-এক্সকিউজ মি। (তিশা খেয়াল করলো না প্রথমে)
-এক্সকিউজ মি ম্যাম। আপনার নাম কি তিশা??
তিশা ঘাবড়ে গেল। জানা নেই শুনা নেই একটা ছেলে মাঝ রাস্তায় তার নাম ধরে ডাকছে। কিউরোসিটি আর সঙ্কোচে তিশা ছেলেটার দিকে তাকালো।
-জী......হ্যাঁ। আমি তিশা। কিন্তু আপনাকে তো চিনতে পারলাম না।
-আমার নাম মুহিত। সায়েম আমাকে পাঠিয়েছে আপনাকে এই বাক্সটা দিতে।
ওর নাকি কি এক জরুরী কাজ আছে। তাই বাক্সটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে কেটে পড়লো।
-তাহলে..আপনি কি সায়েমের বন্ধু?
-হুম। অনেক কাছের বন্ধুই বলতে পারেন।
-সায়েমও আমার বন্ধু।
তাহলে আমরা তো তুমি করেই বলতে পারি। কি বলো।
-হুম.....তা পারি। এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকার থেকে চলো একটু হাঁটাহাঁটি করি।
শীতের মিষ্টি রোদ ততক্ষণে এলিয়ে পড়েছে সিক্ত ঘাসের গায়ে।
চারিদিকের আদ্র ভাব এখনো কাটেনি। রাস্তার দুই পাশের গাছগুলো যেন ঠাণ্ডায় জমে আছে। পাকা রাস্তার ভিজে ভাব আস্তে আস্তে কেটে যাচ্ছে রোদের ছোঁয়ায়। মুহিত আর তিশা হেঁটে চলল পাকা রাস্তাটি ধরে।
-আচ্ছা,তুমিতো আমাকে চিনতে না।
তবুও বুঝলে কিভাবে যে আমিই তিশা। অন্য কেউও তো হতে পারতাম।
-হুম। তা অবশ্য ঠিক। তবে তুমি যেভাবে রাস্তার মাঝে অপেক্ষা করছিলে কারো জন্য তাতে অন্য কেউ হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
আর আগেই তো তোমার নামটা জিগ্যেস করলাম যাতে টার্গেট মিস না হয় :-p।
-তুমি আর সায়েম কি একই ডিপার্টমেণ্টে?
-না। আমি মেকানিক্যাল আর সায়েম সিভিলে। তুমি?
-আমি। বাংলাতে।
-তোমাদের ক্যাম্পাসে সাবজেক্টগুলোর ভিন্নতা আছে। কিন্তু আমাদের ক্যাম্পাসে সব সাবজেক্ট একই রকম মনে হয়।
-একই রকম বলতে???? আর আমাদের ক্যাম্পাসের ক্ষেত্রে ভিন্নতাই বা কোথায়।
-যেমন আমাদের সবই কাঠ-খোট্টা মার্কা পড়ালেখা। কেউ সার্কিট এনালাইসিস করে কেউ বিম এনালাইসিস অথবা ডিজাইন করে।
আর তোমাদের এখানে কেউ সারাদিন নাটক করছে কেউ টেক্সট বুক হিসাবে উপন্যাস পড়ছে। কেউ আবার গান গাচ্ছে বা ছবি আঁকছে।
কথাগুলো বলার সময় তিশা মুহিতের দিকে কৌতূহল নিয়ে তাকিয়ে আছে। অসাধারনভাবে গুছিয়ে কথা বলে মুহিত। মুহিত’এর কথা যতই শুনছে ততই ভালো লাগছে তিশা’র।
ছেলেটার বুদ্ধিদীপ্ততা তার কথা বলার মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে।
-তুমি মনে হয় গল্প-উপন্যাস পড়তে পছন্দ করো। অনেক গুছিয়ে কথা বলো তুমি।
-উপন্যাস পড়ি, সময় পেলে। তুমিও নিশ্চয় পড়ো।
তোমার পছন্দের একটা উপন্যাসের শুনি।
-সাতকাহন। আমার প্রিয় একটি উপন্যাস। সময় পেলে আমি এখনো রিভিশন দেই। :-)
-হুম আমিও পড়েছি,সাতকাহন।
সময়ের সাথে আমাদের চাওয়া-পাওয়াসহ অনেক কিছুই পাল্টেছে কিন্তু কিছু আদিমতা বা কুসংস্কার এখনো আমাদের উপর ভর করে আছে। লেখক সেটাই হয়তো দেখাতে চেষ্টা করেছেন।
-হুম,পড়েছি কিন্তু এতকিছু ভাবিনি। তোমার পছেন্দের কোন বই।
-কালবেলা আমার সব থেকে পছন্দের।
অনিমেষ আর মাধবীলতা। সমরেশের অমর সৃষ্টি।
-এখন তো সাপ্তাহিক ছুটি। নতুন কোন বই পড়ছ নাকি??
