রাজনৈতিক, পারিবারিক কিংবা ব্যক্তিগত কারণে একে অপরের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থাকলেও একটি জায়গায় দেশের ১৬ কোটি মানুষের ভাবনা মিলে যায় এক বিন্দুতে, সেটা হচ্ছে ক্রিকেট। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, গোত্র - নির্বিশেষে সব ভেদাভেদ ভুলে গোটা দেশ যেন ক্রিকেটের সাফল্যে মেতে ওঠে। এক একটি জয়ে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় বয়ে যায় আনন্দের ফাগ্লুধারা। সংঘাতময় রাজনীতি আমাদের যতটা বিক্ষুব্ধ করেছে, ক্রিকেট ততই এক সুতোয় বেঁধেছে। কিন্তু রাজনীতির দুষ্টু চক্রে পড়ে সেই ক্রিকেট আজ আক্রান্ত।
নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূধর্্ব-১৯ দল সাত ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ স্থগিত রেখে গতকাল দুপুরে ঢাকা ছেড়েছে। কারণ কে বা কারা চট্টগ্রামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের হোটেলের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করেছে। তারপর ক্যারিবীয় ক্রিকেট বোর্ড তাদের যুবাদের সফর বাতিল করে দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বার বার চেষ্টা করেও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে আটকাতে পারেনি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দল কাল চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দর থেকে ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক পেঁৗছে সেখান থেকেই সোজা দেশে ফিরে যায়।
বাংলাদেশের জন্য এটা দুঃসংবাদ তো বটেই ক্রিকেটের জন্য সতর্কবার্তাও।
১৯৯৭ সালে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পাওয়ার পর মূলধারায় চলে আসে আমাদের ক্রিকেট। কিন্তু এরপর থেকে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ক্রিকেটে কোনো দল এমনভাবে সফর বাতিল করেনি। তাছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা থাকলেও এর আগে কখনো এমন কাজ করা হয়নি যাতে ক্রিকেটাররা আতঙ্কিত হয়। তাই ক্যারিবীয় ক্রিকেটারদের হোটেলের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ এবং নিরাপত্তাহীনতায় ভুগে তাদের বাংলাদেশ ত্যাগ করায় বড় ক্ষতি হয়েছে দেশের ক্রিকেটের।
এমনিতেই আইসিসির ফিউচার ট্যুরে বাংলাদেশকে সব সময়ই প্রহসনের শিকার হতে হয়, তারপরেও এমন একটি টুর্নামেন্ট বাতিল হওয়ায় হতাশ ক্রিকেটপ্রেমীরা। হতাশ যুব ক্রিকেটাররাও। প্রথম ম্যাচে বড় ব্যবধানে জিতে সাত ম্যাচের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। তারপরেও সিরিজটা বাতিল হওয়াটা অবশ্যই বেদনায়ক।
সফরটা অনূধর্্ব-১৯ দলের বলে অনেকেই হয়তো বিষয়টাকে উড়িয়ে দিতে পারেন।
কিন্তু যেখানে অনূধর্্ব-১৯ দলই নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে চলে যায়, সেখানে জাতীয় দল কি এমন পরিস্থিতিতে ঝুঁকি নিয়ে খেলত। হয়তো না। তাই যারা আতঙ্ক তৈরি করার চেষ্টা করেছেন তাদেরকে ভুলে গেলে চলবে না যে, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক সময় ঠিক হবে কিন্তু আইসিসি ব্লাক লিস্টে একবার বাংলাদেশের নাম চলে গেলে তা আমাদের ক্রিকেটের জন্য মোটেও সুখকর হবে না। আসলে ব্লাক লিস্ট বলতে বোঝানো হয়েছে, আইসিসির অন্যান্য সদস্য দেশগুলোর মানসিকতাকে। দেশের এমন পরিস্থিতিতে অন্য দেশ যদি মনে করে তারা আর বাংলাদেশে খেলতে আসবে না তখন কি হবে?
অন্য দেশের কথা বলে কি লাভ, ২০১১ সালে বাংলাদেশ দলের পাকিস্তান সফরসূচি চূড়ান্ত হওয়ার পরও তো নিরাপত্তার জন্য আমরা ক্রিকেটারদের যেতে দেইনি।
সফরকে বন্ধ করতে শেষ পর্যন্ত উচ্চ আদালতে রিট আবেদনও করা হয়েছিল। আর এখন নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে আমাদের দেশ থেকেই অন্যরা সফর বাতিল করে।
২৪ জানুয়ারি বাংলাদেশ সফরে আসছে শ্রীলঙ্কা জাতীয় দল। নিশ্চয় সে দেশের ক্রিকেট বোর্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফর বাতিল করে চলে যাওয়াকে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে দেখবে। এ দেশের পরিবেশ পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যালোচনা করবে।
বলা তো যায় না, যদি লঙ্কানরা না আসার সিদ্ধান্ত নেয়! হয়তো এমনটা ঘটবে না। কিন্তু বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি তাতে নিশ্চিত করে কিছু বলার উপায়ও নেই। তাছাড়া আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, ২০০৯ সালে লাহোরে এই শ্রীলঙ্কা দলের ক্রিকেটারদের বহনকারী গাড়ির ওপর জঙ্গি হামলার পর এখন পর্যন্ত পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচ হয়নি। দীর্ঘ পাঁচ বছর সেদেশের মানুষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ দেখতে পাচ্ছে। অথচ এই পাকিস্তানে ক্রিকেট কতই না জনপ্রিয়।
তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ অনূধর্্ব-১৯ দলের চলে যাওয়াকে ক্রিকেটের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবেই দেখা উচিত। ক্রিকেট যেমন আমাদেরকে এক সুতোয় বাঁধে প্রতিনিয়ত, হাজারো দুঃখ-কষ্টকে ভুলিয়ে দেয়, তাই আমাদেরও উচিত রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত তথা ব্যক্তি স্বার্থের উধের্্ব ওঠে ক্রিকেটকে সম্মান দেখান। যাতে আর কোনো বিদেশি দল নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে সফর বাতিল না করে। বিশেষভাবে মনে রাখতে হবে, আর মাত্র তিন মাস পরেই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে টি-২০ বিশ্বকাপের আসর।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।