প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার উদ্দেশ্যে বলেছেন, আন্দোলন করতে হলে মাঠে নামুন। এভাবে সাধারণ মানুষ, পথচারী, নারী ও শিশুদের বোমা মেরে হত্যা করবেন না। মানুষ হত্যা বন্ধ করে নির্বাচনে আসুন, গণতন্ত্রের পথে আসুন। আগামী নির্বাচন নিয়ে নানা গুজব ও জল্পনা-কল্পনা ছড়ানোর অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, গুজব ছড়িয়ে লাভ নেই। আগামী নির্বাচন সময় মতোই হবে।
শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার তার ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সংসদীয় বোর্ডের মূলতবি বৈঠকের সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন। দুই প্রধান দলের সাধারণ সম্পাদক ও মহাসচিব পর্যায়ে সামপ্রতিক বৈঠকের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিরোধী দল দুই সাধারণ সম্পাদকের মধ্যে আলোচনার দাবি করেছে। আলোচনা হয়েছে, দেখা হয়েছে।
বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে কথাও হয়েছে। আমরাও চাই যে কোন বিষয়ে আলোচনা করে সমাধান হোক।
রাজনৈতিক সংকট নিরসনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎকারী গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নাম উল্লেখ না করে তার ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক দলের সভাপতি হয়েও তিনি বিশিষ্ট নাগরিক হয়ে গেলেন! তাহলে আমরা যারা রাজনীতিবিদ, তারা কী অবিশিষ্ট? সংবিধান প্রণেতা হয়েও তিনি সংবিধানের বাইরে গিয়ে কথা বলছেন? যে সংবিধান তিনি রচনা করেছেন, সেই সংবিধানই লঙ্ঘন করছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের সভাপতি হলে রাজনীতিবিদদের মতই কথা বলুন। রাজনৈতিক দল করবেন, বিশিষ্ট নাগরিক হয়ে যাবেন আবার তত্ত্ব কথাও শোনাবেন, এটি কেন?
আন্দোলনের নামে বিরোধী দলের দেশজুড়ে নাশকতা ও নৈরাজ্যের প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০ টাকা দিয়ে মানুষ ভাড়া করে তাদের দিয়ে বোমা মারা হচ্ছে।
শিশুদেরও রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে শিশুদেরও ভবিষ্যতের সন্ত্রাসী হিসেবে গড়ে তুলতে তাদেরও বোমা মারার কাজে ব্যবহার করছে। রাজনৈতিক কাজে শিশুদের ব্যবহার বন্ধেরও আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, আন্দোলন করতে হলে মাঠে নামুন। তাদের না-কি হাজার হাজার লাখ লাখ নেতাকর্মী রয়েছে।
তারা কই? যেভাবে সাধারণ পথচারীদের হত্যা করা হচ্ছে, তাদের কী অপরাধ? বোমা মেরে ও ছবি তুলে তা গণমাধ্যমে প্রচারের মত জামায়াত-শিবিরের ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডেরও সমালোচনা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী মঙ্গলবার সাহসী ভূমিকা পালনের মাধ্যমে একজন সাধারণ কৃষকের হাজার হাজার ট্রেনযাত্রীর জীবন বাঁচানোর ঘটনা তুলে ধরে তাকে ধন্যবাদও জানান। তিনি বলেন, একজন কৃষক যেভাবে ফিসপ্লেট তুলে ফেলা রেললাইন দিয়ে মাইলের পর মাইল দৌড়ে ও লাল কাপড় দেখিয়ে ট্রেন থামানোর মাধ্যমে মানুষের জীবন বাঁচিয়েছেন, সেটি সত্যিই প্রশংসনীয়। একজন সাধারণ কৃষক হয়েও তিনি যে মানবতাবোধের পরিচয় দিয়েছেন, সেই মানবতাবোধ বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে নেই। মানুষ হয়ে মানুষের জীবন বাঁচাতে হয়, নিতে নয়- এই শিক্ষাটাও তাদের নেই।
ওই কৃষকের কাছ থেকে মানবতাবোধের শিক্ষা নিতে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ নির্বাচন হবে। জনগণকে বলবো ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে সহযোগিতা করুন।
সূচনা বক্তব্যের পর দ্বিতীয় দিনের মতো শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে বসেন দলের সংসদীয় বোর্ডের সদস্যরা। গতকাল বুধবার প্রথম দিনের বৈঠকে রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর আজ বৃহস্পতিবার বাকি তিন বিভাগ ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
বৈঠক এখনো চলছে।
বৈঠকে সংসদীয় বোর্ড সদস্যদের মধ্যে আরও অংশ নিচ্ছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চেৌধুরী, উপদষ্টো পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, অধ্যাপক ড. আলাউদ্দিন আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ, ওবায়দুল কাদের এবং বোর্ড সম্পাদক ও দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।