১৮-দলীয় জোটের টানা অবরোধ কর্মসূচির কারণে রাজধানীসহ সারা দেশের বিভিন্ন এলাকায় অটোমেটেড টেলার মেশিনের (এটিএম) অনেক বুথে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না। একই কারণে চট্টগ্রামে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো নগদ অর্থের সংকটে পড়েছে। মাসের শুরুতে গ্রাহকদের নগদ অর্থের চাহিদা বেশি থাকলেও দুর্ভোগে পড়ছেন গ্রাহকেরা।
ব্যাংকগুলো বলছে, হরতাল-অবরোধে নাশকতার ভয়ে নিরাপত্তা সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকের বুথগুলোতে টাকা পৌঁছে দিতে পারছে না। এ কারণে সংকট তৈরি হয়েছে।
এ রকম টানা কর্মসূচি চললে সংকট আরও বাড়বে।
জানা গেছে, বিভিন্ন শাখায় নগদ টাকা পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিরাপত্তা সেবা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি থাকে ব্যাংকগুলোর। তাঁরাই নিজ দায়িত্বে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অথবা নির্দিষ্ট ব্যাংকের ফিডিং বা বড় শাখা, যেখান থেকে টাকা নিয়ে অন্যান্য শাখা বা বুথে পৌঁছে দেয়। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানই কোটি কোটি টাকা আনা-নেওয়ার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না।
গ্রুপ ফোর সিকিউরিটিজ, সিকিউরেক্স, ইনটিগ্রেটেড সিকিউরিটি সার্ভিসসহ বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা সেবা প্রতিষ্ঠান ব্যাংকের শাখা ও এটিএম বুথে অর্থ পৌঁছে দিতে বিভিন্ন ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ।
অবরোধের কারণে কার্যক্রম বন্ধ রাখায় আর্থিকভাবে তাঁরাও ক্ষতিগ্রস্ত।
বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের সৈয়দ মাহবুবুর রহমান এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিরাপত্তা সেবা কোম্পানিগুলো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বুথগুলোতে টাকা পৌঁছে দিতে পারছে না বলেই কিছুটা সংকট তৈরি হয়েছে। ’ গ্রাহকেরা শাখাসংলগ্ন এটিএম বুথে গেলে সমস্যায় পড়বে না বলে তিনি মত দেন।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের পাঁচ হাজারের বেশি এটিএম বুথ রয়েছে। আর টাকা তোলার জন্য বিভিন্ন ব্যাংকের ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড রয়েছে ৮০ লাখের বেশি।
এর মধ্যে ৭২ লাখ রয়েছে ডেবিট কার্ড। সবচেয়ে বেশি আড়াই হাজারের মতো এটিএম বুথ রয়েছে বেসরকারি ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের। এর পরেই রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকের ৩৩৩টি এটিএম বুথ।
এদিকে, এটিএম বুথে টাকা না পাওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকের শাখাগুলোতেও নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। চট্টগ্রামে আবু নাসের নামের একজন গ্রাহক প্রথম আলোকে জানান, দুদিন ধরে তিনি ব্যাংকের চারটি শাখায় ঘুরেছেন।
কিন্তু টাকার অঙ্ক বড় থাকায় কোনো শাখাই তাঁকে পর্যাপ্ত টাকা সরবরাহ করতে পারেনি।
হরতাল-অবরোধের কারণে ব্যাংকে গ্রাহকের নগদ টাকা জমা দেওয়ার পরিমাণও কমে গেছে। ব্যাংক এশিয়ার চট্টগ্রামের আঞ্চলিক প্রধান মো. রোশাংগীর বলেন, ‘মাসের শুরুতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বেতন দেওয়া হয়। এ সময় চাহিদা তাই অনেক বেশি থাকে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা অসহায়।
’ বিকল্প কোনো পথ বের করার বিষয়ে প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশনার অপেক্ষায় তাঁরা রয়েছেন জানান রোশাংগীর।
একটি নিরাপত্তা সেবা প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, হরতাল-অবরোধে ইনস্যুরেন্স কাভারেজ থাকে না। তাহলে কেন তাঁরা ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় বের হবেন। কিছু হলে দায় ব্যাংকও নেবে না, সরকারও নেবে না।
গ্রুপ ফোর সিকিউরিটিজের চট্টগ্রাম অঞ্চলের নগদ সেবা বিভাগের ব্যবস্থাপক শাহরিয়ার ইবনে সাইফ জানান, ‘এ রকম পরিস্থিতিতে আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার কেউ নেই।
ব্যাংকগুলোর কোটি কোটি টাকা নিয়ে ঝুঁকির মুখে পড়তে চাই না আমরা। সে কারণে এ ধরনের কর্মসূচি ঘোষিত হলেই বিভিন্ন ব্যাংককে আমাদের সেবা বন্ধ রাখার কথা জানিয়ে দিই। ’
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকে টাকা সরবরাহ করা হয় পুলিশি পাহারায়। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতায় সেগুলোও বিপাকে রয়েছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।