আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন ক্রীড়াপ্রেমীর চিরবিদায়

'খেলাধুলা বিশ্বে পরিবর্তন আনার সামর্থ্য রাখে। মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার ক্ষমতা আছে তার। আছে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার সামর্থ্য। তরুণদের জন্য তার রয়েছে নিজস্ব ভাষা। চরম অসহায় অবস্থায়ও খেলাধুলা মানুষের মনে আশা জাগাতে পারে।

এমনকি সরকারের চেয়েও এর শক্তি অনেক বেশি। ' একজন নিখাদ ক্রীড়াপ্রেমিক হিসেবে দীর্ঘ দিন আগে কথাগুলো বলেছিলেন আফ্রিকানদের মাদিবা (পিতা) নেলসন ম্যান্ডেলা। ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে তার দৃঢ় অবস্থান এবং বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে তার নেতৃত্বই মুক্তি দিয়েছিল কোটি কোটি আফ্রিকানকে। আজকের আফ্রিকায় একজন ম্যান্ডেলার বিদায় মানে কোটি মানুষের অশ্রুসাগরে ঢেউ ওঠা। যে ঢেউ আফ্রিকার সীমানা পেরিয়ে তরঙ্গ তুলেছে পুরো বিশ্বেই।

যে ঢেউ ক্রীড়াঙ্গনেও এনে দিয়েছে উথাল-পাথাল ঝড়! গতকাল ভোরে নেলসন ম্যান্ডেলা চিরবিদায় জানিয়েছেন বিশ্বকে। তার বিদায়ে শোকের সাগরে ডুবে আছেন ক্রীড়াঙ্গনের জীবন্ত কিংবদন্তিরা।

'পৃথিবী যখন নেলসন ম্যান্ডেলাকে চরম অবহেলা করেছে তখন তিনি নিজের সেরাটাই উপহার দিয়েছেন। এখন থেকে হাজার বছর পরও তাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে মানব সমাজ। ' সাবেক টেনিস তারকা আন্দ্রে আগাসি তার এক বার্তায় এভাবেই শ্রদ্ধা জানালেন দক্ষিণ আফ্রিকার জাতির পিতাকে।

ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে আহ্বান জানিয়েছেন, 'চল, আজ থেকে আমরাও ম্যান্ডেলার পথেই চলি। ' মাইক টাইসন থেকে শুরু করে অতীত-বর্তমানের তারকারা মাদিবার বিদায়ে শোক প্রকাশ করেছেন।

নেলসন ম্যান্ডেলা একজন রাষ্ট্রনায়ক। একটি জাতির মুক্তিসংগ্রামের অবিসংবাদিত নেতা। কিন্তু ক্রীড়াঙ্গনে তার জন্য এমন মাতম কেন? পেলেদের হৃদয় কাঁদছে কেন? ফিফা, আইসিসি থেকে শুরু করে সবার মনে এতটা আবেগ এলো কোত্থেকে? দক্ষিণ আফ্রিকা ১৯৯৫ সালে নেলসন ম্যান্ডেলার শাসনকালেই (১৯৯৪-৯৯) জয় করেছিল রাগবি বিশ্বকাপ।

সেবার রাগবি বিশ্বকাপের আয়োজক ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এরপর ২০০৩ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপের আয়োজক হয় তারা। রাগবি বিশ্বকাপ জয় করার পর ম্যান্ডেলা প্রোটিয়াসদের আহ্বান জানিয়েছিলেন ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় করার জন্য। তা আর হয়নি। এর পরই অবাক করা ঘটনাটা ঘটে।

আফ্রিকায় ফুটবল বিশ্বকাপ হবে, এমন কল্পনা এক যুগ আগেও কেউ করেনি। কিন্তু একজন ম্যান্ডেলার আবেদন এমনকি ফিফাও অগ্রাহ্য করতে পারেনি। ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা আয়োজন করে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রীড়াযজ্ঞের। ক্রীড়াবিদ না হয়েও ক্রীড়াঙ্গনের জন্য যিনি ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ, তার জন্য কেন কাঁদবে না পেলে-ম্যারাডোনারা!

২৭ বছরের দীর্ঘ বন্দীজীবনে শয়নে-স্বপনে নেলসন ম্যান্ডেলা কেবল কল্পনা করেছেন এমন এক বিশ্বের যেখানে সব মানুষ হবে সমান। সাদা-কালোর ভেদাভেদ দূর হয়ে যাবে।

এভাবে বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হবে এক সুন্দর শান্তির সমাজ। নেলসন ম্যান্ডেলার বিদায়ে পেলের মতোই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া উচিত সবার, 'চল, আমরা ম্যান্ডেলার পথেই চলি'।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.