আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নির্বাচন নিয়ে দুই দলের মনিটরিং সেল

চতুর্থ ধাপের উপজেলা নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে আওয়ামী লীগ বিএনপি মনিটরিংয়ে থাকবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর ধানমন্ডির কার্যালয় থেকে মনিটর করছে দলের শীর্ষ নেতারা। দিনভর সিনিয়র নেতারা এ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারা সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলা নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনোরকমের বিরোধিতা কিংবা বিদ্রোহ সহ্য করা হবে না। কেন্দ্র থেকে এ ধরনের অন্তর্দ্বন্দ্ব কিছুতেই বরদাশত করা হবে না।

দল সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চারজন যুগ্ম মহাসচিবের নেতৃত্বে শক্তিশালি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে।
গতকাল সকাল সাড়ে ৯টায় ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে আসেন প্রেসিডিয়াম সদস্য, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এরপর একে একে আসেন দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপসহ সিনিয়র নেতারা। নির্বাচনে যাতে কোনো ধরনের নাশকতা, সহিংসতা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন ওবায়দুল কাদের।

ধানমন্ডির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর কার্যালয়ে গভীর রাত পর্যন্ত অবস্থান করেন সিনিয়র নেতারা। তারা সারা দেশে উপজেলা নির্বাচনে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটর করেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, উপজেলা নির্বাচন মনিটরিংয়ের মূল দায়িত্বে রয়েছেন ওবায়দুল কাদের। তার সঙ্গে রয়েছেন সাত বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা। নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।

তিনিও দলীয় সভানেত্রীর এ কার্যালয়ে বসে দায়িত্ব পালন করছেন।
নয়াপল্টনে বিএনপির শক্তিশালী মনিটরিং সেল : আজ চতুর্থ দফা উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চারজন যুগ্ম-মহাসচিবের নেতৃত্বে শক্তিশালী মনিটরিং সেল গঠন করা হয়েছে। ৯১ উপজেলায় নির্বাচনে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করবে এ সেল। গতকাল থেকে ক্লোজ মনিটরিং শুরু করেছে এ সেল। আজকের নির্বাচনের ভোট গ্রহণকালে আরও বেশি সহিংসতা ও কেন্দ্র দখলের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে এ সেলের পক্ষ থেকে।

প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ক্ষমতাসীন দল সমর্থিত প্রার্থীরা ৯১ উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায়ই ভোট ডাকাতির সব আয়োজন সম্পন্ন করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদের কাছে বার বার অভিযোগ করেও কেনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি বলেও উল্লেখ করা হয়। শুক্রবার রাত থেকে এ পর্যন্ত ৪০টিরও বেশি উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সরকার সমর্থক প্রার্থীদের সশস্ত্র লোকজন মহড়া দিয়ে নানারকমের ভয়ভীতি প্রদর্শন অব্যাহত রেখেছেন এবং বিএনপি নেতা-কর্মীদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। একই সঙ্গে অব্যাহত রয়েছে ধরপাকড়। গতকাল বিকালে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজকের নির্বাচন উপলক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ এসব অভিযোগ করেন এবং বিভিন্ন এলাকায় ক্ষমতাসীন দল সমর্থক প্রার্থীদের হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের বিষয়টি তুলে ধরেন।

উপজেলা নির্বাচন উপলক্ষে বরাবরের মতো এবারও কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করেছে বিএনপি। রিজভী আহমেদ ছাড়াও বিএনপির এ মনিটরিং টিমে রয়েছেন দলের যুগ্ম-মহাসচিব বরকতউল্লা বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, সালাহউদ্দিন আহমেদসহ আরও কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা।
কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে জানানো হয়- গতকালও যশোর সদর উপজেলায় ১৪ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সদর উপজেলার লেবুতলা, কাশেমপুর, পেয়ারা ও চাটড়াসহ নয়টি ইউনিয়নে প্রকাশ্যে সশস্ত্র মহড়ার মাধ্যমে বিএনপি নেতাদের ভোটের দিন এলাকা ছেড়ে যাওয়ার জন্য প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে। এসব অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উপজেলা নির্বাচন ঘিরে সরকারি দলের তাণ্ডব দেখে আমি এলাকার বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, আইনজীবী ও সুশীল সমাজসহ সর্বস্তরের মানুষকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছি।

 নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং অফিসার তথা এডিসি জেনারেল মাইনুল ইসলামের কাছে ১২ বার অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ পুলিশ সুপার জয়দেব ভদ্র এ সন্ত্রাস মোকাবিলায় একটা উদ্যোগ নিতে চাওয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। আমরা ডিসি/এসপিকে পরিষ্কারভাবে বলেছি যে সরকারের পক্ষ থেকে যদি আপনাদের এ ধরনের নির্দেশ দেওয়া হয় যে এ উপজেলার নির্বাচনে সরকার সমর্থক প্রার্থীকে সরকার দিয়ে দিয়েছে, তবে সে কথাটি আপনারা অফিশিয়ালি ঘোষণা দিন, আমাদের সমর্থক প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন।
রিজভী আহমেদ বলেন, তৃতীয় দফার চেয়ে আজকের উপজেলা নির্বাচনে আরও অনেক বেশি সহিংসতা হওয়ার আলামত দেখা যাচ্ছে।

স্থানীয় প্রশাসন ও নির্বাচনী কর্মকর্তারা একযোগে সরকারি চক্রান্তের সঙ্গে সহযোগিতা করছেন। আর গ্রিন সিগন্যাল পেয়ে সরকারি দল সমর্থক প্রার্থীর অস্ত্রধারী কর্মীরা নির্বাচনী এলাকায় জড়ো হচ্ছেন। কেন্দ্র দখল ও ভোট ডাকাতির সব প্রস্তুতি তারা সম্পন্ন করেছেন। বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপি নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়ের পাশাপাশি ভোটারদেরও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকায় শঙ্কার পরিবেশ তৈরিতে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিবিড় তত্ত্বাবধানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যথাযথ দায়িত্ব পালন করছেন।

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, নির্বাচনে সহিংসতা বন্ধে ব্যর্থ হলেও এ কমিশন সহিংসতা উৎপাদনে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংবিধান নির্বাচনকে যথেষ্ট ক্ষমতা দিলেও তারা তা প্রয়োগ করছে না। নির্বাচনে ফলাফল নিজেদের পক্ষে নিতে অনুগত লোকদের দিয়ে প্রশাসনের বাগান সাজানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, আবদুল লতিফ জনি, আসাদুল করিম শাহীন, শিরিন সুলতানা, কাজী আসাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গতরাতে রিজভী আহমেদ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, নির্বাচনের আগের দিন সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর পুলিশ সুপারদের রদবদল করার পেছনে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে, যা জনগণের বুঝতে বাকি নেই।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.