গাড়ি, দ্রুতগতি, রোমাঞ্চ আর পল ওয়াকার যেন সমার্থক ছিলেন। যাঁরা দ্রুতগতির গাড়ি আর রোমাঞ্চকর ছবির খোঁজখবর রাখেন, পল ওয়াকারকে না চেনার কথা নয়। ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ চলচ্চিত্রের ব্রায়ান ও’কনর চরিত্রটির মাধ্যমে পল সেই টানটান উত্তেজনার রোমাঞ্চই ফুটিয়ে তুলেছিলেন। দুঃখজনক বিষয়টি হলো শেষপর্যন্ত সেই দ্রুতগতির রোমাঞ্চ আর গাড়িপ্রীতির কারণেই প্রাণ হারালেন এই মার্কিন অভিনেতা। মৃত্যুর আগে তাঁর শেষ কথাটিও ছিল, ‘লেটস গো ফর আ ড্রাইভ’।
মাত্র ৪০ বছর বয়সে পা দিয়েছিলেন দুর্দান্ত এ অভিনেতা। কাজ করছিলেন ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ সিরিজের নতুন ছবিতে। কিন্তু গত শনিবার বিকেলে লস অ্যাঞ্জেলেসে মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন তিনি।
দুর্ঘটনার দিনটিতে তিনি কিন্তু এক মহত্ উদ্দেশেই পথে বেরিয়েছিলেন। যাচ্ছিলেন দাতব্যপ্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ সংগ্রহের কাজে।
পলের বন্ধু রজারের দ্রুতগতির পোরশে গাড়ি দেখে মজা করেই বলেছিলেন, গাড়িটা কেমন চলে তা তিনি এখনো পরীক্ষা করেই দেখেননি। এরপর বন্ধুর গাড়িতে উঠে বলেছিলেন, ‘লেটস গো ফর আ ড্রাইভ। ’ কিন্তু পথে হঠাত্ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন রজার। লাইটপোস্ট আর গাছের সঙ্গে খুব জোরে ধাক্কা খায় তাঁদের গাড়িটি। সংঘর্ষের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আগুন ধরে যায় গাড়িটিতে।
ঘটনাস্থলেই নিহত হন পল ওয়াকার।
বন্ধুর এভাবে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারেননি পলের আরেক বন্ধু জিম ট্রপ। দুঃখ করেই বলেছেন, ‘এভাবেই বুঝি চলে যেতে হলো। ’
জিম ট্রপ জানিয়েছেন, দ্রুতগতির গাড়ির প্রতি তাঁর ঝোঁক আর ভালোবাসা ছিল অপরিসীম। ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস ফ্র্যাঞ্চাইজির ছবিগুলোতে দ্রুতগতির গাড়ি হাঁকানোর দৃশ্যগুলো ছিল তাঁর বিশেষ পছন্দের।
কী আশ্চর্য! যে দ্রুতগতির গাড়ির ছবিগুলোতে অভিনয় করলেন, দ্রুততর জীবন পার করে শেষপর্যন্ত গাড়ির দ্রুতগতির সঙ্গেই চিরনিদ্রায় গেলেন তিনি। গাড়ি, গতি আর রোমাঞ্চের সঙ্গেই জীবনের শেষ মুহূর্তগুলো কাটালেন পল।
যাঁরা ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ চলচ্চিত্র দেখেছেন, তাঁরা সহজেই স্বীকার করবেন যে ব্রায়ান ও’কনার এ চলচ্চিত্রটির প্রাণ ও মূল চরিত্র যাকে যথার্থ রূপে পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন পল। পর্দায় ব্রায়ানকে যেসব গাড়ি চালাতে দেখা গেছে, তার মধ্যে মিতসুবিশি এক্লিপস, টয়োটা সুপরা, মিতসুবিশি ৩০০০জিটি, ফোর্ড এফ১৫০-লাইটনিং, মিতসুবিশি ল্যানসার ইভোলিউশন ৭, নিশান স্কাইলাইন জিটি-আর আর৩৪, হ্যামার এইচ১, সুবারু এমপ্রেজা, ডজ চার্জার, ফোর্ড এসকর্ট এমকে১, আলফা রোমিও। গাড়িপ্রেমী ও রোমাঞ্চপ্রিয় পলের চলচ্চিত্রগুলো বক্স অফিসেও হিট করেছে।
কারও কারও জন্ম হয় হয়তো অভিনেতা হওয়ার জন্য। পল ওয়াকার ছিলেন সেই সৌভাগ্যবানদের একজন। ওয়াকারের জন্ম ১৯৭৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় জন্ম নেওয়া পলের মা ছিলেন ফ্যাশন মডেল আর বাবা প্রকৌশলী। দুই বছর বয়সেই শোবিজ জগতের সঙ্গে পলকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর মা।
‘হাইওয়ে টু হেভেন’, ‘হুজ দ্য বস’, ‘দ্য ইয়াং অ্যান্ড রেস্টলেস’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। অবশ্য পল দর্শকচিত্ত জয় করেছেন তাঁর ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’ দিয়ে। যে চলচ্চিত্রে দুর্দান্ত মারকুটে অভিনেতা হিসেবে পরিচিত ভিন ডিজেল রয়েছেন; সেখানে দুর্দান্ত অভিনয়গুণের কারণে আলাদা খ্যাতি অর্জন করেছিলেন পল। তাঁর অভিনীত অন্যান্য চলচ্চিত্র হচ্ছে ‘এইট বিলো’, ‘ইনটু দ্য ব্লু’, ‘সিজ অল দ্যাট’ ও ‘টেকার্স’। তাঁকে ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের এক্সপেডিশন গ্রেট হোয়াইট সিরিজেও দেখা গেছে।
রোমাঞ্চ আর গাড়ির প্রতি একদিকে যেমন তাঁর ঝোঁক ছিল, তেমনি মানুষের কল্যাণে এগিয়ে আসতেও পিছপা হতেন না এই অভিনেতা। দুর্গত মানুষের সেবার উপলক্ষে দাতব্য কাজে এগিয়ে এসেছেন তিনি।
মানবতার জয়গানের পাশাপাশি চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বিনোদন আর রোমাঞ্চকর জীবনযাপনের যে স্বাদ তিনি দর্শকচিত্তে দিতে পেরেছেন, তা রোমাঞ্চপিপাসু মানুষকে সব সময়ই সাহস জোগাবে আর পল ওয়াকার দর্শকচিত্তে চিরকাল থাকবেন ‘ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস’।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।