নামের একজনের অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়। আহতদের মধ্যে জেলা যুবদল সভাপতি সিপার আল বখতিয়ারসহ অন্যরা বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হয়েছেন।
এদিকে বেলা ১২টায় সদর উপজেলা নির্বাচন অফিস কার্যালয়ে পেট্রল বোমা ছুড়ে আগুন দিয়েছে দুবৃত্তরা। আগুনে নির্বাচন-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পুড়ে যায়। এ সময় একটি মোটরসাইকেলেও আগুন দেয় তারা। সদর উপজেলা পরিষদের হলরুমের গ্লাস ভাঙচুর করে ও ককটেলের বিস্ফারণ ঘটায়। কুমিল্লা : লাকসামে ১৮ দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বাবুল মিয়া নামে বিএনপির এক কর্মী।
এ সময় আহত হন ১০ জন। বেলা ১১টায় এ ঘটনা ঘটে। এদিকে বিকেলে মহানগরীর চর্থা তালতলায় ১৮-দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও বিজিবির বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে গুলিতে নিহত হন রিপন নামে এক বিজিবি সদস্য। এ ঘটনায় পুলিশসহ আহত হন ১০ জন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা ১১টায় লাকসাম উপজেলার দৌলতগঞ্জ বাজারের দীঘিরপাড় এলাকায় ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা সড়ক অবরোধ করে।
পুলিশ অবরোধকারীদের সরিয়ে দিতে গেলে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন লাকসাম অশ্বত্থতলা গ্রামের বিএনপি কর্মী রিকশাচালক বাবুল মিয়া (৪৫) মারা যান। নিতজন গুলিবিদ্ধসহ আহত হন ১০ জন। লাকসাম থানার ওসি আবুল খায়ের জানান, অবরোধকারীরা দৌলতগঞ্জ বাজারে ভাঙচুরের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ও গুলি ছোড়ে।
পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে ৯৫ রাউন্ড রাবার বুলেট, ৩৪ রাউন্ড চায়নিজ রাইফেলের গুলি, ছয় রাউন্ড পিস্তলের গুলিসহ মোট ১৩৪ রাউন্ড গুলি ও তিন রাউন্ড টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে। এ ঘটনায় একজন নিহত হওয়ার কথা স্বীকার করেন ওসি। এদিকে সোমবার রাতে নগরীর মনোহপুর এলাকায় সংঘর্ষে নিহত ছাত্রদল কর্মী দেলোয়ার হোসেনকে গতকাল দুপুরে মহানগরীর দক্ষিণ চর্থায় দাফন করা নিয়ে পুলিশের সঙ্গে ১৮ দলের কর্মীরা বাগ্বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশ বহনকারী গাড়িটি পুড়িয়ে দেয় তারা। এ সময় ককটেলের আঘাতে আহত হয় প্রথম ্আলোর ফটো সাংবাদিক এম সাদেক ও সমকালের ফটোসাংবাদিক এন কে রিপন।
পরে সন্ধ্যায় ওই এলাকায় বিজিবি ও পুলিশ মোতায়েন করা হলে আবার সংঘর্ষ বাধে। এ সময় মাথায় গুলি লাগলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান বিজিবি সদস্য রিপন (২৫)। গুরুতর আহত হন পুলিশ কনস্টেবল মাহমুদুল হাছান। অন্যদিকে দুপুরে কুমিল্লা সদরের আলেখার চরে দেলোয়ারের জানাজা থেকে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, কোতোয়ালি সাধারণ সম্পাদক রেজাউল কাইয়ুম ও সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শফিউল আলম রায়হানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নেতাদের গ্রেফতারের প্রতিবাদে শাসনগাছা এলাকায় ৫০-৬০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে বিএনপি ও ছাত্রদল কর্মীরা।
ফেনী : শহিদুল্লাহ কায়সার সড়কে গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় অবরোধকারীদের ইটের আঘাতে দুলাল মিয়া (৩৫) এক সিএনজি অটোরিকশা চালক নিহত হয়েছেন। তিনি দাগনভূঞার রাজাপুর ইউনিয়নের মধ্যম রাজাপুর গ্রামের আবদুল বারেকের ছেলে।
সিরাজগঞ্জ : পুলিশের সাথে অবরোধকারীদের সংঘর্ষের সময় নিহত হয়েছেন ছাকমান আলী (৪০) নামে এক পথচারী। তিনি উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের মাছুয়াকান্দি গ্রামের মৃত ছমেদ আলীর ছেলে। পেশায় তিনি একজন রাজমিস্ত্রি ছিলেন।
