ক্লাসের সামনের সারিতে বসা জার্মান ছেলেটাকে অনেকক্ষণ ধরে খুব মনোযোগ দিয়ে খেয়াল করছি। ভীষণ রকম লম্বা, কম করেও ছয় ফিট দুই হবে। পেশীবহুল পাকানো শরীর। চোখা চোয়াল, দেখতে অসম্ভব সুপুরুষ। জার্মান ছেলেরা এমনিতেই খুব সুপুরুষ হয়, এই ছেলেটাকে তাদের চোখেও আকর্ষণীয় মনে হল।
ওঁর চিবুকে সবসময় একটা মৃদু হাসি, আশেপাশের সবকিছুই যেন আনন্দময় – এমন একটা ভাব মায়াময় মুখটাতে। কম্যুনিকেশন ক্লাসে আমাদের মাস্টার্সের স্টুডেন্টদের প্রায় সবাই অন্য দেশ থেকে আসা। খুব কালে ভদ্রে দুই একটা জার্মান ছেলে এই ক্লাসে আসে, সেটার কারণ খুব সম্ভবত ইংরেজিতে লেকচার শোনা। এই একটা লেকচারই বুঝতে পারি ভালমতো এবং পুরোপুরি। সেকারণে কম্যুনিকেশন আমার প্রিয় লেকচার।
অবশ্য আরও একটা গোপন কারণ আছে। এই ক্লাসের প্রফেসর মাঝে মাঝেই জটিল কিছু গাণিতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন। ভদ্রলোকের এরই মধ্যে শ’খানেকের উপরে পেটেন্ট, ঠিক কতগুলো পাবলিকেশন আছে, নিজেও বোধহয় জানেন না। তিনি সুযোগ পেলেই সমীকরণ নিয়ে খেলা করেন। সেই সব জটিল সমস্যার সময় আমি কয়েকটা সমাধান দিয়েছি ক্লাসে বসে, ভদ্রলোক আমাকে একটু প্রশ্রয়ের চোখে দেখেন বলেই মনে হয়।
ক্লাসের অন্য ছেলেমেয়েরাও আমাকে একটু সমীহের চোখে দেখে – প্রফেসর কোন প্রশ্ন করলেই অন্যদের দৃষ্টি আমার দিকে চলে আসে, যেন উত্তর দেবার জন্য একজন তো আছেই। ব্যাপারটা ইদানীং উপভোগ করতে আরম্ভ করেছি। সব প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারলেও মাঝে মাঝে দুই একটা আইডিয়া দিয়ে আপাতত কম্যুনিকেশন লেকচারে আমিই রাজা।
আজকের ক্লাসের এই জার্মান ছেলেটাকে বিশেষ করে লক্ষ্য করার কারণটা তার দেখতে সুপুরুষ হওয়া নয়, বরং একটু আগের প্রফেসরের দেওয়া নতুন সমীকরণের সমাধান জনিত। মডুলেশনের মধ্যে নয়েজ কমানোর জন্য কিছু ফিল্টার ব্যবহার করা হয়, তাদের অপটিমাইজেশনের জন্য প্রফেসর একটা ইকুয়েশন নিজে প্রোগ্রাম করেছেন, সেটার একটা প্যারামিটার নিয়ে ঝামেলা হয়ে গেছে।
কিছুতেই একটা লেভেলের পর আর নয়েজ কমানো যাচ্ছে না। প্রফেসর জানতে চাইছিলেন, আমাদের কোন আইডিয়া আসে কিনা। ইকুয়েশনটা প্রায় সলভ করে ফেলেছি, কিন্তু একটা প্যারামিটার কিছুতেই বাগে আনতে পারছি না। ক্লাসের অনেকেই চুপ করে বসে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। এই সময় জার্মান ছেলেটা হাসি মুখে বোর্ডে গিয়ে খসখস করে সমাধান দিয়ে আসল।
প্রফেসরের মুখ আলোময়, সবার সামনে ছেলেটার প্রশংসা করলেন। আমার ক্লাসে নতুন রাজার আবির্ভাব নিয়ে যতটা না শকড হলাম, তার চেয়ে বেশী অবাক হলাম ছেলেটার চিন্তা করার স্টাইল এত পরিষ্কার দেখে। ও একদম অন্যভাবে একটা সমাধানের প্রপোজাল দিল, আমি অনেক বেশী জটিল করে ভাবছিলাম!
