মন্ত্রী কোটা, এমপি কোটা এবং কর্মকর্তা কোটায় নিয়োগ চলছে পুলিশে। এ নিয়ে রীতিমতো বাণিজ্য জমে উঠেছে জেলা পর্যায়ে। টাকা ছাড়া কোথাও কাজ হচ্ছে না। তবে কোটা যতই থাকুক, পুলিশের জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জন্য আলাদা বরাদ্দ রাখতে হচ্ছে। অনেক স্থানে এমপি এবং এসপি মিলে সমঝোতামূলক অবস্থানে এসে নিয়োগ হচ্ছে। আবার যেখানে সমঝোতা হয়নি, সেখানে বিশৃঙ্খলাও আছে। জানা গেছে, সারা দেশে আরও ৬ হাজার কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ কনস্টেবল নেওয়া হবে ৫ হাজার ১০০ এবং মহিলা ৯০০। ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় শুরু হওয়া এ নিয়োগ পরীক্ষা চলবে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। দেশের ৬৪ জেলা পুলিশ লাইনস মাঠ থেকে সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হবে। আর এ নিয়োগে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, জেলা পরিষদ প্রশাসক, পুলিশ সদর দফতর, সরকারের প্রভাবশালী বিভিন্ন মহল ও সরকারি দলের নেতা-পাতি নেতাসহ সবাই এখন তদবিরে ব্যস্ত। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশ সদর দফতরের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে প্রার্থীদের আর্থিক লেনদেনে জড়িত ও প্রতারিত না হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। এ ছাড়া নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তদবির করলে তা প্রার্থীর চরম অযোগ্যতা হিসেবে গণ্য করার কথাও বলা আছে। এর পরও নিয়োগে মোটা অঙ্কের ঘুষের ছড়াছড়ি ও নজিরবিহীন তদবির বাণিজ্যের ঘটনা ঘটছে। সংশ্লিষ্ট কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার জানান, কনস্টেবল নিয়োগ তদবিরে তারা অতিষ্ঠ। গুরুত্বপূর্ণ ফোন ছাড়া এখন কোনো ফোনই তারা ধরছেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিয়োগ বাণিজ্যে ঘুষের পরিমাণ কোনো জেলায় পাঁচ লাখ, কোথাও তিন লাখ, আবার কোথাও দুই লাখ টাকা। সবচেয়ে কম টাকায় নিয়োগ পাচ্ছেন চট্টগ্রাম বিভাগের একটি জেলার অধিবাসীরা। সেখানকার এমপি কারও কাছ থেকে অর্থ না নেওয়ার জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে এমপি নিজের পকেট থেকে জনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা করে 'খরচ' পাঠাচ্ছেন পুলিশের কর্তাব্যক্তিদের কাছে। অন্য একটি সূত্র জানায়, পুলিশ নিয়োগে ঘুষ নেওয়া ওপেন সিক্রেট। কোথাও কম, কোথাও বেশি। খুলনা বিভাগের একজন সংসদ সদস্য জানান, তার জেলায় ৬৫ জন পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ দেওয়া হবে। এখানে কে কোন দল করল, তা মুখ্য বিষয় নয়। অর্থের পরিমাণ দেখেই প্রার্থী বাছাই করা হচ্ছে। এসপি কিংবা ডিআইজির সঙ্গে কথা বলেও সরকার সমর্থকদের নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। এমনকি টাকার পরিমাণও কমানো যাচ্ছে না। পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতি প্রসঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার জানান, বিধি অনুযায়ী নিয়োগ দিতে এসপিদের বলা হয়েছে। দুর্নীতির কোনো খবর তার কাছে নেই বলে জানান পুলিশপ্রধান। বিভিন্ন পুলিশ সুপার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলার মন্ত্রী, সংসদ সদস্যরা কনস্টেবল পদে নিয়োগের জন্য এলাকাভিত্তিক তালিকা দিচ্ছেন। তারা নিজ এলাকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির কোটার চেয়ে বেশি নিয়োগের তালিকা ধরিয়ে দিয়ে এসপিদের চাপ দিচ্ছেন। এতে কোথাও কোথাও এসপিদের সঙ্গে তারা বিরোধে জড়িয়ে পড়ছেন। সূত্র জানায়, সরকারি দলের সংসদ সদস্যদের পাশাপাশি জেলা পরিষদ প্রশাসক, আওয়ামী লীগ, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ জাতীয় পার্টির জেলা ও থানা সভাপতি-সম্পাদকসহ পাতি নেতারাও তদবিরে এগিয়ে আছেন। চাকরির প্রত্যাশায় প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের প্রার্থীরা ধরনা দিচ্ছেন এমপি-মন্ত্রীর চেলা ও নেতাদের বাসায়। নিয়োগের নিশ্চয়তা দিয়ে তারাই ঘুষের দরদাম হাঁকাচ্ছেন। পুলিশ নিয়োগে সর্বোচ্চ ঘুষের রেটে এগিয়ে আছে ঢাকা, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ জেলা। শেরপুর, জামালপুর, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের জেলাগুলোয়ও চলছে নিয়োগের তদবিরের মচ্ছব। এতে শারীরিক মাপ ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হয়েও তালিকা মোতাবেক নিয়োগের কারণে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টির আশঙ্কাও রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন এসপির সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বেশির ভাগ জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে এমপিদের দেওয়া তালিকা অনুসারে লোক নিয়োগ করা হচ্ছে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ দিচ্ছেন না স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। তালিকার বাইরে নিয়োগ দিলেই পুলিশ সদর দফতরে স্থানীয় এসপির বিরুদ্ধে অভিযোগ দিচ্ছেন। এর পরেও যাদের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের কাছ থেকে নেওয়া ঘুষের টাকা মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন প্রার্থীর অভিভাবক জানান, চাকরির নিশ্চয়তা পেতে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। সে অনুযায়ী তাদের চাকরি শতভাগ নিশ্চয়তাও দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় দরিদ্র সাধারণ প্রার্থীরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। পুলিশ লাইনস মাঠে নিয়োগের বাছাই করা হলেও, দু-তিন দিন আগেই তদবিরের তালিকা অনুয়ায়ী নিয়োগ সম্পন্ন করা হয়েছে। পরীক্ষা শুধু ফরমালিটিস করতেই।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।