নিহত ছাকমানকে নিজেদের নেতা দাবি করে প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার জেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে বিএনপি। এ ছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে ককটেল নিক্ষেপ, যানবাহন ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে অবরোধকারীরা শহরের সয়াধানগড়া জগাই মোড় এলাকায় অবস্থান নিয়ে বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পেঁৗছলে অবরোধকারীরা পুলিশের উপর চড়াও হয়। এ সময় ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে জেলা বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নূর কায়েম সবুজকে আটক করলে নেতা-কর্মীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কয়েক শ রাউন্ড টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এ সময় সাইকেলযোগে কাজে যাওয়ার সময় ছাকমান আলীর বুকে টিয়ার শেল লাগে। অসুস্থ হয়ে ছাকমান পাশের পুকুরে পড়ে যান। স্থানীয়রা উদ্ধার করে একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়।
ছাকমানকে সদর উপজেলার বহুলী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছে বিএনপি। চট্টগ্রাম: বন্দরনগরীর সব প্রবেশপথ কার্যত অচল হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে যুক্ত হয়েছে সন্দ্বীপের সংসদ সদস্যপুত্র জাবেদ পাশার গুলিবিদ্ধ হওয়ার প্রতিবাদে হরতালের পিকেটিং-ভাঙচুর। পুলিশ বিএনপির ৬ নেতাকর্মীকে আটক করেছে। সকালে কর্ণেলহাট থেকে সিটি গেট পর্যন্ত নগর বিএনপির সভাপতি আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন।
বাকলিয়া থানার তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু এলাকায় অবস্থান নেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেনসহ নেতাকর্মীরা। নগরীতে মিছিলের চেষ্টা করায় উত্তর জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক ছালামত আলীসহ ৬ জনকে আটক করেছে পুলিশ। সিলেট:সকালে বিশ্বনাথ উপজেলার দক্ষিণ সুরমা উপজেলাধীন রশিদপুরে মহাসড়ক অবরোধ করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ৩৫ জন নেতাকর্মী আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে গৌছ খান, জামাল আহমদ, শাহ আমীর আলী ও তুহিন আহমদকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতদের মুক্তির দাবিতে আজ বুধবার বিশ্বনাথ উপজেলায় সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বান করেছে ১৮ দল।
সকালে নেতাকর্মীরা দক্ষিণ সুরমার হুমায়ূন রশীদ চত্বরে অবস্থান নেন। খুলনা: সকালে পাওয়ার হাউজ মোড়ে সড়ক অবরোধ করে ও প্রায় ২০টি ট্রাক ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ বাধা দিলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছোড়ে। পুলিশের লাঠিপেটা ও ইটের আঘাতে সিটি মেয়র মনিরুজ্জামান মনিসহ ২০ নেতাকর্মি আহত হন।
শের-এ বাংলা রোডে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ের সামনে ২টি বোমার বিস্ফোরণ ঘটে। রাজশাহী: সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের নেতৃত্বে একটি মিছিল রাজশাহী কলেজের দিকে যাওয়ার সময় সংঘর্ষ শুরু হয়। মালোপাড়া মোড়ে পুলিশ মিছিলকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ছুড়লে মেয়র বুলবুল, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন, মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক শাহ মাইনুল হাসান চৌধুরী শান্তসহ কমপক্ষে ১০ জন নেতা-কর্মী আহত হন। পরে সংবাদ সম্মেলনে মিনু বলেন, বিনা উস্কানিতে পুলিশ তাদের মিছিলে গুলি চালালে সিটি মেয়র মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও শফিকুল হক মিলনসহ অন্তত ৭০ নেতাকর্মী আহত হন। মহানগরীরতে মিছিলে গুলির প্রতিবাদে আজ আধাবেলা হরতালের ডাক দেয় বিএনপি।
