টানা অবরোধে পথে বসতে চলেছেন রাজধানীর ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। অবরোধে তাদের বেচাবিক্রি প্রায় নেই বললেই চলে। স্বল্প পুঁজির এসব ব্যবসায়ী এখন তাদের পুঁজি হারানোর পথে। রাজধানীর বিভিন্ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জানান, হরতালের চেয়ে অবরোধে নাশকতার আশঙ্কা বেশি হওয়ায় ক্রেতারা ঘর থেকে এখন বিনা প্রয়োজনে বের হচ্ছেন না। আর বিক্রি না থাকায় নিজের ও পরিবারের জন্য দুই বেলার খাবার জোগাড় করতেই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা হিমশিম খাচ্ছেন।
এ অবস্থায় জীবন রক্ষার তাগিদে তারা সরকার ও বিরোধী দলের কাছে এ দুর্ভোগের প্রতিকারের জন্য দাবি জানান।
রাজধানীর দোয়েল চত্ব্বরে গতকাল বিকালে হাইকোর্ট-সংলগ্ন মাটির তৈজসপত্র বিক্রেতা শরিফ বলেন, 'অবরোধে ব্যবসা এক্কেবারে নাই। লোকজন না আইলে জিনিস বিক্রি করমু কেমনে? সারা দিনে ১০০ টাকার জিনিসও বিক্রি করতে পারি নাই। ' পাশের এক নার্সারি-মালিক সজীব বলেন, 'সারা দিন দোকান খুইলা বইসা আছি। কিন্তু কাস্টমারের দেখা নাই।
আজ কয়দিন ধইরা এই অবস্থা। পরিবারের লাইগা খাবার কেমনে জোগাড় করমু কে জানে?' এদিন বিকালে সজীবসহ ক্রেতার অপেক্ষায় থাকা চারা বিক্রেতাদের সময় কাটাতে লুডু ও দাবা খেলতে দেখা যায়। কথা হলে ক্ষোভ প্রকাশ করে এক বিক্রেতা বলেন, 'সরকার ও বিরোধী দল কেউই আমাগোরে চাকরি দ্যায় না। নিজেদের জমানো টাকা, ধার কইরা এবং জমিজমা বেইচা ব্যবসা শুরু করছি। এখন তাগো নিজেদের স্বার্থের লাইগা আমাগো ক্ষতি হইতাছে।
এ অবস্থা আমরা চাই না। শীঘ্রই এর প্রতিকার চাই। ' এদিকে শাহবাগের ছবির হাটের সামনে অবস্থিত ফুটপাতে শীতবস্ত্র-বিক্রেতা শেখ জামান বলেন, 'মানুষ নাই তাই বেচাবিক্রিও নাই। দুই বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা করতে জিনিস যে দামে কিনছি তার চাইতেও কম দামে বিক্রি করতে হইতাছে। ' পাশেই জাদুঘরের সামনে চটপটি বিক্রেতাদের ক্রেতা ডাকতে দেখা গেলেও সেদিন তাদের দোকানে তেমন কেউ আসেনি।
স্বাভাবিক দিনগুলোতে যেখানে চটপটি খেতে সন্ধ্যায় বিভিন্ন বয়সী মানুষের ভিড় দেখা যায়, সেখানে গতকাল এ দোকানগুলোতে বিক্রেতাদের বসে থাকতে দেখা গেছে ক্রেতার অপেক্ষায়। এক চটপটি বিক্রেতা বলেন, 'অবরোধে একে তো বিক্রি খুব কম, এর ওপর প্রতিদিনই বানানো খাবার নষ্ট হইতাছে। এ জন্য ব্যবসায় ক্ষতির শেষ নাই। ' মিরপুর এক নম্বর কাঁচাবাজারের সামনে সবজিভর্তি ট্রাক এলেও অবরোধের কারণে এদিন নির্ধারিত সময়ের আগেই এগুলো গন্তব্যে পেঁৗছে। জানতে চাইলে সবজি বিক্রেতাদের একজন বলেন, অবরোধের কারণে তারা বাইরের জেলা থেকে মালামাল ঢাকায় নিয়ে আসতে পারছেন না।
সময়মতো ঢাকায় না পেঁৗছানোর কারণে অনেক সবজি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নষ্ট সবজি ফেলে দিতে হচ্ছে। আর যেগুলো মোটামুটি ভালো সেগুলো বিক্রি করে দিতে হচ্ছে কম দামে। এদিকে রাজধানীর গুলিস্তান ও বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ৫ মে হেফাজত কর্মীদের তাণ্ডবে এরই মধ্যে পুঁজি হারিয়ে ঋণগ্রস্ত। এ অবস্থায় নতুন করে আবার অবরোধের খবরে তারা শঙ্কিত।
বায়তুল মোকাররমের জুয়েলারি দোকানের সামনের ফুটপাতের শোপিস-বিক্রেতা মো. খলিল বলেন, 'এমনিতেই ঋণের মধ্যে আছি। তার ওপর অবরোধের জ্বালাও-পোড়াওয়ের কারণে এখন দোকান সবসময় খোলার সাহস পাই না। যেদিন খুলি কাস্টমার পাই না। কিন্তু আমারে তো ঠিকই সময়মতো ঋণ শোধ করতে হইব। আবার পোলা-মাইয়ারেও খাওয়াইতে হইব।
'
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।