নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকরের ঘটনায় পাকিস্তান যেভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায়না। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে এটি একটি ঘৃণ্য প্রতিক্রিয়া। অন্ততঃ বিশ্বরাজনীতির কূটনীতিক প্রক্রিয়ার প্রচলিত সাধারণ নিয়মের কথা ধরা হলেও। তবে এরমধ্যে ঘটে গেছে আরও কিছু ঘটনা। গণজাগরণমঞ্চের কার্যকলাপ নিয়ে দেশবাসীর উৎকণ্ঠা অনেক আগে থেকেই লক্ষ্য করা গেছে।
অনলাইনের কিছু বিপথগামী ব্লগার নিজেরা সংগঠিত হয়ে দেশে এমন এক পরিস্থিতির উদ্ভব করেছে যেটা আজ আওয়ামী,বিএনপি,জামায়াত নির্বিশেষে সবার জন্যই মাথা ব্যাথার কারন হিসেবে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে বাহ্যত গনজাগরণমঞ্চ আওয়ামী সরকারের অনুকূল শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেও এটি এখন আওয়ামীলীগের জন্যই গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে। যার খেসারত হিসেবে দেশে আওয়ামী বিরোধী এক বৃহৎশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে হেফাজতে ইসলাম। যাদের অনেক কর্মীকেই ৫ই মে মধ্যরাতে নৃশংসভাবে হত্যা করে আওয়ামীলীগ এখন দেশে বিদেশে ইমেজ সংকটে ভুগছে। এমনকি সরকার উপায় না পেয়ে গণজাগরণ মঞ্চকেও গুঁড়িয়ে দিয়েছিল।
গনজাগরণমঞ্চের আবির্ভাবের পর কিছু নাস্তিক্যবাদীর উত্থান এবং ৫মের ঘটনার পর দেশের আলেম সমাজ এবং অধিকাংশ ধর্মপ্রাণ মুসলিমের ভেতরে আওয়ামী বিরুদ্ধ যে বিতৃষ্ণা হয়েছে সেই ক্ষতে খুব সহজে প্রলেপ দেয়া যাবেনা সেটা অনুমান করা যায়। গণজাগরণ মঞ্চের আবির্ভাবের ফলে যে মারাত্মক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে তা হল, দেশের আপামর জনগনের মাঝে আস্তিক ও নাস্তিকের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
মাঝে বেশ কিছুদিন গণজাগরণমঞ্চের কর্মীরা নিস্তেজ থাকলেও সম্প্রতি তারা আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এবার তারা যা করেছে সেটা আগেরবারের চেয়েও ভয়াবহ। পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিন্দা প্রস্তাবের বিরুদ্ধে তারা প্রতিবাদ করছে ভালো কথা।
এমনকি পাকিস্তানের দূতাবাস ঘেরাও করবে এই পরিকল্পনা পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু তাদের অতিউৎসাহী কিছু কর্মী পাকিস্তানের দুতাবাসের সামনে পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়েছে,শুধু পুড়িয়েই তারা ক্ষান্ত হয়নি। তারা পাকিস্তানের দুতাবাসের ভেতরেও ঢিল ছুড়েছে। মাত্রই ক'দিন আগে আমরা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মানব পতাকা বানিয়ে গিনেজ রেকর্ডবুকে নাম উঠিয়েছি। প্রশ্ন হল,গণজাগরণ কর্মীদের দেখাদেখি এখন যদি লাহোর বা পেশোয়ারের রাস্তায় পাকিস্তানীরা বাংলাদেশের পতাকায় আগুন দেয় তবে সেটা এইসব নির্বোধ গণজাগরণ কর্মীদের কাছে ভালো লাগবে কি? এসব নামকাওয়াস্তে চেতনাধারীরাই এখন আমাদের জাতীয় অহঙ্কার জাতীয় পতাকার অসম্মান করতে বসেছে।
নিউজে দেখলাম পাকিস্তানের জঙ্গিসংগঠন তেহরিক-ই-ইসলাম এরই মধ্যে পাকিস্তানে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসে হামলার হুমকি দিয়ে বসেছে। এইসব গণজাগরণ কর্মীদের নির্বুদ্ধিতায় বাংলাদেশের ডিপ্লোমেটসরাও এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। জানিনা,গণজাগরণ কর্মীদের এই দৌরাত্ন্যের শেষ কোথায়। তবে বরাবরের মতো দেরীতে হলেও সরকারের কিছুটা সুমতি হয়েছে বলা যায়। যার ফলস্বরূপ পুলিশ প্যাঁদানি দিয়ে ওইসব গণজাগরণ কর্মীদের দূতাবাসের সামনে থেকে ভাগিয়ে দিয়েছে।
নাহয় তারা আরও কি কি করতো সেটা শুধু তারাই জানে।
#পুনশ্চঃ দেশের ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর উপর যেভাবে পুলিশি প্রহসন চালানো হচ্ছে তাতে এসব দলগুলো যদি ভবিষ্যতে চরমপন্থার পথ বেছে নেয়,তাহলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ তালেবান জর্জরিত রাষ্ট্রের তালিকায় নাম লেখাবে এই অনুমান করাটা অমুলক কিছু নয়। যেখানে বিশ্বের তাবৎ ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো তালেবানের কাছে এখনও পর্যুদস্ত,সেখানে আমাদের মতো বর্মহীন ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের আগে থেকেই সতর্ক হওয়া উচিৎ নয় কি?! প্রশ্ন রইলো...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।