বরিশাল:সকালে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের নগরীর কাশীপুর বাজারে মহানগর বিএনপি'র সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার এমপি'র নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ১৮ দল। এর আগে গড়িয়ারপাড় এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল এবং সমাবেশ করে দক্ষিন জেলা বিএনপি। রংপুর: সকালে নগরীর দমদমা, পার্কের মোড়,দর্শনা, মিঠাপুকুরের বৈরাগীগঞ্জ ও পীরগঞ্জ উপজেলায় ১০ টি বাস,পিকআপ ও অটোরিকসা ভাংচুর করে জামায়াত-শিবির। নগরীর প্রবেশদ্বার মডার্ন মোড়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিএনপি। নোয়াখালী: মাইজদী, চৌমুহনীসহ জেলার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করা হয়।
এসময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গোলাগুলি হয়েছে। এ সময় ডিবি ওসি খোন্দকার গোলাম শাহনেওয়াজসহ ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের কয়েকজন নেতা-কর্মি গুলিবিদ্ধসহ ৪০ জন আহত হয়। পুলিশ বিভিন্ন স্থান থেকে ৮জনকে আটক করেছে। গাইবান্ধা: সকালে পলাশবাড়িতে ঢাকা- রংপুর মহাসড়কে ৩টি বাস ভাঙচুর করা হয়। ১৮ দলের নেতা কর্মীরা লাঠি ও ইটপাটকেল নিয়ে মহাসড়কে অবস্থান নেয়।
দুপুরে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ধুমাইটারী জহুরুলের মোড়ে পিকেটাররা একটি মোটরসাইকেলে অগি্ন সংযোগ করে। হবিগঞ্জ: শহরে স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। সংঘর্ষে জড়িত অভিযোগে পুলিশ স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা আল আমিনকে আটক করেছে। পুলিশ ৩০ রাউন্ড রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।
লক্ষ্মীপুর: চন্দ গঞ্জ বাজারে ইমন হোসেন সুজন নামের এক ছাত্রলীগ নেতার রগ কর্তন করেছে অবরোধকারীরা। এ সময় আরো ৫ ছাত্রলীগ কর্মীকে পিটিয়ে আহত করেছে তারা। দুপুরে অবরোধ কর্মসুচি বিরোধী মিছিলের প্রস্তুতিকালে এ ঘটনা ঘটে। ভোরে সদর উপজেলার টুমচর গ্রামে ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনের ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয় দূর্বত্তরা। শহরসহ বিভিন্নস্থানে সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল, ককটেল বিস্ফোরণ ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়।
পটুয়াখালী: পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের তেলীখালী ব্রীজ এলাকায় অবরোধকারীরা লাঠি মিছিল করলে পুলিশ ধাওয়া করে। এসময় সংঘর্ষে ১০ বিএনপি-জামায়াত কর্মী আহত হয়। ভোরে কুয়াকাটাগামী নাইটকোচ ভাঙচুর করা হয়। সকালে হেতালিয়া বাঁধঘাট ও মির্জাগঞ্জের কাঠালতলীতে সোনারতরী পরিবহন ও ৫টি টেম্পুতে আগুন দেয়া হয়। একই এলাকায় সাকুরা ও হানিফ পরিবহনসহ ৫টি গাড়ি ভাঙচুর এবং বিভিন্ন এলাকায় অটোরিঙ্া, রিঙ্া, টমটমে আগুন ও ভাংচুর করে অবরোধকারীরা।
গাজীপুর: দুপুরে টঙ্গী কলেজ গেট এলাকায় ২টি গাড়ীতে আগুন ও ১০-১২টি গাড়ী ভাঙচুর করে বিএনপি নেতা-কর্মিরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও গুলিতে বিএনপি নেতা সাবেক সংসদ সদস্য হাসান উদ্দিন সরকার গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক নেতা-কর্মি আহত হয়েছে। এদিকে,কালীগঞ্জ উপজেলা সদরে পিকেটারদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। এসময় বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা ২ টি লেগুনা, ২টি বাস ও পুলিশের একটি গাড়ীতে ভাঙচুর চালায়। পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