ক্লাস শেষ করে আর লোভ সামলাতে পারলাম না, ছেলেটার কাছে যেচে গিয়ে পরিচয় হলাম। ওঁর নাম আলব্রেশট। শুধুমাত্র আগ্রহের বশে ইঞ্জিনিয়ারিং ক্লাস করতে এসেছে।
ও এমনিতে ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট নিয়ে পড়ছে। এত ভালো গণিতের মাথা, ওঁর ম্যানেজমেন্ট নিয়ে না পড়ে নাসায় গিয়ে রকেট সাইন্টিস্ট হবার কথা। একটু আগে জটিল একটা সমস্যার সমাধান দিল, কিন্তু ছেলেটার মধ্যে একটুকুও গর্বের ছায়াও দেখলাম না। আমরা হাসি মুখে কথা বলতে বলতে অনেক দূর হেঁটে গেলাম ট্রেন ধরার জন্য। আলব্রেশট ড্রেসডেন শহরের আরেক মাথায় থাকে, ইচ্ছে করেই উল্টো দিকের ট্রেন নিলাম।
ওঁর সাথে কথা বলার লোভে যতটা সময় পারলাম, পাশে থাকলাম। আমরা ক্লাসের ইকুয়েশনটা নিয়ে আলাপ করছিলাম, ওঁর মাথায় কেমন করে ওই আইডিয়াটা আসল বুঝতে চেষ্টা করছিলাম প্রাণপণে। আলব্রেশট শুধু ভাল ইংরেজি বলে বললে ভুল হবে, ওঁর উচ্চারণ খাঁটি আমেরিকানদের মতন, শব্দ চয়নের সময় খুব বেছে বেছে নিখুঁত করে কথা বলে। সবচেয়ে খেয়াল করার ব্যাপার, ওঁর মুখের হাসিটা সবসময় উজ্জ্বল, খুব সিরিয়াস ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করছে, এমনটা মনেই হয় না। নিজের ভেতরে কেমন যেন একটা গোপন ঈর্ষা বোধ কাজ করছিল, আলব্রেশট বিদায় নিয়ে চলে যাবার পর সেটা একদমই টের পেলাম না।
জার্মানিতে আসার পর এই প্রথম সামান্য পরিচয়ে একটা ছেলে মনের মধ্যে এতটা গভীর করে দাগ কাটল।
দুই সপ্তাহ পরের কথা, এলবের পাশে সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছি। নদীর পাশে বেশ একটা ভীড়ের মতন মনে হল। এগিয়ে গিয়ে দেখি নদীর পানি বেশ বেড়েছে, এমনিতে সরু একটা নদী, আমাদের দেশের যেকোনো সাধারণ খালের সমান হবে বেশী হলে, পানি বাড়াতে তাও একটু নাদুস নুদুস লাগছে। সাইকেল থামিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম ব্রিজের পাশে।
নিচের দিকে তাকালে পানির বহমান স্রোতে স্পষ্ট আলোড়ন, এমনটা আগে দেখি নি। আশপাশের কথায় যতটুকু বুঝলাম, অনেক বৃষ্টি হয়েছে চেক রিপাবলিক সহ পূর্ব ইউরোপের কয়েকটা দেশে, সেই পানি এখন বইছে ড্রেসডেনের উপর দিয়ে। প্রায় নাকি বন্যা বন্যা ভাব। এমন বন্যা নাকি এখানে সহজে দেখা যায় না, সবাই ধুম ধাম ছবি তুলছে। আমি মনে মনে হাসলাম, যেই বন্যায় নদীর পাড়ে দাঁড়িয়েই সবাই ক্যামেরার সামনে পোজ দিচ্ছে, সেটাকে বন্যা বলাই বাহুল্য।
১৯৮৮ সালের কথা মনে পড়ে গেল। আমাদের মোহাম্মদপুরের একতলা বাসাটা পানিতে অর্ধেকের বেশী ডুবে গেল দেখতে দেখতে। আমার প্রিয় ঘরটাতে হাঁটু সমান পানি, তাও আবার ময়লা পানি। আমরা তিন রাত পানির মধ্যে থাকলাম। নিচে থই থই পানি,এর মধ্যে কারেন্ট না থাকাতে ঘোর অন্ধকার।