-হুম। পড়ছি।
রোমানিয়ান লেখক এলিয়েদ’এর “লা নুই বেঙ্গলি” আর মৈয়ত্রী দেবী’র “ন হন্যতে”। এই দুইটা বই নিয়ে একটা গল্প আছে,জানো। অনেকে মনে করে এলিয়েদের সাথে মৈয়ত্রী দেবীর সম্পর্ক ছিল। আর “লা নুই বেঙ্গলি” উপন্যাসের প্লটও সেটাই। মৈয়ত্রী দেবী নাকি এই বইয়ের উত্তরস্বরূপ লিখেছেন “ন হন্যতে”।
তিশা একটু সঙ্কোচে পড়লো। বাংলায় পড়ে অথচ এই বইগুলোর সম্পর্কে গল্প শোনা তো দূরের কথা নামই শোনেনি কোনদিন। মুহিতের কথায় শুধু সায় দিয়ে গেলো যেন সবই জানে সে। ছেলেটার ভিতর এমন কিছু আছে যা তিশা কে বাধ্য করছে তার পাশে আরও কিছুক্ষণ হাঁটতে। দ্রুত হাঁটলে এতক্ষনে হলে পৌঁছে যেত সে।
-তোমার হল আর কতদূর। অনেকক্ষণ ধরে তোমাকে আটকে রেখেছি। চলো হলে পৌঁছে দিয়ে আসি।
তিশা মৃদু হাসলো। এখন কেন জানি তার মনে হচ্ছে হল’টা আরেকটু দূরে হলে ভালোই হত।
-এইতো সামনে। ঐ যে লাল বিল্ডিং’টা,তার পরেই আমাদের হল। বাইরে বের হওয়া হয় না সাধারণত। আজকে কিন্তু হাঁটতে ভালোই লাগছে।
-তোমার সাথে আরও কিছুক্ষন আলাপ করতে পারলে আমারও ভালো লাগতো।
কিন্তু আমাকে একজন ফোন দিচ্ছে বারবার। তার সাথে দেখা করতে যেতে হবে।
তিশা মনে হয় মন খারাপ করলো। কি বলবে কিছু খুঁজে পাচ্ছে না সে। তার শুধু মনে হচ্ছে মুহিত আর কিছুক্ষন কথা বলুক।
সে কান পেতে শুনবে।
মৌনতা ভাঙতে মুহিত প্রশ্ন করলো। আচ্ছা তুমি রান্না করতে পারো???
-হুম। পারি। তবে টুক-টাক।
নিজের খাওয়া-দাওয়া চালিয়ে নেয়া যায়।
-ওটুকু পারলেই চলবে। যাক তাহলে রান্না পারে এমন একজন বন্ধু পেলাম। :-)
তিশা এবার সত্যি হাসলো।
-আচ্ছা,তোমাকে একদিন রান্না করে খাওয়াবো।
এবার হল তো।
-হুম। দাওয়াত দিলে তো মিস দিবো না। তবে বিল দিতে পারবো না কিন্তু।
মুহিত কথাগুলো বলে তিশা’র দিকে তাকালো।
তিশা আর মুহিত দুইজনই হাসতে শুরু করলো।
একসময় হলের সামনের গেটে এসে হাজির হল ওরা দুইজন। তিশা মুহিতকে বলল,এটাই আমাদের হল। আর হাঁটতে হচ্ছে না আমাদের।
-তাহলে তো এবার যেতে হবে আমাকে।
ভালো থেকো। আর দাওয়াত যেন মিস না হয়।
‘আবার দেখা হবে’ বলে মুহিত তিশা’কে বিদায় জানিয়ে একটা রিকশায় চেপে বসলো। হাত নাড়িয়ে বিদায় জানালো তিশা। রিকসার গতি ধীরে ধীরে বেড়ে চলল।
একসময় হারিয়ে গেল গাছের আড়ালে।
সবকিছুই যেন স্বপ্নের মত মনে হচ্ছে তিশা’র কাছে। গতকালও মুহিত নামের এই ছেলেটিকে চিনতো সে। আজ প্রথম দেখাতেই মুহিতের প্রতি এক অন্যরকম ভালো লাগা ভর করে বসলো। এটা কি শুধুই ক্ষণেকের ভালো লাগা না কি অন্য কিছু।
হিসাব মেলাতে পারছিলো না সে............।
কথাগুলো ভাবতে ভাবতে হুট করেই তার হাতের ছোট্ট বাক্সটির উপর চোখ পড়লো তিশা’র। বাক্সটি সায়েম তাকে পাঠিয়েছে। সায়েমের সাথে তার সম্পর্ক এখন আর বন্ধুত্বের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই।
-সমাপ্ত-
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।