সকালে জেলা বিএনপির উদ্যোগে একটি মিছিল পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে বিভিন্ন এলাকা প্রদক্ষিণ করে। মিছিল থেকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহের মুক্তি দাবী করা হয়। কাপাসিয়া: কালিয়াকৈর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সকাল থেকে অবরোধ করে রাখে ১৮ দল। পাবনা: পিকেটারদের ধাওয়া খেয়ে পুষ্পপাড়ায় একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে খাদে পড়ে ২০ জন আহত হয়েছে। এ সময় জামায়াত শিবির ও বিএনপি কর্মীরা ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
সোমবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। জামালপুর : নরুন্দিতে অবরোধ চলাকালে আওয়ামীলীগ-বিএনপি সংঘর্ষে দুই পুলিশ কনস্টেবলসহ ১০ জন আহত হয়েছে। ঝিনাইদহ: সকালে সদর উপজেলার হাটগোপালপুর বাজারে বিএনপি ও মহেশপুরে জামায়াত-শিবির সড়ক অবরোধ করে। জামায়াত-শিবির খালিশপুর সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ সড়কে গাছ ফেলে জীবননগর, চুয়াডাঙ্গাসহ বিভিন্ন রুটে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। খালিশপুর বাজার থেকে আজমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহাজান আলীর হাত পা ভেঙ্গে দিয়েছে জামায়াত-শিবির।
নারায়ণগঞ্জ : আড়াইহাজার উপজেলায় আড়াইহাজার-নরসিংদী সড়কের ইলুনদীতে গাছের গুড়ি ও টায়ারে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করে উপজেলা বিএনপি। সকালে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের জালকুড়ি চেয়ারম্যান বাড়ি রোড এলাকায় ফতুল্লা থানা যুবদলের একটি মিছিল বের হয়। মেহেরপুর : রাজনগরে অবরোধ কারিরা আওয়ামীলীগের অফিসে আগুন ধরিযে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশ ২৫ রাউন্ডফাঁকা রবার বুলেট নিক্ষেপ করে। মেহেরপুর অগ্রনী ব্যাংকের একটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে দূবৃত্তরা।
ফেনী: মহিপালে টায়ারে অগি্নসংযোগ ও সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে শিবির। এছাড়া শহরে শহিদ শহীদুল্লাহ কায়সার সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করে বিএনপি। এছাড়া ভোরে ফেনী সদর উপজেলার নির্বাচন কমিশন অফিসে অগি্ন সংযোগের ঘটনা ঘটে। মাগুরা: সকালে এসএপরিবহনের ডাকবাহী কাভার্ড ভ্যান মাগুরার ঢাকারোড এলাকায় পেঁৗছলে অবরোধকারীরা আক্রমন করে ভাঙচুর চালায়। মৌলভীবাজার : সোমবার রাতে মৌলভীবাজার ঢাকা-সিলেট সড়কের পাশে সড়ক ভবনের সামনে আয়শা পরিবহন নামের মিনিবাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা।
মৌলভীবাজার-কুলাউড়া সড়কে পিকেটিংয়ের দায়ে রাজনগর উপজেলার মনসুরনগর ইউপির আশ্রাকাপন গ্রামের শিপন আহমেদ(২৭)নামে এক বিএনপি কর্মিকে আটক করেছে রাজনগর পুলিশ। নাটোর: রাস্তায় রাস্তায় টায়ারে আগুন ও গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ করেছে ১৮ দল। পুলিশ রাতে পৌরসভার মেয়র ফরহাদ আলীসহ দুই বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। অবরোধকারীরা যানবাহন ও রেল ষ্টেশন মাষ্টার আমিনুল ইসলামের অফিস ভাঙচুর করে। গুরুদাসপুরে সাবেক এমপি মোজাম্মেল হক ও বনপাড়ায় সাবেক এমপি অধ্যক্ষ একরামুল আলমের নেতৃত্বে এবং সিংড়া ও বড়াইগ্রামে ১৮ দল নেতাকর্মীরা রাস্তায় টায়ারে আগুন ও গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধ ও সমাবেশ করেছে।
নওগাঁ: ১৮ দলীয় জোটের জেলা সমন্বয়ক মো: সামসুজ্জোহা খানের নেতৃত্বে ব্রীজের মোড়ে অবস্থান নিয়ে সকাল থেকে সড়ক অবরোধ করে নেতা-কর্মিরা। শহরের ব্রীজের মোড়ে সড়ক অবরোধ করে দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন, জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ এবং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর কুশ পুত্তলিকা দাহ করা হয়। টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের শহর বাইপাসের আশেকপুরে মহাসড়কে বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে ও টায়ারে আগুন দিয়ে অবরোধ করা হয়। এদিকে মির্জাপুর উপজেলার গোড়াই শিল্পাঞ্চলে বিএনপি নেতাকর্মীরা মহাসড়ক অবরোধে পুলিশ বাধা দিলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের রাবার বুলেটে ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।
