আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

২৪ দিনে ক্ষতি ১১ কোটি টাকা কর্মহীন ৬ হাজার শ&

১৮ দলের ডাকা টানা পাঁচ দফা অবরোধ ও হরতাল কর্মসূচির কারণে সাতক্ষীরা ভোমরা স্থলবন্দরে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। অবরোধের কারণে ভারত থেকে আমদানিকৃত পণ্যবাহী কোনো ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করতে পারছে না। আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকায় প্রতিদিন ৫০ লক্ষাধিক টাকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। কাজ না থাকায় বন্দরে কর্মরত ৬ হাজার শ্রমিক পড়েছে বিপাকে। বিরোধী দলের চলমান আন্দোলনের কারণে গত ২৪ দিনে সরকার ১১ কোটি ৫০ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে বলে দাবি করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘদিন এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ব্যবসায়ীরা এ বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদিকে গতকাল সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আইনশৃঙ্খলা সভায় ভোমরা বন্ধর চালুর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এ জন্য সর্বত্র বন্দরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করবে।

পাবনা জেলা শহরের আমদানিকারক এস্কেন্দার আলী জানান, ২৬ নভেম্বর থেকে ভোমরা বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে শুক্রবারসহ চার দিন আমদানি-রপ্তানি হয়েছে। গত শুক্রবার তিনি ভারত থেকে এক ট্রাক গম আমদানি করেছেন। অবরোধের কারণে তা গন্তব্যস্থলে নিয়ে যেতে পারেননি। এমনকি ভারতীয় ট্রাক থেকে মাল খালাস না করতে পারায় প্রতিদিন ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে এক হাজার রুপি জরিমানা হিসেবে গুনতে হচ্ছে। প্রতিদিন ১০০ টাকা দিতে হচ্ছে পার্কিং গোডাউন মালিককে। এ ছাড়া খাওয়া ও থাকাসহ প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার টাকা লোকসান হচ্ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে তাদের এ বন্দরে ব্যবসা ছেড়ে দিতে হবে। চুয়াডাঙ্গার আমদানিকারক আলম হোসেন জানান, শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি এক ট্রাক চাল ভারত থেকে আমদানি করেছেন। ওইদিন রাত ৩টার দিকে তিনি ট্রাকে করে মাল নিয়ে চুয়াডাঙ্গায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে সাতক্ষীরা-ভোমরা সড়কের বাদামতলায় তার ট্রাকটির গ্লাস ভাঙচুর করে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা। এ সময় তার কাছে থাকা ১৩ হাজার টাকা কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে তিনি হাত-পায়ে ধরে ট্রাকটি বন্দরে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। বর্তমানে তাকে প্রতিদিন খরচ পাঁচশ টাকা ছাড়াও ট্রাকের ভাড়া দেড় হাজার টাকা অতিরিক্ত গুনতে হচ্ছে। কবে এ মাল নিয়ে যেতে পারবেন তা নিয়ে তিনি সংশয়ে রয়েছেন। একই কথা বলেন যশোরের আমদানিকারক জি এম আবদুল গফফর ও মাগুরার মোসলেম আলী। চার দিন আগে এক গাড়ি করে চাল নিয়ে এসেছেন ভারত থেকে। বর্তমানে প্রতিদিন এক হাজার ভারতীয় রুপি গচ্চাসহ সব মিলিয়ে তিন হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে।

একইভাবে অবরোধের কারণে পরিবহন না পাওয়ায় তিন দিন আগে ভারত থেকে আমদানি করা দুই ট্রাক পিয়াজ পচে নষ্ট হচ্ছে বলে জানান ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট আমীর হামজা। ভোমরা বন্দরের ১১৫৯ নম্বর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন জানান, বন্দরের চারটি শ্রমিক ইউনিয়নে কাগজে-কলমে মোট ছয় হাজার শ্রমিক রয়েছে। এর মধ্যে চার হাজার শ্রমিক একদিন পরপর কাজ পেয়ে থাকে। ২৬ নভেম্বর থেকে অবরোধের কারণে ওইসব শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়েছে। সাতক্ষীরা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী কমিটির সদস্য নাছিম ফারুক খান মিঠু জানান, ১৯৯৬ সালে ভোমরা বন্দর প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন সময় রাজনৈতিক দলের ক্ষমতার পালা বদল হলেও হরতাল কিংবা অবরোধ কর্মসূচির জন্য কখনো বন্দরে প্রভাব পড়েনি। হরতাল বা অবরোধের আওতামুক্ত ছিল ভোমরা বন্দর। এ বন্দরের সঙ্গে জড়িত রয়েছে ১০ হাজারের বেশি ব্যবসায়ী, শ্রমিক ও কর্মচারীদের রুটি-রুজি। ভোমরা বন্দরকে অবরোধ কর্মসূচির আওতা থেকে মুক্ত রেখে আমদানি-রপ্তানি চালু করার জন্য সব রাজনৈতিক দল ও সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

ভোমরা শুল্ক স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসায়ীরা এ বন্দর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেবে। আর এখানকার কর্মরত শ্রমিকরা সীমান্তে চোরাচালানসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়তে পারে। এ কারণে বন্দরকে অবরোধমুক্ত রাখা দরকার।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.