শহীদ মিলন দিবসের আলোচনায় ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী গণ-আন্দোলনে শহীদ শামসুল আলম খান মিলনের প্রসঙ্গ কম ছিল। আলোচনায় বর্তমান সরকারের দুজন মন্ত্রী মূলত মহাজোট সরকারের সাফল্য বর্ণনা করেন। অনেকটা প্রকাশ্যেই আবার মহাজোটকে নির্বাচিত করার আহ্বানও জানান তাঁরা।
আজ বুধবার ছিল চিকিত্সক মিলনের ২৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মিলন চত্বরে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
এতে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মাহমুদ হাসান।
ওই আলোচনা সভায় সর্বদলীয় সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়া রওশন এরশাদের প্রসঙ্গে বেশির ভাগ আলোচক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, রওশন এরশাদকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ার ফলে মিলনকেই অবমাননা ও অপমান করা হয়েছে। মিলনের হত্যাকারী এবং হত্যাকারীদের হুকুমদাতার বিচার দাবি করা হয় এ সভা থেকে।
আলোচনায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপির সমঝোতা করার ইচ্ছা নেই।
তাদের উদ্দেশ্য একটাই। তা হলো মহাজোট সরকারকে উত্খাত করা। যুদ্ধাপরাধীদের (মানবতাবিরোধী) কারাগার থেকে মুক্ত করা। তবে মহাজোট সরকারকে উত্খাত করে বাংলাদেশে কোনো ধরনের নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। ট্রাইব্যুনাল থাকবে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে।
এ অবস্থার মধ্যেই নির্বাচন হবে।
হাসানুল হক বলেন, সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। বিএনপি এতে না এলেও একতরফা নির্বাচন হবে না। এটি হবে বহুদলীয় নির্বাচন।
বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে খোলা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে ইনু বলেন, খালেদা জিয়া ফর্মুলা দিলে আলোচনা করা হবে।
আলোচনার এখনো অনেক সময় আছে।
তালেবানি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেয়ে মন্দের ভালো হিসেবে আবার যাতে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসে, সে জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান ইনু। তিনি বলেন, মহাজোট সরকারের ছাতার তলে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হবে। অন্যদিকে তালেবানি সরকার ক্ষমতায় এলে গণতন্ত্রও ডুববে, দেশও ডুববে। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে নির্বাচন বর্জনের ট্রেন ক্রমাগত পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের দিকে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বিএনপির উদ্দেশে বলেন, ‘নব্বইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের যে অর্জন, তা বর্তমানে বিপদের সম্মুখীন। সংলাপের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকে প্রতিহত করবেন না। জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলবেন না। ’
মেনন আরও বলেন, অসাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রের যে যাত্রা শুরু হয়েছে সেখান থেকে পিছিয়ে যাওয়া হবে কি না, সে বিষয়ে সবাইকে স্পষ্ট করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সুশীল সমাজের কয়েকজন প্রতিনিধির রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গুণীজনেরা রাষ্ট্রপতির কাছে গিয়ে বলেছেন গণতন্ত্র সংকটের মুখে পড়েছে। শুধু গণতন্ত্রের সংকট নয়, এর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সংকটও জড়িত।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, মিলনের ওপর যারা গুলি চালায় এবং গুলি চালানোর হুকুমের আসামি স্বৈরশাসক এরশাদের বিচার করাও ন্যায়সংগত।
মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যাঁকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী (এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ) বানানো হয়েছে, তা মিলনের জন্য অবমাননাকর। শেষ মুহূর্তে এসে এভাবে আঘাত করার বিষয়টি আমি ব্যক্তিগতভাবে মেনে নিতে পারি না।
’
চিকিত্সক নেতা মোশতাক হোসেন বলেন, ‘মিলনের আলোচনা সভায় বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে আহ্বান করতে পারিনি। চিকিত্সক সমাজের ঘাড়ের ওপর এমন একজনকে এ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাতে চিকিত্সক সমাজকেই ‘আন্ডার এস্টিমেট’ করা হয়েছে। যে স্বৈরাচার সরকার মিলনকে হত্যা করেছে তাদের প্রতিনিধিকে ঘাড়ের ওপর বসিয়ে দিলেই তা মেনে নেওয়া হবে না। সরকারকে সিদ্ধান্ত পাল্টাতে হবে। ’
বিএমএর মহাসচিব এম ইকবাল আর্সলান আলোচনায় উপস্থিত জাতীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, ‘মিলনের মা আলোচনা সভায় উপস্থিত হতে পারেননি।
তাঁর গলায় অভিমানের সুর ছিল। নব্বইয়ে গণতন্ত্রের যে চেতনা ছিল, তা আজও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। এ ব্যর্থতার দায় জাতীয় নেতাদের ও আমাদের। জাতীয় নেতারা এ লজ্জা দূর করবেন। ’
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।