এছাড়া জামায়াত-শিবির সদর উপজেলার করটিয়ায় ১০/১২টি সিএনজি ভাঙচুর করেছে। দাউদকান্দি (কুমিল্লা): বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দাউদকান্দি, শহীদনগর, ইলিয়টগঞ্জে মহাসড়কে অবরোধ করে। তারা ৪টি সিএনজি, ৫টি, ট্রাক ৩টি প্রাইভেটকার ভাঙচুর করে। মহাসড়কের শহীনগরে জামায়াত শিবিরের সঙ্গে পুলিশের কয়েক দফা সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেদিনাজপুর:সকালে পুলিশ বিএনপি কর্মী জিয়াউর রহমান, জামায়াতের আলাউদ্দীন , ফজলুর রহমান , ছাত্রদলের ও ইমরান রুহুল আমিন এবং জামায়াতের জহুরুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে। শহরের নিমনগর বাস্ট্যান্ড রেলগুমটিতে অবরোধকারীদের অবস্থানের কারনে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
অবরোধকারীরা ৭টি ককটেল বিস্ফোরণের মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। নরসিংদী: সকালে ভেলানগরে জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবির খোকনের নের্তৃত্ত্বে মিছিলে ব্যারিকেড দেয়ার চেষ্টার করে পুলিশ । পরে নেতাকর্মীরা রাস্তার উপর বসে অবরোধ সৃষ্টি করে। চাঁদপুর: বিভিন্নস্থানে প্রায় ১শ' সিএনজি অটোরিঙ্া, মোটর সাইকেল, ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে। সোমবার রাত থেকে শহর, হাজীগঞ্জ ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিৰেপ ও বহু সংখ্যক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
এ সময় কমপৰে ২৫জন আহত হয়েছে। পিরোজপুর: পুরাতন বাসস্ট্যান্ড ও ভৈরমপুর এলাকায় পুলিশের সাথে ১৮ দলের সংঘর্ষ ঘটে। এতে ৬ জন আহত হয়। শহরে মিছিল বের করলে পুলিশ লাঠি চার্জ ও গুলিছোড়ে। এসময় মিছিলকারীরা ৪ টি ককটেল বিস্ফোরন ঘটায় ও ভাংচুর চালায়।
ময়মনসিংহ : শহরের ৪ টি স্পটে অবস্থান নেয় ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। নীলফামারী: বিভিন্ন স্থানে ৩টি বাস এবং ৩টি মোটর সাইকেল ভাংচুর করে আগুন দিয়েছে অবরোধকারীরা। অবরোধকারীদের দেওয়া আগুনে ঝলছে গেছে মাজেদুল হক(৩৬) নামে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিৰক। শহরের বাড়ইপাড়ায় ১টি, কবরস্থান মোড় চত্তরে ১টি মোটর সাইকেলে আগুন এবং কিশোরগঞ্জ বাজারে একটি মোটর সাইকেল ভাংচুর করা হয়। মাদারীপুর: সকালে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় বিৰোভ হয়েছে।
বাগেরহাট: সদর, ফকিরহাট, মংলার দীঘরাজ, রামপালের ফয়লা ও কচুয়ার বকুল তলায় ৫টি গাড়ীতে ভাংচুর করেছে অবরোধকারীরা। সুনামগঞ্জ :জগন্নাথপুরে ১৮ দল নেতা-কর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশসহ ৯জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ৫ রাউন্ড সর্টগানের গুলি নিৰেপ করেছে। বিএনপি'র নেতৃত্বোধীন ১৮ দলীয় জোটের নেতা কর্মীরা জগন্নাথপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের জগন্নাথপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকা অবরোধ করে সমাবেশ করার সময় পুলিশ বাধা দিলে এ সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে।
রাজধানীজুড়ে আতঙ্ক ভোগান্তি
উত্তরায় গাছের গুঁড়ি ফেলে ট্রেন চলাচলে বাধা, যানবাহনে আগুন, বোমাবাজি, ভাঙচুর ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে রাজধানীতে অবরোধের প্রথম দিন গতকাল অতিবাহিত হয়েছে।
