আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজনৈতিক কলাম: দুই নেত্রী- দয়া করে বিদায় হোন

আমরা এমন একটা পরিবেশ চাই, যেখানে শিশুরা তাদের পছন্দ-অপছন্দের ধাপগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা নিয়ে বড় হবে।

===ফয়সল সাইফ=== স্বৈরাচার শব্দটির মানে বলতে আমরা বুঝি- যে শাসক তাঁর একক ইচ্ছায় পুরো দেশ শাসন করেন। যাঁর কাছে দেশের শাসনতন্ত্র মূখ্য নয়। যিনি মনে করেন, ক্ষমতা এমন এক জিনিস- যেটা শুধু তাঁর কাছেই শোভা পায়। বাংলিশ নামে নামাঙ্কিত ‘জাতীয় পার্টি’র নেতা এইচ এম এরশাদ একজন স্বৈরাচার ছিলেন।

‘৯০’ এর জোটবদ্ধ তীব্র আন্দোলনের মূখে তাঁর পতন হয়। যে জোটবদ্ধ আন্দোলনের শীর্ষ দুই মূখ ছিলেন শেখ হাসিনা এবং বেগম খালেদা জিয়া। পরবর্তীতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে তাঁরা দেশবাসীকে অনেকগুলো সূখময় শব্দের তৈরী মালা পরিয়ে দিয়েছিলেন। যার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শব্দ-যুগল ছিল ‘গণতন্ত্রের পুনঃপ্রতিষ্টা’। মানে যে গণতন্ত্র আমরা এখন ভোগ করছি।

তাঁদের দেওয়া গণতন্ত্র আমাদের দিয়েছে অর্থনৈতিক মুক্তি এবং একটি সূখী সমাজ। যে সমাজে ধনী-গরীবের কোনো বৈষম্য নেই। যে সমাজের মানুষ হরতাল-অবরোধ না দেখতে দেখতে শব্দগুলোই ভূলতে বসেছে। যে সমাজের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঊদাহরণ বিশ্ব খোঁজে মেলা ভার। যে সমাজে হানাহানি, কাঁদা ছোঁড়াছুড়ি প্রায় হয় না বললেই চলে।

যে সমাজের রাজনীতিবিদগণ সবাই মহাত্মা গান্ধী। এই পর্যায়ে এসে হয়তো একটু বেশিই হয়ে গেছে। সবচেয়ে আশাবাদী জাতিও আশা করে না, যে তাঁদের রাজনীতিবিদরা সবাই মহাত্মা গান্ধী হয়ে যান। তবে, তাঁরা এটাও আশা করে না- তাঁদের রাজনীতিবিদরা সবাই গণতন্ত্রের অতন্ত্র সৈনিক হয়ে যান। দূর্ভাগা বাঙালি তো চায়ই না।

কিন্তু শুধুমাত্র নির্দিষ্ট দুই ব্যক্তির ইচ্ছাধীন গণতান্ত্রিক এই বাংলাদেশে দ্বিতীয় কাজটাই ঢাক-ঢোল পিটিয়ে হচ্ছে। এই বঙ্গে রাজনীতি যাঁরা করেন- তাঁরা সবাই শুধু গণতন্ত্রের স্বার্থেই রাজনীতি করেন। তাঁরা সবাই গণতান্ত্রিক যাত্রাকে অব্যাহত রাখার জন্য বছরের পর বছর মূখে ফেনা তুলে যান। আর বেকুব বাঙালি সেই ফেনা তুলার মর্মার্থটাই বুঝতে পারে না। ফলে পেটের ক্ষুধাকে প্রাধান্য দিয়ে রাস্তায় বের হয়, মরার জন্য।

গণতন্ত্রকে চলমান রাখতে এই বেকুবদের মৃত্যুও বৈধ। ‘৮৩’ থেকে ‘৯১’ পর্যন্ত এই গণতন্ত্রের জন্যই ৮০০’শয়ের বেশি মানুষ রাস্তায় জীবন দিয়েছিল। তাঁদের একজন ছিলেন ডাঃ মিলন। তিনি যাঁর দলের কর্মী ছিলেন, সেই ব্যক্তিই আজকে মিলনকে ভূলে গিয়ে স্বৈরাচারকে বলছেন গণতান্ত্রিক হয়ে গেছেন। স্বৈরাচারের সাথে এক টেবিলে বসে খাচ্ছেন।

আমি এটাকে দোষ বলছি না। সবই তো গণতন্ত্রের জন্য। গণতন্ত্রের কথা বললে এই বঙ্গে সব জায়েয। গণতন্ত্রের জন্যই বেগম জিয়া ক্ষমতায় চিরস্থায়ী হতে চেয়েছিলেন। গণতন্ত্রের জন্যই শেখ হাসিনা জোর আন্দোলনের মাধ্যমে অনেক বেকুব বাঙালীর প্রাণ নিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্টা করলেন।

এই গণতন্ত্রের জন্যই তিনি আবার সেই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ককে গলা টিপে হত্যা করেছেন। সবই গণতন্ত্রের জন্য। কিন্তু সেই তত্ত্বাবধায় যখন আইন আর গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে সংসদে বাতিল করা হলো- তখন গণতন্ত্রের প্রতি নূন্যতম শ্রদ্ধা দেখিয়ে, আওয়ামীলীগ নেত্রীর জাতির কাছে করজোরে ক্ষমা চাওয়া উচিত ছিল, যে আমরা অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ককে প্রতিষ্টিত করতে গিয়ে যে আন্দোলন করেছিলাম, তা ভূল ছিল। তখন আন্দোলনের ফলে যেসব জীবন গেছে তাঁর জন্য আমরা দায়ী। আমাদের শাস্তি প্রাপ্য- আপনাদের ক্ষমা ছাড়া আমাদের এখন বাঁচার কোনো পথ নেই।

