জাতীয় পার্টি নির্বাচনে না এলেও আগামী ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের বিষয়ে অনড় অবস্থানে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্ট বলেছেন, নির্ধারিত তারিখেই নির্বাচন হবে। গতকাল নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভার দ্বিতীয় বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের অবস্থানের বিষয়টি পরিষ্কার করেন। অবশ্য গতকালের বৈঠকে নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দেওয়া জাতীয় পার্টির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন না। তাদের এই অনুপস্থিতি নিয়েও বৈঠকে কোনো রকম আলোচনাও হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এদিকে জাপা না এলেও যথাসময়ে নির্বাচন করার পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদের সভাকক্ষে মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টি থেকে মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়া মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দেবেন না সেটা আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। তারা মন্ত্রিসভা বৈঠকের ফোল্ডারও ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। এ কারণে গতকালের বৈঠকে তাদের জন্য আসন সংরক্ষণ করা হয়নি। এটি নতুন কোনো বিষয় না, সব সময়ই এটা করা হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিসভার একাধিক সিনিয়র সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মন্ত্রিসভার বৈঠকে দুটি আলোচ্য বিষয়ের বাইরে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে অনেক উন্নতি হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে যেখানে যেখানে অতিরিক্ত নিরাপত্তা বাহিনী পাঠানোর প্রয়োজন সেখানে সেখানে দ্রুত বিজিবিসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের পাঠানোর জন্য স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ থেকেই সারা দেশে নানারকম অনুষ্ঠান ও উৎসব আয়োজনের কথা। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত গোটা দেশে এ অনুষ্ঠান চলবে। ইতোমধ্যে দলীয় নেতা-কর্মীদেরও সেরকম নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বৈঠক সূত্র জানায়, খাদ্যপণ্য, জ্বালানি তেল, জেট ফুয়েলবাহী পরিবহন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্যও সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, নির্বাচনে জাতীয় পার্টি না এলেও নির্বাচন এই শিডিউলেই অনুষ্ঠিত হবে। এরশাদ কিংবা জাতীয় পার্টি নিয়ে কোনো রকম আলোচনা হয়নি জানিয়ে একজন প্রভাবশালী মন্ত্রী জানান, এই চ্যাপ্টার মোটামুটি ক্লোজ হয়ে গেছে। তবে জাপা বিষয়টি এখনো ঝুলিয়ে রেখেছে। অবশ্য জাপার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনাও নেই বলে জানান তিনি। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সাম্প্রতিক একটি বক্তব্য নিয়ে আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি এরকম বক্তব্য না দিলেই ভালো হতো। এদিকে গতকালের বৈঠকে ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট আইন ২০১৩-এর খসড়া নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এ ছাড়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জারিকৃত কতিপয় অধ্যাদেশ কার্যকরকরণ (বিশেষ বিধান) আইন ২০১৩-এর তফসিলভুক্ত অধ্যাদেশসমূহ নতুন আইন আকারে প্রণয়ন সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে অর্থ বিভাগের অধীন উক্ত মেয়াদে প্রণীত নির্দিষ্টকরণ অধ্যাদেশসমূহের বিষয়ে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি (জাপা) না এলেও যথা সময়েই নির্বাচনের পক্ষে আওয়ামী লীগ। নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হতে দেবে না দলটি। যে কোনো মূল্যে ঘোষিত তফসিলেই নির্বাচনের পক্ষে। আগামী ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের দিন থেকেই শুরু হচ্ছে নির্বাচনী প্রচারণা।
দলীয় সূত্র মতে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩৩ জনের মতো প্রার্থী বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। পুনরায় যদি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়, সেক্ষেত্রে সাংবিধানিক জটিলতার সৃষ্টি হবে। এ ছাড়া ২৪ জানুয়ারি সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। এর মধ্যে নির্বাচন না হলেও দেশ কে পরিচালনা করবে তা নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হবে। প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার এই মুহূর্তে নির্বাচন পিছালেই কোনো সমাধান বেরিয়ে আসবে এমন সম্ভাবনা নেই। বিএনপির নির্বাচনে আসা নিশ্চিত না হলে নির্বাচন পিছানোর কোনো যৌক্তিকতা নেই বলে তারা জানান। বরং দলীয় অবস্থান থেকে সরে এসে এক ধরনের নতিস্বীকার ও সময়ক্ষেপণ ছাড়া কিছুই নয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২৪ জানুয়ারি বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ। এর মধ্যে যদি কোনো কারণে নির্বাচন না হয় তাহলে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হবে তার দায় কে নেবে। আওয়ামী লীগ কোনো সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হতে দেবে না। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন অবশ্যই হবে। বিদেশি বন্ধুরাও এখন অনুধাবন করছেন সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর আগে শনিবার জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফারনান্দেজ তারানকোর সঙ্গে বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও আগামী ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হবেই বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আর বসে থাকবে না দলের নেতারা। লক্ষ্য ভোটকেন্দ্রে ৫১ শতাংশ ভোটার উপস্থিতি। এ জন্য তারা ব্যাপকভাবে প্রচার-প্রচারণায় নামার সিদ্ধান্তও নিয়েছে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের দিন থেকে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা শুরু করা হবে। ওইদিন একটি টিম গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করবে। আরেকটি টিম সিলেটের হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় নামবে। প্রতিটি টিমে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি সহযোগী সংগঠন ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা থাকবেন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, দলের কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৩ ডিসেম্বরের পর থেকেই আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় নামব। নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারে সেজন্য আমাদের সর্বাত্দক সহযোগিতা থাকবে। নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হলে কেন্দ্রীয় নেতারা সারা দেশে নির্বাচনী সফরে যাবেন। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দেওয়া শেষ হয়েছে। ইশতেহার তৈরির কাজও শেষ হয়েছে। দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে ১৪ দলের শরিকদের আসন ভাগ করে দেওয়া হবে। প্রচারণার জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। দলীয় মনোনয়ন যারা পেয়েছে তারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতারাও কে কোন এলাকায় যাবেন তার তালিকাও তৈরি করা হয়েছে। নির্বাচনে বাধা এলে তা প্রতিরোধ করার জন্যও বিভিন্ন পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।