১২ বছরের কিশোর আর তার অনেক স্বপ্ন আর ভয় নিয়ে সেই পানির আওয়াজ শুনতে শুনতে রাত কাটানো। মনে মনে খুব হাসলাম ৮৮-র সেই বন্যার কথা মনে করে। তার তুলনায় এলবের বন্যা- খুব তুলনা হয় বৈকি।
ব্রিজ থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি একজোড়া ছেলেমেয়ে খুব গাড় চুমু খাচ্ছে, এমন দৃশ্য এখানে প্রায়ই চোখে পড়ে। সাধারণত চোখ সরিয়ে নেই সাথে সাথে, এখনো দিনে দুপুরে এমন অন্তরঙ্গতা সয়ে উঠেতে পারিনি।
সেদিনের ঘটনা একটু ভিন্ন ছিল অবশ্য, ছেলেটার সাথে সেদিন মাত্র পরিচয় হয়েছে। আলব্রেশট আর সাথে তার গার্ল-ফ্রেন্ড হবে নিশ্চয়ই। আমি একটু বেশিক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম বোধকরি, আসলে বুঝতে চেষ্টা করছিলাম সেই সৌভাগ্যবতী মেয়েটা কে। আলব্রেশটের মতন ছেলেকে হাত করেছে, সে নিশ্চয়ই সেই রকম অসাধারণ একটা কিছু হবে। আমাকে ভীষণ লজ্জায় ফেলে দিয়ে হটাত করে ছেলেটা চুমু খাওয়া থামিয়ে উপরে আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়ল।
মেয়েটাকে আলিঙ্গনে রেখেই আমার দিকে চিৎকার করে বলল, এটা ক্রিস্টিন, আমার গার্ল-ফ্রেন্ড। একই সাথে ক্রিস্টিনের কাছে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিল। আমি ব্রিজের উপর, ওরা নিচে নদীর পাশে। ক্রিস্টিনের সাথে পরিচয় হল সেইদিন, দেখতে একটু পুরুষালি মেয়েটা, সুন্দরী মেয়ে বলা যাবে না কোনভাবেই। নিচে গিয়ে ওদের সাথে হাত মেলালাম, মেয়েটা আমাকে দেখে খুব একটা খুশি হল বলে মনে হল না একদমই।
হাত বাড়ানোর সময় খেয়াল করলাম নিজে থেকে হাত দিতে চাচ্ছে না, কেমন যেন একটা স্নবি ভাব। একটু ফরমাল কথা বলেই ও আলব্রেশটকে নিয়ে চলে গেল অনেকটা জোর করে, যেন আমার সামনে থেকে পালাতে পারলেই বাঁচে। এখানে এসে এখনো মেয়েদের সাথে কথা হয়নি খুব বেশী, ক্রিস্টিনের সাথে পরিচয় হয়ে মনে হল পরিচয় না হলেই ভাল হত!
এক সপ্তাহ পরের কথা। এখানে সব বাড়ির নিচে একটা লেয়ার বা ফ্লোর থাকে, এটাকে কেলার (সেলার) বলে। হোস্টেলের কেলারে আমাদের কাপড় নাড়ার একটা রুম, পাশে দুটো টেবিল টেনিস খেলার বোর্ড।
উপরের তলার এক চাইনিজ ছেলের সাথে খুব কম্পিটিশন যাচ্ছে ইদানীং। চাইনিজরা নাকি জন্মেই টেবিল টেনিস খেলা শুরু করে, সেই চাইনিজ ছেলেকে প্রথম দিন দুই দান হারিয়ে দিয়েছি। এরপর থেকে খুব খেলা জমে গেছে। ছেলেটা বলেছে টেবিলের কোয়ালিটি খুব খারাপ। আমার অবশ্য পুরনো ভাঙ্গা টেবিলে খেলেই অভ্যাস, অসুবিধা হবার যা ওরই হচ্ছে বলে মনে হল।
সেদিন সন্ধ্যায় খেলতে গিয়ে দেখি নিচের ফ্লোরের দরজা বন্ধ, সামনে কি একটা নোটিশ লাগানো, দেখে মনে হল কিছু একটা ঝামেলা হয়েছে। প্রতিশোধ নিতেই হবে এমন একটা বেপরোয়া ভাব চায়নিজ ছেলেটার চোখেমুখে। বলল, চল নদীর পাড়ে যাই, ওখানে একটা পাবলিক টেবিল আছে। আমিও “কোথাও খেলতে আপত্তি নেই” এমন ভাব নিয়ে পিছু নিলাম।
