শিক্ষক এবং উপাচার্যের পাল্টাপাল্টি অবস্থানের কারণে অশান্ত হয়ে উঠেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। ডিন নিয়োগ বাতিল করতে একদিকে রেজিস্ট্রার ও ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে টানা তিন দিন ধরে অবরুদ্ধ রেখেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। অন্যদিকে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে তার বাসার সামনে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়েছে শিক্ষক ফোরাম। এদিকে নিজ বাসার সামনে শিক্ষকদের অবস্থানের প্রতিবাদে স্ত্রীকে নিয়ে সেখানেই অবস্থান করছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একজন নির্বাচিত উপাচার্যের বাসভবনের সামনে শিক্ষকদের অবস্থান অনাকাঙ্ক্ষিত, নাগরিক অধিকার ও আইনের পরিপন্থী। একজন শিক্ষকও যদি বাসার সামনে অবস্থান করেন তাহলে তিনি বাসভবনে প্রবেশ করবেন না।
এদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান সংকটের কারণ অনুসন্ধান করে তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষামন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন কমিটির সদস্যরা। গতকাল শিক্ষাসচিবের কাছে এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। আজ প্রতিবেদনটি গণমাধ্যমের সামনে প্রকাশ করবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষাসচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী। সচিব জানান, প্রতিবেদন প্রদানের পর তিন দিন সময় দেওয়ার কথা থাকলেও সময় না দিয়ে শিক্ষকরা আন্দোলনে নেমে পড়েছেন। জানা গেছে, ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে ডিন নিয়োগ বাতিলের দাবিতে নিয়োগ ফাইলসহ রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবু হাসানকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষকরা। গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৫২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ রয়েছেন তারা। অবরোধের তিন দিন পেরিয়ে গেলেও উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ট্রেজারারের কোনো খোঁজ নেননি। শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক অধ্যাপক হানিফ আলী বলেন, উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। ডিন নিয়োগ প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেই রেজিস্ট্রারকে অবরোধ মুক্ত করা হবে। অবরুদ্ধ রেজিস্ট্রার ও ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে মুক্ত করার দাবিতে গতকাল সকাল ১০টায় ধর্মঘট ও প্রতিবাদী সমাবেশ করছে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার সমিতি। এ সময় রেজিস্ট্রারদ্বয়কে মুক্ত করা না হলে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন সমিতির সভাপতি। বেলা দেড়টায় শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ব্যানারে নীল দল, শিক্ষক মঞ্চ ও শিক্ষক পর্ষদের শিক্ষকরা এবং ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রুপের নেতৃত্বে শিক্ষার্থীদের নিয়ে মানববন্ধন করা হয়। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা নিরসন ও স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে এক বিবৃতিতে আচার্যের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন জাবি শাখা ছাত্র ইউনিয়ন।
এদিকে সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনায় বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ কর্মীদের বহিষ্কারাদেশ তুলে নিয়েছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর এক অফিস আদেশে বহিষ্কৃতদের শাস্তি মওুকফ করা হয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। জানা যায়, ইতিহাস বিভাগের ছাত্র সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২ সাংবাদিক ও বিএনসিসি রোভার স্কাউট সদস্যদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ কর্মীরা। পরে ২০ এপ্রিল সিন্ডিকেট সভায় ২ ছাত্রলীগ কর্মীকে ১ বছর এবং ২ জনকে ৬ মাসের জন্য বহিষ্কার ও ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। হামলার শিকার রোভার স্কাউট সদস্য আফজাল জাহান ইমরান জানান, বেআইনিভাবে শাস্তি মওকুফ করে ভিসি ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের মদদ দিচ্ছেন। তিনি নামমাত্র বহিষ্কার করে তা আবার তুলে নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করলেন। এ ব্যাপারে প্রক্টর মুজিবুর রহমান বলেন, বহিষ্কারাদেশ তুলে নেওয়ার কথা নয়। তবে খোঁজ নিয়ে দেখছি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।