বাংলাদেশ আমার দেশ, বাংলা আমার ভাষা...
গতাকাল দুই চারটি জামায়াত-বিএনপি প্রীতি চ্যানেল আর রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভি ছাড়া প্রায় সবগুলো বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসির খবর লাইভ কাস্ট করেছে। কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের সবচেয়ে সঠিক খবরটি প্রচার করতে সক্ষম হয়েছিল দেশ টিভি। আর এই খবরটি গোটা দেশবাসীকে প্রথম শোনাতে সক্ষম হয়েছিলেন দেশ টিভি'র বিশেষ প্রতিনিধি নজরুল কবির। নজরুল কবিরের কাছ থেকে গোটা দেশবাসী যেখানে বাংলাদেশের কলংক মোচনের মাইলফলক সূচনাকারী সেই খবরটি সবার আগে শুনতে পেরেছিল, সেই সময় অন্যান্য চ্যানেলগুলো অনেকটা আন্দাজের উপর নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছিল। আর দেশ টিভি'র সংবাদ পাঠক মিস্টার আনোয়ার সেই খবরটি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে যখন প্রচার করেছিলেন যে, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
রাত ১০টা ১ মিনিটে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে এই ফাঁসি কার্যকর করা হয়। ঠিক তখনও অন্যান্য চ্যানেলগুলো আন্দাজ নির্ভর খবর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছিল। শেষ পর্যন্ত রাত সাড়ে দশটা নাগাদ অন্য চ্যানেলগুলোওপ্রচার করতে শুরু করলো যে, কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।
তারপর কি ঘটলো?
মিডিয়া কর্মীরা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে কাদের মোল্লার মরদেহ বাহী গাড়ির অপেক্ষায় ছিলেন। কাদের মোল্লার মরদেহ বাহী অ্যাম্বুলেন্স কারাগার থেকে এক সময় কঠোর নিরাপত্তার সঙ্গে বের হল।
তারপর কি হল? মিডিয়া কর্মীরা অনেকে সেই গাড়ির পেছন পেছন ক্যামেরা হাতে ছুটলেন! তারপর কি হল? তারপর এটিএন নিউজের মুন্নী সাহা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে একটি খবর প্রচার করলেন যে, আমাদেরকে একজন শুভাকাঙ্খী ফোন করে জানিয়েছেন, এই মাত্র কাদের মোল্লার মরদেহ নিয়ে গাড়ি বহর ঢাকা'র কেরানিগঞ্জ ক্রোস করলো। মাওয়া পথেই লাশ নিয়ে ফরিদপুর যাচ্ছে তারা।
মুন্নী সাহা, আপনি অনেক বড় সাংবাদিক। অনেক খবরেই আপনার অতিমাত্রার আগ্রহ। কিন্তু কোন খবরটি প্রচার করতে হয়, কোন খবরটি এডিট করার প্রয়োজন, সেই জ্ঞানটুকু ঠিক সময় প্রয়োগ করতে না পারলে, সেই খবরে কিন্তু সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়।
কাদের মোল্লার মরদেহ ঢাকা থেকে কোন পথে ফরিদপুর নেওয়া হবে, সেটি আমাদের কাছে কোনো খবর নয়। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কাদের মোল্লার মরদেহ নির্বিঘ্নে ফরিদপুরে তার গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের কাছে পৌঁছে দিতে পারলো কিনা, সেটিই খবর। মাঝখানে আপনি কাদের মোল্লাকে কোন পথে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সে ধরনের একটি খবর প্রচার করে যে বাহাবা নিতে চাইলেন, সেটি ছিল আপনার সাংবাদিকতার এথিক্সের বাইরে একটি অতি উৎসাহী উক্তেজনা। এ ধরনের থবর প্রচার কোনো মতেই কারো কাম্য হতে পারে না। আপনি বিতর্কে আসার জন্যেই এটা করেন কিনা আমরা জানি না।
কিন্তু কাদের মোল্লার মরদেহ নিয়ে ফরিদপুরে যাবার পথে জামায়াত-শিবির চক্রের হাতে হামলার শিকার হবার বা কাদের মোল্লার মরদেহ তারা যদি ছিনিয়ে নিতে চায়, সেই অপশক্তিকে সুযোগ করে দেবার জন্যে আপনি একটি খবর প্রচার করলেন। যদিও কাদের মোল্লার মরদেহ ফরিদপুরে নেওয়ার জন্য আরো বিকল্প উপায় ছিল। কিন্তু যে উপায়টি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গ্রহন করেছে, আপনি সেটি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে লাইভ প্রচার করে সেই পথটিকে আরো নিরাপত্তাহীন করে তুললেন। এই খবরটি যারা কাদের মোল্লা মরদেহ নিয়ে কোনো চক্রান্ত করার মতলব যদি করে, তাদের পক্ষেএকটি সহায়ক খবর ছিল। যা মোটেও সাংবাদিকতার এথিক্সের মধ্যে পড়ে না।
হ্যা, কাদের মোল্লার মরদেহ ফরিদপুরে নির্বিঘ্নে পৌঁছানোর পর আপনি এই খবরটি প্রচার করতে পারতেন যে, মাওয়া পথেই তাকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু অতি উৎসাহী হয়ে আপনি যে খবরটি প্রচার করলেন, এটি থেকে ওই নাশকতাকারীদের যে কেউ সুযোগ গ্রহন করতে পারতো। আপনি অপশক্তিদের সেই সুযোগটি করে দিয়েছিলেন এই খবরটি প্রচার করে। তাই বলি কি, আপনি সংবাদ প্রচারে আরেকটু যত্নবান হোন। অতি উৎসাহী খবর কেবল বিতর্ক সৃষ্টি করতে পারে, আর তা থেকে সুযোগসন্ধানীরা ফায়দা লোটার চেষ্টা করে।
এটা আপনি যদি ভুলে গিয়ে সবার আগে খবর প্রচারে উৎসাহী হয়ে এমন ধরনের খবর দেন, যা অনেক বিপদের আশংকা তৈরি করতে পারে, তাহলে বুঝতে হবে সাংবাদিকতায় আপনি এখনো প্রাথমিক ধাপ অতিক্রম করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আর যদি জেনে বুঝে কাজটি করে থাকেন, তাহলে সেই করার পেছনে একটি কিন্তু আছে। সেই কিন্তু, কিন্তু হলুদ সাংবাদিকতা। সেই কিন্তু, কিন্তু অন্য খবরের সন্ধান দেয়। সেই বিশ্লেষণে নাইবা গেলাম।
খবর প্রচারে এবং খবর সংগ্রহে আরেকটু যত্নবান হলেই সবার মঙ্গল। অপ-সাংবাদিকতায় হয়তো আলোচনায় থাকা যায়, কিন্তু সেখানে দায়িত্বহীনতারও একটি সুস্পষ্ট আভাষ লুকিয়ে থাকে। সাংবাদিক হিসেবে যা শুনলাম, তাই-ই প্রচার করে দিলাম, এটা কোনো সুস্থ সাংবাদিকতার লক্ষণ নয়। মুন্নী সাহা, আপনার এই ঘটনাটির আমি তীব্র ভাষায় নিন্দা করছি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।