আগের রাতে ব্যাপক সহিংসতা ও গতকাল কর্মসূচির শুরুতেই ১৮ দলের নেতা-কর্মীরা রাজধানীর প্রবেশপথগুলোয় অবস্থান নেওয়ায় বাস, ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। হরতাল স্টাইলে চলা এ অবরোধে আতঙ্ক ছিল সর্বত্র। যানবাহন চলাচল না করায় যোগাযোগব্যবস্থায় সারা দেশ থেকে রাজধানী কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। জীবনযাত্রায় দেখা দেয় স্থবিরতা। রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোয় সকাল থেকেই কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকলেও অজানা আশঙ্কায় রাস্তায় লোকজন ছিল তুলনামূলক কম।
গণপরিবহনের হাতে গোনা কয়েকটি বাস চলাচল করে রাজধানীতে। তবে স্বল্পসংখ্যক হিউম্যান হলার, অটোরিকশাসহ ছোট যানবাহন চলাচল করেছে। রিকশা চলেছে অন্যান্য দিনের মতোই। যানবাহনস্বল্পতার কারণে যাত্রীসাধারণের ভোগান্তি চরমে পেঁৗছায়। ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে গাড়ির জন্য।
দ্বিধাদ্বন্দ্বের কারণে অধিকাংশ এলাকার দোকানপাটও খোলেনি। অন্যান্য হরতাল কর্মসূচির মতো অবরোধেও বিএনপির দলীয় কার্যালয় ছিল অবরুদ্ধ। কোনো নেতা-কর্মী প্রবেশ করতে এবং কেউ বেরোতে পারেননি। কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে দফতর সম্পাদক রুহুল কবীর রিজভী ও নির্বাহী কমিটির সদস্য বেলাল আহমেদ কয়েক দিন ধরেই সেখানে অবস্থান করছেন। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আহমেদ গতকাল অভিযোগ করেন, অবরোধের প্রথম দিন ঢাকাসহ সারা দেশে পুলিশ-র্যাব ও বিজিবির সহায়তায় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় ১৮ দলের তিনজন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া ১ হাজার ১০০ জনের অধিক আহত, ৪০০ জনের অধিক গ্রেফতার এবং ৪ হাজারের বেশি নেতা-কর্মীকে আসামি করে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন ৫ জানুয়ারি ভোটের দিন রেখে দশম সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সোমবার রাতে এ অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধ চলবে।
অবরুদ্ধ বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয় : কয়েক দিন ধরেই অবরুদ্ধ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। গতকাল ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের প্রথম দিন কার্যালয়ে কোনো নেতা-কর্মী প্রবেশ করতে পারেননি আবার কেউ বেরোতেও পারেননি।
কার্যালয়ে শুধু সাংবাদিকরাই কার্ড দেখিয়ে প্রবেশ করেন। মূল ফটকও ছিল তালাবদ্ধ। বাইরে কয়েক স্তরে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন ছিল। কার্যালয়ের অদূরেই রাখা হয় রায়ট কার, জলকামান, প্রিজন ভ্যানসহ দুটি সাদা মাইক্রোবাস। বেলা সাড়ে ১১টার পর কার্যালয়ের অদূরে পর পর তিনটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়।
এ সময় পুলিশ আশপাশের কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশি চালায়। গতকাল সকালে অবরোধ শুরুর পর রাজধানীর সায়েদাবাদ, মহাখালী ও গাবতলী থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছিল। পোস্তগোলা ও বাবুবাজার ব্রিজ দিয়েও কোনো বাস চলেনি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের গাবতলী শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. আলমগীর বলেন, সকাল থেকে দূরপাল্লার কোনো গাড়ি গাবতলী ছেড়ে যায়নি। তবে লোকাল গাড়ি স্বল্প সংখ্যায় চলছে।
সকালে গাবতলীতে রাস্তার দুই পাশে বহু বাস দাঁড় করিয়ে রাখতে দেখা যায়। যাত্রীর সংখ্যাও ছিল একেবারেই কম। যাত্রী কম থাকায় সদরঘাটেও অন্য দিনের তুলনায় তুলনামূলকভাবে কম লঞ্চ চলছে। বিআইডবি্লউটিসির টিআই মাহফুজুর রহমান জানান, দেশের দক্ষিণাঞ্চল থেকে আগের রাতে ছেড়ে আসা ৪৩টি লঞ্চ ভোরে ঢাকার সদরঘাটে ভেড়ে।