এলবে নদীর পাশে এসে আমাদের চোখ ছানাবড়া।
চারদিকে থই থই পানি। টেবিল টেনিসের শুধু নেটটা কোনমতে মাথা উঁচু করে আছে তখনও। সাথে সাথে কেলার বন্ধ থাকার ব্যাপারটা পরিষ্কার হল। নদীর পানি অনেক বেড়েছে। আমাদের হোস্টেল যেহেতু নদীর খুব কাছে, তাই কেলারে পানি চলে এসেছে।
গত সপ্তাহে নদীটাকে নাদুস নাদুস লাগছিল, মাত্র এই কয়েকদিনে পানি বেড়ে ফুলে ফেঁপে উঠেছে এলবে নদী। প্রিয় এলবের দিকে তাকিয়ে কেমন যেন একটু বুকটা কেঁপে কেঁপে উঠল। বন্যার চেয়ে খেলা হল না দেখে চায়নিজ ছেলেটার মুখটা খুব কালো। আমি ওকে আশ্বাস দিলাম, বন্যার পানি কমলেই প্রথম আমরা যেটা করব, সেটা হল সারাদিন ধরে শুধুই টেবিল টেনিস খেলা।
বাসায় ফিরে দেখি লোডশেডিং, জার্মানিতে কারেন্ট নেই – যা তা অবস্থা! তারচেয়েও খারাপ খবর, ইন্টারনেট বন্ধ।
একটু পর খেয়াল করলাম, ইলেকট্রিক চুলায় রান্না করা যাবে না। পাশের ঘরের জার্মান ছেলেটা বলল, কেলারে কারেন্টের মেইন সুইচ। কেলারে পানি ঢুকে গেছে বলে শর্ট সার্কিটের ভয়ে পুরো হোস্টেলের পাওয়ার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই জার্মান ছেলেটাকে আগে কখনো ঘাবড়াতে দেখিনি, ও বলল ওর জীবনে দেখা নাকি সবচেয়ে বড় বন্যা। রাতের বেলায় অন্ধকার ঘরে বসে সকালের বাসি ঠাণ্ডা ভাত খেতে খেতে মনে হল, সত্যি সত্যি আবার অনেক বছর পর বন্যা-ক্রান্ত হয়ে গেলাম!
পরের দিন ১৩ই আগস্ট, ২০০২ সাল।
রাতের বেলায় অন্ধকার ঘরে বসে কি করবো বুঝতে পারছিলাম না, এমন সময় আলব্রেশটের ফোন এল। আমাদের এমন কিছু বন্ধুত্ব এখনও হয়নি যে সে আমাকে ফোন করবে। ফোনের বিষয়বস্তু এই রকম: বন্যার পানি ড্রেসডেনের বিখ্যাত সুইঙ্গার প্রাসাদ ও তার পাশের সেম্পার অপেরা হাউসে পানি ঢুকি ঢুকি করছে। ইউনিভার্সিটির অনেক ছেলে মেয়ে ভলান্টারি হয়ে সেখানে যাচ্ছে, কিছু একটা যদি করা যায়। আমি এক কথায় রাজি হয়ে গেলাম।
রাস্তায় যেতে যেতে দেখি এলবে তখন যেন সর্বনাশীর মতন পুরো শহরটাকে দখল করে নিচ্ছে। নদীর পাশে শহরের অনেক অলি গলি অন্ধকার, লোড শেডিং করা হয়েছে আমাদের হোস্টেলের মতনই। সুইঙ্গার প্রাসাদের পাশে এই অন্ধকার রাতেই আলব্রেশটসহ আরও কয়েক শত ছেলে মেয়ে জড় হয়েছে। আলব্রেশটের গার্ল ফ্রেন্ড ক্রিস্টিনও ছিল তাদের মধ্যে – আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে অন্যদিকে তাকিয়ে চলে গেল। সর্বনাশী এলবের রূপের পাশাপাশি আপাতত ক্রিস্টিনের মুখভঙ্গিকে নগণ্য ভেবে অন্যদের সাথে কাজে নেমে গেলাম।