তবে, তিনি এসবের একাংশ বলারও সৌজন্যবোধটুকু দেখাননি। কারণ, বর্তমান বঙ্গীয় সংস্কৃতিতে- জোর যাঁর মুলুক তাঁর। আর কী নির্মম পরিহাস- বিরোধীদলীয় নেতাও এখন হাসিনার কায়দাতেই তত্ত্বাবধায়ক প্রতিষ্টার জন্য বেকুব বাঙালীদের জিম্মি করেছেন। রক্তের হুলি খেলায় মেতেছেন। বলছেন সবই গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য।

গণতন্ত্রের সেই মুক্তিটা কী? তাঁর ভাষায় নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ নির্বাচন। তিনি ভাল করেই জানেন, একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে- বর্তমান সরকারের অপশাসনে বিরক্ত মানুষের নেগেটিভ ভোটে তিনিই জয়ী হবেন। যেমন গত নির্বাচনে তাঁর সরকারের অপশাসনে মানুষের নেভেটিভ ভোটে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় বসেছিল। কিন্তু এই ক্ষমতার নামই কী চূড়ান্ত গণতন্ত্র? দুই নেত্রী এবং তাঁদের মেরুদন্ডহীন অনুগতরা যুগের পর যুগ ধরে বাঙালীদের বেকুব ধরে নিয়ে গণতন্ত্রের গল্প শুনিয়ে আসছেন। সংবিধানের বিশেষজ্ঞ সেজে সংবিধান বুঝিয়ে যাচ্ছেন।

কিন্তু নিজেরা না মানছেন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, না মানছেন সংবিধান। এ জন্য বেশির ভাগ দোষই দুই নেত্রীর কাঁধে বর্তায়। তাঁরা আসলে খুব ভাগ্যবান। দুজনেই ভাগ্যগুণে ক্ষমতার দুই ভরকেন্দ্র সেজে বসেছেন। জীবনভর হীনস্বার্থে অনুগতরা তাঁদের হুজুর হুজুর করে আসছে।

জনসভায় গিয়ে দেখেন তাঁদের জন্য অগণিত মানুষের ভীড়। সবাই তাঁদের নামে অবিরত স্লোগান দিচ্ছে। ফলে তাঁরা আহ্লাদে গদগদ হয়ে যান। নিজেদের বুদ্ধির সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করেন। কোনোদিন কেউ তাঁদের সমালোচনা করেনি বলে, তাঁরা ধরেই নিয়েছেন যে তাঁদের সব কাজই ঠিক।

তাঁদের কোনো ভূল নেই। তাঁদের চেয়ে যোগ্য কেউও এই বঙ্গে বাস করেন না। ফলে, তাঁরা- না কিছু জানেন, না জানার চেষ্টা করেন। আর এটাই বাঙালীর জীবনে সবচেয়ে বড় পরিহাস। মাঝে মাঝে ভাবি, জীবন তো একটাই।

মারা যাওয়ার পর চাইলেও আর এই জীবনটা ফিরে পাব না। ইতিমধ্যে সহিংসতায় পড়ে যাঁরা অপ্রত্যাশিত জীবন দিয়েছে, তাঁদের জন্য দুঃখটা আরো বেশি হয়। এই দুই নেত্রী বাঙালীর জীবনগুলো বিষিয়ে তুলেছেন। সবই গণতন্ত্রের জন্য- নাকি নিজেদের বংশ পরম্পরায় ক্ষমতাটাকে আঁকড়ে রাখার জন্য? দ্বিতীয়টাই সঠিক। এরা আসলে মানুষ নয়; এরা বাঙালীর জীবনে দুই অভিশাপের নাম।

বিশ্বের বেশির ভাগ গণতান্ত্রিক দেশেই রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী দুই মেয়াদের বেশি ক্ষমতায় থাকতে পারেন না। কিন্তু গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে এই দুই অভিশাপ পারেন। এরা তো এখন অবসর নিলেও পারে। ইতিমধ্যে কী অনেক হয় নি? অসংগঠিত বাঙালীর অরাজনৈতিক জনতা এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় সত্যিই নতুন রক্ত চায়। হয়তো সেটা আওয়ামীলীগ-বিএনপি’র বাইরে নয়।

কারন এই দুই দল ছাড়া গণতন্ত্রটুকুও ঠিকবে না। এদের মাধ্যমেই এক সময় দেশে সত্যিকারের গণতন্ত্র আসবে। আর সত্যিকারের গণতন্ত্র এলে- সব ধরণের সাম্যও আসবে। কিন্তু হাসিনা-খালেদাকে দিয়ে আর হবে না। সমস্যা হলো- মানুষ সেটা বুঝতে পারছে, কিন্তু তাঁরা দুজনে পারছেন না।

কেন? বাকী জীবনে কোনোদিন কাজে হাত না দিলেও তো তাঁদের কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয়। রাজার হালেই জীবন কাটবে। এছাড়া একটা মানুষের জীবনে আর যা আকাক্সক্ষা থাকে সেটা জীবন্ত কিংবদন্তী হওয়া। গণতন্ত্রের মানস কন্যা, দেশরতœ, কীর্তিমান, আপসহীন নেত্রী- এমন আরো বিশেষণ তো ইতিমধ্যে তাঁদের অনুগতরা তাঁদের দিয়ে দিয়েছেন। জীবন্ত কিংবদন্তীরা তো এসব বিশেষণই পেয়ে থাকেন।

এখন তাঁরা দুজনে সরে গেলেই বাঙালী বেঁচে যায়। আর আপনাদের জনসেভা আমাদের ভাল লাগছে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.