আগুন, ভাঙচুর : সকাল ৯টার দিকে রাজধানীর উত্তরায় রেললাইন অবরোধ করেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কর্মীরা।
পুলিশ বাধা দিলে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এ সময় পুলিশের দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় পুলিশের পাঁচজন আহত এবং শিবিরের উত্তরা শাখা সভাপতি রাকিব মাহমুদসহ ৩০ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। জানা গেছে, উত্তরা আজমপুর রেলগেট এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বেষ্টনীর মধ্যেই শিবির কর্মীরা বেপরোয়া ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াওসহ পুলিশের ওপর বোমা হামলার ঘটনা ঘটিয়েছেন। বোমার আঘাতে দক্ষিণখান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. কায়কোবাদ ও এএসআই আজমত আলী গুরুতর আহত হন।
শিবির কর্মীরা এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে রেলগেটের উভয় পাশ নিয়ন্ত্রণে রেখে শাবল-খুন্তির সাহায্যে রেললাইন উৎপাটনের চেষ্টা চালান। তারা চট্টগ্রামমুখী একটি ট্রেনও আটকে রাখেন। খবর পেয়ে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ পেঁৗছে ১৮ রাউন্ড গুলি চালায়। এর পর পরই দক্ষিণখান থানা ও ইউনিয়ন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ধাওয়া দিলে শিবির কর্মীরা ঘটনাস্থল ছাড়েন। এদিকে যাত্রাবাড়ীতে তিনটি যানবাহনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
ভাঙচুর করে অন্তত ১২টি যানবাহন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন কমপক্ষে তিনজন। গাবতলীর আমিনবাজারে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ চলাকালে গাবতলীর প্রবেশপথ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
সকাল ১০টা থেকে শুরু হওয়া এ সংঘর্ষ দুপুরের পর পর্যন্ত চলে থেমে থেমে। অবরোধকারীরা সকাল ১০টার দিকে সালেহপুর ব্রিজে অবস্থান নিয়ে যোগাযোগের সব ব্যবস্থা বন্ধ করে দেন। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলে সংঘর্ষ বাধে। এরপর সেখানে হামলা চালান সরকারদলীয় নেতা-কর্মীরা। পুলিশ এ সময় কয়েক শ রাউন্ড গুলি ও টিয়ার শেল ব্যবহার করে।
এ ছাড়া এ স্থানে এ সময় অবরোধকারীরা ২০-২৫টি যানবাহন ভাঙচুর চালান।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায় অবরোধকারীরা বাসে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করেছেন। বিকাল ৩টা থেকে ৪টার মধ্যে বেশ কয়েকটি যানবাহনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে একটি যাত্রীবাহী বাসে অগি্নসংযোগের ঘটনা ঘটে। শেরেবাংলানগর খেজুরবাগান এলাকায় একটি বাসে ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ করেছেন পিকেটাররা।
আগারগাঁও টিঅ্যান্ডটি মোড়ে ইউনাইটেড পরিবহনের একটি বাসে অগ্নিসংযোগ করেছেন অবরোধ সমর্থনকারীরা। তবে এখন পর্যন্ত এসব ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যায় এ রিপোর্ট লেখার সময় বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগের খবর পাওয়া গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সন্ধ্যায় ৭টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে।
ছয়জনের দণ্ড : টানা ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের প্রথম দিনে রাজধানীতে নাশকতায় জড়িত থাকার দায়ে ছয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ঢাকা মহানগর পুলিশের সহকারী উপ-কমিশনার (মিডিয়া) আবু ইউসুফ বলেন, গাড়ি ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের অপরাধে চকবাজার, পল্টন ও সবুজবাগে দুজন করে মোট ছয়জনকে সাজা দেওয়া হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।