প্রশাসন থেকেই ব্যবস্থা করা হয়েছিল বালির বস্তা। সেই বস্তা বাহী ট্র্যাক গুলো থেকে শুরু করে নদীর চারদিকে বিশাল লম্বা সব মানব বন্ধন তৈরি হয়ে গেল দেখতে দেখতে। দ্রুত হাত বদল করে একটা একটা করে বালির বস্তা নিয়ে ফেলা হতে লাগল সুইঙ্গার প্রসাদ ও তার পাশের সেম্পার অপেরা হাউসের পাশে। যতই অন্ধকার হয়ে আসতে লাগল চারদিক, ততই বেড়ে চলল স্বেচ্ছাসেবীদের আগমন। এত হাজার লোকের মধ্যে কোন ধরণের প্ল্যান ছাড়াই কাজ চলতে লাগল দ্রুত গতিতে।
ড্রেসডেন শহরটা আমার ভাল লাগে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর জার্মানিতে প্রথম শহর হিসেবে এর জন্য আমার অন্যরকম একটা মায়া ভাব হয়। আশে পাশের অসংখ্য মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত ঢল দেখে মনে হল, এই শহরটা এদের জন্য সত্যিকারের ভালবাসা। যেকোনো মূল্যেই হোক, এরা এই শহর ও তার প্রাচুর্য রক্ষা করবে। এদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজের মধ্যে এক ধরণের পুলক অনুভব করলাম। একটা সময় মনে হল, এই শহর বুঝি আমারও, এঁকে রক্ষা করতে হবে সর্বনাশী বন্যার হাত থেকে।
রাত প্রায় চারটা পর্যন্ত কাজ করে এলবের পাশে দশ মিটার উঁচু এক বিশাল প্রাচীর তৈরি হয়ে গেল। আরেক দল স্বেচ্ছাসেবী প্রাসাদের নীচতলা থেকে সরিয়ে নিলো ঐতিহাসিক কিছু স্থাপত্য। সমস্ত শরীর ঘামে ময়লায় ভিজে একাকার হয়ে আছে। আলব্রেশট থেকে বিদায় নিচ্ছি, পাশে ক্রিস্টিন থেকে বিদায় নেওয়া ঠিক হবে কিনা ভাবছিলাম। হঠাত করে দেখি ক্রিস্টিন নিজ থেকে আমার দিকে এগিয়ে আসছে।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই ও আমাকে দুই হাতে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল, আমাদের শহরের পক্ষ থেকে আমরা তোমার কাছে কৃতজ্ঞ থাকলাম।
আমার অবাক হওয়া তখনও কাটেনি, ওকে বিড়বিড় করে বললাম, ড্রেসডেন এখন আমারও শহর, এঁকে রক্ষার দায়িত্ব আমারও।
পরের কথা:
১৭ই আগস্ট, ২০০২। সকাল সাতটায় এলবের পানির উচ্চতা ৯ দশমিক চার মিটার উঁচু ফণা তুলে সর্বকালের রেকর্ড গড়ল। আমাদের করা ১০ মিটার উঁচু দেয়াল অবশ্য শেষ মেশ টিকে গেল।
এই দিনের পর থেকে ধীরে ধীরে পানি কমে আসতে লাগল।
কেলারে দুই সপ্তাহ পানিতে ডুবে থেকে টেবিল টেনিস খেলার টেবিলটা আর কখনই খেলার উপযুক্ত হল না।
দীর্ঘ আট বছর সম্পর্ক থাকার পর আলব্রেশটের সাথে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেল ক্রিস্টিনের। আলব্রেশট এখনও অবশ্য আমার সবচেয়ে ভাল জার্মান বন্ধু রয়ে গেছে। ও বিয়ে করেছে বছর দুই হল, জাপানী একটা মেয়েকে।
ফুটফুটে একটা বাচ্চাকে নিয়ে ওরা থাকে স্টুটগার্টের পাশেই, আমাদের খুব কাছাকাছি। আর হ্যাঁ, পঁয়ত্রিশে পা দেবার অনেক আগেই ও এখন বড় একটা কোম্পানির কর্নধার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।